ad720-90

ডেঙ্গু মোকাবিলায় এসেছে স্মার্টফোন অ্যাপ


লাস্টনিউজবিডি, ১৯ আগস্ট : বাংলাদেশে সরকারের দেয়া হিসাব অনুযায়ী চলতি মাসের প্রথম ১৭দিনে যত ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সেটা গত জুলাই মাসে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

সরকারের তরফ থেকে এই ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হলেও এর প্রকোপ কমার কোন লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছেনা।

এমন অবস্থায় ডেঙ্গু মোকাবেলায় সরকারকে সাথে নিয়ে ‘স্টপ ডেঙ্গু’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করার কথা জানিয়েছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ বা ই-ক্যাব।

আর তাদের সহযোগিতায় কাজ করছে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতর, অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং বাংলাদেশ স্কাউটস।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বিবিসি বাংলাকে জানান যে, এই অ্যাপের মাধ্যমে মূলত ডেঙ্গু মোকাবিলায় দেশের প্রতিটি নাগরিককে যুক্ত করার চেষ্টা করা হবে।

নাগরিক সচেতনতা বাড়াতে এবং সবার কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রেও অ্যাপটি কাজ করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মি. তমাল জানান, “সরকারের একার পক্ষে ডেঙ্গুর মতো এতো বড় একটি বিষয় সামাল দেয়া বেশ কঠিন। আমরা চেয়েছি এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিককে জন সচেতনতামূলক প্রক্রিয়ার সাথে সংযুক্ত করতে। যেন তারা নিজেরা সচেতন হন এবং ডেঙ্গু মোকাবিলা করতে সক্ষম হন।”

যেকোন স্মার্টফোন ইউজার এই অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারবেন।
অ্যাপটি কিভাবে কাজ করে?

বাংলাদেশের প্রায় তিন কোটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী এই অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারবেন।

এই বিরাট সংখ্যক স্মার্টফোন ব্যবহারকারী অ্যাপটির মাধ্যমে নিজেদের জায়গা থেকেই ডেঙ্গু মোকাবিলায় অংশ নিতে পারবেন মিঃ তমাল মনে করেন।

স্টপ ডেঙ্গু নামের ৩.৪৭ মেগাবাইটের এই অ্যাপটি প্লে স্টোর থেকে সহজেই ডাউনলোড করা যায়।

ইন্সটলেশনের সময় অ্যাপটিকে আপনার ফোনের ক্যামেরা এবং লোকেশন ব্যবহারের অ্যাক্সেস দিতে হবে।

ডেঙ্গুর ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে এই অ্যাপে বেশ কয়েকটি ফিচার রয়েছে।

তারমধ্যে একটির কাজ হল কেউ যদি কোন জায়গায় এডিস মশার উৎপত্তিস্থল বা কোথাও পানি জমে থাকতে দেখেন, তাহলে তিনি সেটার ছবি তুলে সাথে সাথে এই অ্যাপে আপলোড করবেন।

অ্যাপটি ওপেন হলেই, একটি ‘ছবি তুলুন’ বাটন এবং ‘মন্তব্য করুণ’ উইন্ডো আসবে, যেখানে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকাও দেয়া থাকবে।

এবার আপনি আপনার চারপাশে এডিস মশার সন্দেহজনক আবাসস্থলেরসন্ধান পেলে বিশেষ করে কোন পানি জমে আছে এমন স্থান দেখতে পেলে এই অ্যাপের মাধ্যমে ছবি তুলে জমা দিতে পারবেন।

কোন যায়গা থেকে এই ছবি পাঠানো হচ্ছে সেটা অ্যাপে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ম্যাপিং হয়ে যাবে। এজন্য মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ থাকা জরুরি।

ছবিটি সফলভাবে জমা হলে বা সাবমিট হলে সরকারের কাছে সরাসরি সেই লোকেশনের তথ্য চলে যাবে।

অ্যাপটি ওপেন হলেই, একটি ‘ছবি তুলুন’ বাটন এবং ‘মন্তব্য করুণ’ বাক্সসহ একটি উইন্ডো আসবে।
কর্তৃপক্ষ সেই ছবি দেখে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেবেন এবং ওই স্থানটি পরিষ্কারের ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান মিস্টার তমাল।

এছাড়া যারা সেখানে কাজ করতে যাচ্ছে তারা ঠিকমতো কাজ করছে কিনা এই অ্যাপের মাধ্যমে সেটারও আপডেট পাওয়া যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

যদি কোন কারণে লোকেশনের তথ্য পাওয়া না যায় তাহলে গ্রাহকের কাছে একটি নোটিফিকেশন আসবে।

সেক্ষেত্রে ‘মন্তব্য করুন’ বাক্সে ছবির লোকেশন লিখে দিতে হবে।

এছাড়া এই ম্যাপিং এর মাধ্যমে জানা যাবে যে কোন কোন এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপটা বেশি।

সরকারের নয়টি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে
যুক্ত করা হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবীদের
ডেঙ্গু মোকাবিলায় মশা নিধন থেকে শুরু করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। এজন্য বাড়তি জনবলকে নিয়োজিত করা হয়েছে।

এখন তাদের কাছে যদি এই ম্যাপিং থাকলে জরুরি পয়েন্টগুলোতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া সহজ হবে বলে মনে করেন মিঃ তমাল।

ডেঙ্গু মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন মহলের পাশাপাশি বাংলাদেশে যে ১৮ লাখ স্কাউট সদস্য রয়েছেন তাদেরকেও এই স্বেচ্ছাসেবী কাজের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশে যে প্রায় ৫০ হাজার ডেলিভারি ম্যান ডোর টু ডোর সার্ভিস দিয়ে আসছেন, তাদেরকেও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করছে ই কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।

যেন তারাও নাগরিকদের সচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে পারে এবং এই অ্যাপসের ব্যাপারে মানুষকে জানাতে পারে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়সহ ডাক্তারি পরামর্শ জানা যাবে এই অ্যাপ থেকে।
শতভাগ সঠিক তথ্যের নিশ্চয়তা
ডেঙ্গু নিয়ে ভার্চুয়াল মিডিয়ার অনেক ধরণের অপপ্রচার ঠেকাতে কাজে আসবে এই ‘স্টপ ডেঙ্গু’ অ্যাপ।

সঠিক তথ্য কোথা থেকে জানা যাবে সেটা নিয়ে যারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে এই অ্যাপ সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হতে পারে বলে জানান মিঃ কমাল।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “যেহেতু সরকারের নয়টি প্রতিষ্ঠান মিলে এই প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে। এ কারণে এখানকার প্রতিটি কন্টেন্ট নির্ভুল এবং ভ্যারিফায়েড। এই অ্যাপের সত্যতা বা বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকার অবকাশ নেই। “

“এ কারণে এই অ্যাপ ব্যবহারকারীদের বিভ্রান্ত হওয়ারও কোন সুযোগ নেই। এই অ্যাপে ডেঙ্গু সম্পর্কে শতভাগ সঠিক তথ্যটাই পাওয়া যাবে।”

ডেঙ্গু না হওয়ার জন্য কী কী করণীয়, ডেঙ্গু হয়ে গেলে কী করতে হবে সে সব বিষয়েও এই অ্যাপসে আপ টু ডেট তথ্য জানা যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
লাস্টনিউজবিডি/ওবায়দুর

Print Friendly, PDF & Email





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar