ad720-90

দীর্ঘসময় ধরে অনলাইন ক্লাসের চাপে শিশুরা


ফাইল ছবি

বঙ্গনিউজঃ প্রযুক্তি আমাদের জন্য আশীর্বাদ। এই করোনাকালেও প্রযুক্তির কারণেই অফিস, আদালত, স্কুল-কলেজ সচল রাখা সম্ভব হয়েছে। প্রযুক্তির কল্যাণেই বেশির ভাগ স্কুলে শুরু হয়েছে অনলাইন ক্লাস। কিছু কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও অনলাইন ক্লাস চলছে। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া যেটা একেবারেই থেমে গিয়েছিল তা আবার চালু হয়েছে। পড়াশোনার মধ্যে থাকায় শিক্ষার্থীদের ঘরে বন্দি থাকার বিরক্তিটা কমেছে। তবে একই সঙ্গে স্কুলের শিক্ষার্থীদের একঘেয়ে, একাকী, দীর্ঘসময় ধরে অনলাইন ক্লাসের বাধ্যবাধকতায় পড়তে হচ্ছে। এতের তাদের ওপর মানসিক চাপ বাড়ছে।

দেখা যাচ্ছে, সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে টানা বেলা দেড়টা, ২টা পর্যন্ত চলছে ক্লাস। এর মাঝে ১০ মিনিটের বিরতি পায় তারা। এরপর পুরো সময়টাই মোবাইলের স্ক্রিনে, নয়তো কম্পিউটারের সামনে। এখানেই শেষ নয়। ক্লাস শেষে স্কুল থেকে দেওয়া হোম ওয়ার্কও করতে হচ্ছে। অনলাইনে পরীক্ষাও নেওয়া হচ্ছে। ফলে একটা শিশু সপ্তাহের টানা পাঁচ দিন সাত থেকে আট ঘণ্টা কম্পিউটার বা ফোনের সামনে একা সময় কাটাচ্ছে। স্কুলে থাকলে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প, খেলাধুলার মধ্যে সময়ে কাটে। কিন্তু এখানে একা, নিঃসঙ্গ, ফলে অনলাইনে পড়ার চাপে দিশেহারা অবস্থা শিশুদের। এ পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাস চার দিন করার কথা বলছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, রবি সোম ক্লাস করার পর মঙ্গলবার ছুটি রেখে বুধ ও বৃহস্পতিবার এই চার দিন ক্লাস করানো হোক। সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবারে সব হোম ওয়ার্ক দেওয়া হোক। তাহলে শিশুরা কিছুটা স্বস্তি পাবে।

এদিকে অনলাইন ক্লাসের প্রভাবে আবার অনেক শিশু গ্যাজেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। তারপরেও সময়ের বাস্তবতায় তা মেনে নিতে হচ্ছে। সম্প্রতি শিশুদের জন্য কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফ এ বিষয়ে একটি সতর্কতা জারি করেছে। ইউনিসেফ বলেছে, বাচ্চারা যখনই গ্যাজেট ব্যবহার করে, তখন মা-বাবার একজনের উচিত তাদের সঙ্গে থাকা। দেখা গেছে, অনলাইন ক্লাসে শিক্ষকরা একটানা ক্লাস করানোর পরে হোম ওয়ার্ক দেন। সেসব হোম ওয়ার্ক মা-বাবাদের প্রিন্ট করিয়ে এনে শিশুদের দিয়ে করিয়ে তা আবার স্ক্যান করে শিক্ষকের মেইলে পাঠাতে হয়। লকডাউনের সময় অভিভাবকদের এসব করা সম্ভব হলেও এখন অফিস-আদালত খুলে যাওয়ায় তারা অফিসে চলে যান। ফলে পুরো চাপটাই পড়ছে শিশুদের ওপরে।

শুধু তাই নয়, অনলাইন ক্লাসে একটি শিশু পড়া বুঝলো কি বুঝলো না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। ফলে শিক্ষক যা বোঝালেন সেটা শিক্ষার্থী কতটুকু বুঝলো সে বিষয়টিও বোঝার কোনো উপায় নেই। তাই বেশি ক্লাসের চাপ না দিয়ে ভালোভাবে বুঝিয়ে পড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, বেশি পড়ার চাপ, হোমওয়ার্ক না দিয়ে শিশুদের অল্প পড়ানো হোক কিন্তু সেই পড়া যেন আনন্দময় হয়—সেটাই বেশি জরুরি। শুধু শুধু নামমাত্র কোর্স কমপ্লিট করে কোনো লাভ নেই, যদি আমার শিশুটি পড়া না-ই বোঝে।

ঢাকায় ধানমন্ডির নামী এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ে তৌসিফ আর গোধূলী। তাদের মা ইভানা নাসরীন জানান, আমার এক ছেলে ক্লাস সিক্স আর মেয়ে ক্লাস ফোরে পড়ে। দুজনের অনলাইনে ক্লাস চলে। তারা সকাল আটটায় উঠে ক্লাস শুরু করে। স্কুল শেষে খাওয়-দাওয়া শেষে হোম ওয়ার্ক করে। সেসব হোম ওয়ার্ক আবার রাত আটটার মধ্যে শিক্ষকের মেইলে পাঠাতে হয়। না পাঠানো গেলে তারা সেই হোমওয়ার্ক গ্রহণ করেন না। পরীক্ষাও হচ্ছে। এখন অফিস খুলেছে। এরমধ্যে পরীক্ষার প্রশ্ন দেয়। আমার ক্লাস ফোরে পড়ুয়া মেয়ে স্ক্রিন শট দিয়ে সেভ করতে পারে না। আমরা অফিসে থাকায় তাকে কোনো সহযোগিতাও করতে পারি না। দেখা যাচ্ছে আমার মেয়েটার সেই পরীক্ষা পরে আর নেওয়া হচ্ছে না।

গুলশানের অপর এক নামি স্কুলের অভিভাবক তামান্না তাসনীম বললেন, বাচ্চাদের একটানা ক্লাস তাদের ওপর মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে। ক্লাস ভেদে পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা একলা ক্লাস করতে হয়। এরপর হোমওয়ার্ক। বন্ধুদের সঙ্গেও দেখা নেই। শুধু বাসায় ভিডিও গেম খেলে বা মুভি দেখে দেখে ওরাও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের এক শিক্ষিকা জানান, শিশুদের ওপর পড়াশোনার চাপ বেড়েছে ঠিক। কিন্তু তাদের কোর্সও শেষ করার একটা চাপ থাকে। সব অভিভাবক এক চিন্তার হন না। অনেক অভিভাবক মনে করেন, শিক্ষার্থীদের ওপর পড়াশোনার চাপ থাকা ভালো। আমাদেরও স্কুল পরিচালনা করতে গিয়ে সবার ইচ্ছার সমন্বয় ঘটাতে হচ্ছে। কারণ এখন সময়টাই বৈরী।

এদিকে দেখা যাচ্ছে, করোনাকালে বাচ্চাদের মধ্যে ডিজিটাল গ্যাজেটের ব্যবহার বেড়েছে। এতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুদের চোখ ও মস্তিষ্ক। এটি শিশুদের কথা বলার প্রক্রিয়াগুলোর বিকাশকে বাধা দিতে পারে। এক সমীক্ষায় জানা গেছে, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, আইপ্যাড এবং ল্যাপটপের কারণে শিশুদের মানসিক বিকাশ প্রভাবিত হচ্ছে। তাই গ্যাজেটের স্ক্রিনটি চোখের খুব সামনে ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। এর ফলে বাচ্চার চোখের দৃষ্টি দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

এ প্রসঙ্গে মনোবিজ্ঞানী মোহিত কামাল বলেন, শিশুরা যত এই ডিজিটাল দুনিয়ায় বেশি সময় ব্যয় করবে, তাদের সৃজনশীলতা ততই হ্রাস পাবে। এটি তাদের মানসিক বিকাশের পক্ষে ভালো নয়। এমন পরিস্থিতিতে যদি একটি শিশু প্রতিদিন একটি অনলাইন ক্লাস করে, তার সঙ্গে কিছুটা সময় গ্যাজেটবিহীন সৃজনশীল খেলা খেলে বা ঘরের কাজ করে তাহলে তার মস্তিষ্কের অনুশীলনও হয়। পাশাপাশি বাচ্চাদের ডিজিটাল ডিভাইসের খারাপ প্রভাবগুলো বুঝিয়ে বলতে হবে। তাদের বকা বা মারা থেকে বিরত থাকতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে ডিজিট্যাল স্ক্রিনের সামনে বসে থাকলে শিশুকে পর্যাপ্ত ঘুমাতে দিতে হবে। তবে অনলাইনে শিশু-কিশোরদের অবাধ পদচারণায় তারা সাইবার ক্রাইমের শিকার হয় কি না বা অন্য কোনো দুর্ঘটনা ঘটে কি না এমন ভয়ে থাকেন অনেক অভিভাবক। এছাড়া ইন্টারনেট আসক্তিও একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য বাচ্চাদের কম্পিউটার বা ডিভাইসটি ঘরের এমন জায়গায় রাখতে হবে, যাতে সহজেই দেখা যায় আপনার সন্তান কম্পিউটারে কী করছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০:৪১:২৬   ২ বার পঠিত   #  #  #





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar