ad720-90

সাময়িক মন খারাপ নাকি বিষণ্নতা- যেভাবে বুঝবেন


জীবনে চলার পথে প্রতিদিন নানান পরিস্থিতির
মুখোমুখি হয় মানুষ। কিছু আমাদের আনন্দ দেয়, কিছু ঘটনায় আমাদের মন খারাপ হয়। ভালো মন্দ
সকল ঘটনার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে চলার পথে সামনে এগিয়ে যাওয়াই জীবনের মুল লক্ষ্য হওয়া উচিত।

জীবনে না পাওয়ার কষ্টগুলো যে পুষিয়ে যাবে
তা সবসময় নাও হতে পারে। কিছু আকাঙ্ক্ষা অতৃপ্তই রয়ে যেতে পারে। এই অতৃপ্তিগুলোই তৃপ্তির
স্বাদ বাড়ায়। তবে সেই মন খারাপ কিংবা অতৃপ্তিগুলো যদি বিষণ্নতায় পরিণত হয় তবে বাঁধবে
বিপত্তি।

মানসিক স্বাস্থ্য-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের
প্রতিবেদন অবলম্বনে জানান হল সাধারণ মন খারাপ ও বিষণ্নতার মধ্যকার তফাৎ সম্পর্কে। 

তফাৎ কোথায়?

মন খারাপকে অনেকেই বিষণ্নতার সঙ্গে মিলিয়ে
ফেলেন। এটা ঠিক যে মন খারাপ বিষণ্নতার অংশ যা মানসিক অস্বস্তি, আক্ষেপ, হীনমন্যতা ‍সৃষ্টি
করে ক্রমে। তার মানে এই নয় যে মন খারাপ হলেই আপনি বিষণ্নতায় নিমজ্জিত।

মন খারাপ হল সাময়িক আবেগতাড়িত পরিস্থিতি
যা কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে দেখা দেয়। আবার তা কিছু সময় পরে হারিয়ে যায়। সেই ঘটনা মনে
পড়লে হয়ত আবার মন খারাপ হতে পারে, তবে সেই অনুভূতি সবসময় থাকে না।

অপরদিকে বিষণ্নতা কোনো কারণ ছাড়াই মনকে
ছেয়ে ফেলে এবং লম্বা সময় আপনার মানসিক অবস্থাকে বিশৃঙ্খল করে দেয়। শুধু মানসিক নয়,
শারীরিক ক্ষতিও করে এই বিষণ্নতা।

চেনার উপায়

বিষণ্নতার নানা রূপ থাকে। মন খারাপ তাদের
মধ্যে একটি। বিষণ্নতার কারণে আপনার শারীরিক অবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে, জীবনের আশা
আকাঙ্ক্ষাগুলো তুচ্ছ মনে হয়। দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কাজগুলো করতে গিয়ে তাল হারিয়ে
যাচ্ছে এমন মনে হতে পারে। মন খারাপ থাকলেও এমন অনুভূতি হয়, তবে তা সাময়িক।

যেকোনা বিরূপ পরিস্থিতিতে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ
বিষয় হল আপনার সমস্যার শিকড় খুঁজে বের করা। কোন বিষয়টা আপনার জীবনের অগ্রযাত্রাকে আটকে
রেখেছে তা খুঁজে বের করা। 

প্রচণ্ড মন খারাপ: সব বয়সের মানুষেরই মন খারাপ হয়। যে কারণে মন খারাপ সেই কারণ থেকে মনযোগ সরিয়ে
নিলে আবার মন স্বাভাবিক হয়ে যায়।

তবে বিষণ্নতার ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়।
কারণ এর কোনো নির্দিষ্ট কারণ নেই, তাই মনযোগ সরানোর মতো কোনো বিষয়ও নেই। বিষণ্ন মানুষ
প্রচণ্ড দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন, কোনো কাজে শৃঙ্খলা ধরে রাখতে কষ্ট হয়। দীর্ঘ সময় এই
নেতিবাচক মানসিকতা ঘিরে থাকায় জীবন কিংবা কাজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব হারিয়ে যায়।

কারণ ছাড়াই মন খারাপ: সাধারণ মন খারাপের পেছনে সবসময় একটা কারণ থাকবে। আপনি জানবেন
কেনো আপনার কিছু ভালো লাগছে না। তবে বিষণ্নতার ক্ষেত্রে হঠাৎ করেই একরাশ নেতিবাচক ভাবনা
আর অনুভূতি আপনাকে ঘিরে ফেলে যার কোনো নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।

কাজের ক্ষতি:
মন খারাপ হলে কাজ থেমে থাকে না বরং অনেকসময় গতি বেড়ে যায়। কারণ মনযোগ অন্যদিকে ঘোরানোর
জন্য মানুষ মন খারাপের সময় কাজে ব্যস্ত হতে পারে। আবার মন খারাপের কারণটা সমাধান করতেই
হয়ত কাজটা ভালোভাবে করার জেদ চেপে বসে। একসময় মন খারাপের কারণটা আর মাথায় থাকে না কিংবা
কারণটাই সমাধান হয়ে যায়।

তবে বিষণ্নতা আপনাকে নির্জীব করে ফেলে,
সঠিকভাবে চিন্তার ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয় এবং সহজ কাজেও তখন খেই হারিয়ে যায়। বিষণ্নতায়
আক্রান্ত মানুষের কাছে যেহেতু জীবনের সবকিছুই মূল্যহীন তখন হাল ছেড়ে দেওয়াকেই সঠিক
পথ মনে হয়।

বন্ধুদের প্রতি আগ্রহ হারানো: মন খারাপ থাকলে মানুষ পরিচিত মানুষের সঙ্গ খোঁজে। তবে বিষণ্নতায়
সেই মানুষগুলোকেই এড়িয়ে চলতে চায়। মানুষের মন তখন এতটাই নেতিবাচকতায় ভরে যায় যে, সে
নিজেকে সবার থেকে আলাদা করে ফেলতে চায়। আর এতে হতাশাগ্রস্ততা আরও বাড়তে থাকে।

মেজাজের ঘন ঘন পরিবর্তন: মন খারাপ হলে মন মেজাজ খিটখিটে হয়, ক্ষমাসুলভ মানসিকতা থাকে না।
বিষণ্নতায় এই সব কিছুই আরও তীব্রমাত্রায় ঘটে। মানসিক অস্বস্তি, বিরক্তি হয় তার নিত্যসঙ্গী।
রাগ যেন হয় বারুদের মতো। আর সামান্য ঘটনাই তার জন্য হয় আগুনের ফুলকি।

মনযোগ নেই কোথাও: মন খারাপের কারণ জানা নেই, জীবনের কোনো কিছুতেই আগ্রহ নেই। এমন যখন পরিস্থিতিতে
কোনো কাজে আপনার মনযোগ না আসাই স্বাভাবিক, কারণ সবকিছুই আপনার কাছে মূল্যহীন।

মন খারাপ আর বিষণ্নতার মধ্যে হয়ত একটা
যোগাযোগ আছে। তবে প্রথমটার চাইতে দ্বিতীয়টা অনেক বেশি সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই মন খারাপের
আসল কারণ খুঁজে বের করা জরুরি। আর সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিলে জীবন হবে সুন্দর।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন-

বিষণ্নতা কমাতে পারে ‘একান্ত সময়’
 

বিষণ্নতা ধূমপানের মতোই ক্ষতিকর
 

বিষণ্নতা কাটিয়ে ওঠার খাবার
 

শীতের বিষণ্নতা
 





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar