ad720-90

নতুন ভ্যাকসিন ৭০ শতাংশ কার্যকরী হলেও চলবে


অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। ১০ হাজার মানুষ অন্তর্ভুক্ত হবে এ ধাপে। উদ্দেশ্য, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খতিয়ে দেখা।

প্রথম ধাপে এক হাজার মানুষকে পরীক্ষার আওতায় আনা হয়। প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষায় শিশু এবং ৫৫ বছরের বেশি বয়স্কদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। দ্বিতীয় ধাপের এই পরীক্ষায় পঞ্চাশোর্ধ্ব এবং ৫ থেকে ১২ বছর শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

করোনার বিস্তার প্রতিরোধ করতে ভ্যাকসিনের বিকল্প নেই। আর সেই ভ্যাকসিন সব বয়সীদের ক্ষেত্রে সমান কার্যকরী হতে হবে। বয়স্ক মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা স্বাভাবিকভাবে কমে যায়। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের এই পর্যায়ের পরীক্ষাগুলোতে সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি এমন মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অথবা হাসপাতালে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের।

অংশগ্রহণকারীদের দুই দলে ভাগ করা হবে। ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের মধ্যে একদল করোনার পরীক্ষামূলকভাবে পাবে, আর অন্য দল পাবে মেনিনজাইটিসের। চিকিৎসক বা রোগী কেউই জানবে না কে কোন ভ্যাকসিন পাচ্ছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের এই পদ্ধতিকে বলা হয় ডাবল ব্লাইন্ডেড। যাঁরা করোনার পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন পাবেন, তাঁরা যদি সংক্রমিত না হন, তাহলে বোঝা যাবে ভ্যাকসিন কার্যকর।

গবেষক দলের প্রধান অ্যান্ড্রু পোলার্ড বলেছেন, গবেষণা আশানুরূপভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত প্রথম ধাপের পরীক্ষায় মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না পেলে তবেই পরবর্তী ধাপে যাওয়া হয়। জুনের মধ্যে এই পরীক্ষা শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে এ–সংক্রান্ত ১২টি ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষা করা হয়েছে।

ভ্যাকসিন কার্যকর কি না, তা জানতে তৃতীয় পর্যায়ের ফলাফল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অতীতের সাফল্য বলে মানবদেহে পরীক্ষা করা ১০০টি ভ্যাকসিনের মধ্যে মাত্র ৬ থেকে ১০টা কার্যকরী হয়। ডেঙ্গু ভাইরাস ১৯৪৩ সালে শনাক্ত হয়েছে। ভ্যাকসিন পাওয়া গেছে গত বছর। ৩০ বছর আগে জানা গেছে এইডসের কারণ এইচআইভি ভাইরাস। এখনো কোনো ভ্যাকসিন নেই। সবচেয়ে দ্রুত ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে মাম্পসের চার বছরে।

ভ্যাকসিন করোনাভাইরাসকে দীর্ঘ মেয়াদে প্রতিরোধ করতে পারবে কি না, সেটা এখনো নিশ্চিত নয়। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার কথা, যা কি না পুনরায় করোনার আক্রমণ প্রতিহত করবে। অক্সফোর্ডের একদল বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, সময়ের সঙ্গে এই অ্যান্টিবডির কার্যক্ষমতা কমতে শুরু করেছে। একই রকম ফলাফল পেয়েছেন আমেরিকার আরেক দল বিজ্ঞানী। তবে ভ্যাকসিনের মাধ্যমে পাওয়া অ্যান্টিবডি শক্তিশালী হতে পারে।

পাঠক জানিয়ে রাখি, সাধারণ ফ্লুর ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা এক বছরের মতো এবং তা শতভাগ কার্যকর নয়। করোনার ভ্যাকসিন ৭০ শতাংশ কার্যকারী হলেই এই রোগের ব্যাপক বিস্তার রোধ করা যাবে। ৬০ শতাংশ কার্যকর হলেও চলবে; তবে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন অঞ্চলে সংক্রমণ দেখা যাবে। এর চেয়ে কম কার্যকর কোনো ভ্যাকসিন সংক্রমণ রোধ করতে পারবে না। ভ্যাকসিন শতভাগ কার্যকরী না হলেও বয়স্কদের জীবননাশী নিউমোনিয়ার হাত থেকে বাঁচাবে।

অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিন ব্যাপক ভিত্তিতে তৈরি করবে একটি ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি। তারা বলছে, ভ্যাকসিনটি নিরাপদ ও কার্যকরী হলে বিশ্বের সবার জন্য সবার জন্য নিশ্চিত করা হবে নামমাত্র মূল্যে। অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিন কার্যকরী হলে আমেরিকা বড় অঙ্কের অনুদান দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হলো জটিল এক বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া। নিরাপদ কার্যকরী ওষুধ তৈরির একমাত্র উপায়। ফল না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতেই হবে। সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মানবেন।

সুব্রত বোস: প্রবাসী বাংলাদেশি ও বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানির ক্লিনিক্যাল ট্র্যায়ালস অ্যানালিটিকসের গ্লোবাল প্রধান।

[email protected]

লেখকের আরও লেখা

করোনাভাইরাস সংক্রমণে দায়ী কোন জিন

করোনার ভ্যাকসিন যেভাবে তৈরি হচ্ছে

করোনা ভ্যাকসিন: গবেষণার পাশাপাশি উৎপাদন নিয়েও ভাবাটা জরুরি

করোনার ওষুধ তৈরিতে কোমর বেঁধে নেমেছে কোম্পানিগুলো





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar