ad720-90

সখীপুরে লেবু ও মাল্টা চাষে সফল মোসলেম উদ্দিন দিন মজুর থেকে বছরে আয় অর্ধ কোটি টাকা


এম সাইফুল ইসলাম শাফলু : টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় লেবু ও মাল্টা চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছেন দিন মজুর মোসলেম উদ্দিন। এক সময় অন্যের জমিতে দিন মজুরের কাজ করতেন মোসলেম উদ্দিন। সাত সদস্যের দরিদ্র পরিবারের খরচ মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। কোন ভাবেই যেনো চলছিল না তাঁর দিনকাল। অভাবের সংসারের ঘানি টানতে পথে পথে বাদাম বিক্রি ও ভাঙারী বিক্রির কাজও করেছেন তিনি। তাতেও ভাগ্যের চাকা ঘুরেনি মোসলেমের। একদিন দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় বাড়ির আঙিনায় লাগানো লেবু গাছে প্রচুর লেবু ঝুলতে দেখে বানিজ্যিক ভাবে লেবু চাষের স্বপ্ন দেখেন তিনি। তার সেই লালিত স্বপ্নই আজ তার হাতের মুঠোয় ধরা দিয়েছে। গাছে গাছে ঝুলছে থোকাথোকা সিডলেস লেবু ও বারি-১ জাতের মাল্টা। চারদিকে সবুজের সমারোহ। সখীপুরের গজারিয়া ও কীর্তনখোলার ভাবনগর গ্রাম যেন এক অপরূপ সৌন্দয্যের লীলাভ‚মিতে রূপ দিয়েছেন তিনি। হয়ে ওঠেছেন এ উপজেলার একজন সফল লেবু ও মাল্টা চাষি। পেয়েছেন অর্থ, সুনাম আর দেশজুড়ে খ্যাতি। বাগানের লেবু,পেপে,মাল্টা এবং আগাম জাতের টক বড়ই বিক্রি করে আজ তিনি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।এভাবেই সফলতার গল্প বলছিলেন উপজেলার কীর্তনখোলা গ্রামের স্বপ্নবাজ মোসলেম উদ্দিন।

মোসলেম উদ্দিন বলেন, একদিন বাড়ির আঙিনায় লাগানো গাছের লেবু বিক্রি করে কিছু টাকা পাই। তা থেকেই আমি বানিজ্যিক ভাবে লেবু চাষ করার স্বপ্ন দেখা শুরু করি। হাতে কিছু জমানো টাকা ছিল। ধারদেনা করেও আরো কিছু টাকা সংগ্রহ করি। পরে গাজীপুর ঢাকার কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে লেবুর বাজারজাত সম্পর্কে জানতে থাকি এবং বাগানের জন্য জমি খোঁজতে শুরু করি। এক পর্যায়ে উপজেলার গজারিয়া উত্তরপাড়া গ্রামের জলিল আমিনের সাড়ে ছয় একর জমি বছরে এক লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে ১০ বছরের জন্য লিজ নেই। ২০১৩ সালে প্রথম দিকে ওই জমির ওপর আমার গাছের কলম এবং নরসিংদী ও টাঙ্গাইলের লাউহাটি থেকে আনা সীটলেস ও এলাচি জাতের পাঁচ হাজার ২’শ চারা লাগাই। একই সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে ওই জমিতে দুই হাজার পেঁপের চারাও লাগানো হয়। এ সময় ব্যাংক থেকে আরো সাত লক্ষ টাকা ঋণ নেই। প্রথম ছয় মাসেই পেঁপে বিক্রি করে চার লক্ষ টাকা আয় হয়। চারা লাগানোর সাত মাসের মধ্যেই লেবু আসা শুরু করে। প্রথম বছরেই প্রায় সাতলক্ষ টাকার লেবু বিক্রি হয়। এছাড়া লেবুর কলম বিক্রি করেও বেশ কিছু টাকা পেয়েছেন বলে তিনি । ধীরে ধীরে আসতে থাকে লেবু বাগানের আয় ও সফলতা।এরপর স্থানীয় কৃষি অফিস পরামর্শসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। ২০১৫ সালে উপজেলার কীর্ত্তণখোলা ভাবনগর এলাকায় বছরে একলক্ষ ২৫ হাজার টাকায় আরো পাঁচ একর জমি ১২ বছরের জন্যে লিজ নেন মোসলেম। ওই জমিতে ‘সাইট্রাস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ -এর আওতায় ও উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় বারী-১ জাতের ৯০০ মাল্টার চারা লাগান । সাথী ফসল হিসেবে লাগান আরো ৯০০ টক আগাম জাতের টক বড়ইয়ের চারা । রোপনের আড়াই বছর পর সেই স্বপ্নের মাল্টাগাছে ব্যাপক ফলন দিচ্ছে। গাছেগাছে ঝুলছে সবুজ ও হলুদ রঙের মাল্টা। স্বপ্ন যেনো ধরা দিয়েছে মোসলেম উদ্দিনের হাতের মুঠোয়। ওইসব বাগান থেকে বছরে তার প্রায় অর্ধ কোটি টাকা আয় হয়।

তিনি আরও বলেন, অভাবের কারণে লেখাপড়া করতে পারিনি। এক সময় আমি অন্যের বাড়িতে বছর ওয়ারি রাখালের কাজ করেছি, ফেরি করে বাদামও বিক্রি করেছি। এখন আমার বাগানেই ২০/২৫ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে। আমার বাগান দেখতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসে। তাদেরকে আমি লেবু চাষ ও মাল্টা চাষ করতে উৎসাহ দেই। বর্তমানে এ উপজেলায় ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় প্রায় সাড়ে ৫’শ মাল্টা চাষী ৩৬’শ হেক্টর জায়গা জুরে মাল্টা বাগান বাগান গড়ে তুলেছেন। এছাড়া এ উপজেলার প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনায়ও ছোট ছোট আকারের অসংখ্য মাল্টা বাগান রয়েছে। সঠিক পরিচর্যা আর উন্নতমানের প্রশিক্ষণের কারণেই বিষমুক্ত, মিষ্টি ও রসালু মাল্টা উৎপাদনে চরম সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এ উপজেলার মাল্টা চাষিরা। ঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় এ বছর মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাগানের প্রতিটি গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন সাইজের কাচা পাকা দৃষ্টিকাড়া মনোলোভা রসালো মাল্টা। বিষমুক্ত মিষ্টি ও সুসাধু মাল্টা খেতে এবং পরামর্শ নিতে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা বাগানগুলোতে ভির করছেন। প্রকার ভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে এ মাল্টা বিক্রি করা হচ্ছে।

প্রতিবেশী জাকির হোসেন বলেন, মানুষ পরিশ্রম করলে সফল হতে পারে লেবু, পেপে, মাল্টা এবং আগাম জাতের টক বড়ই চাষ করে মোসলেম উদ্দিন তা প্রমাণ করেছেন। তাকে দেখে সখীপুর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দিনদিনই লেবু ও মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এবং তার কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নূরুল ইসলাম বলেন, লেবুর পাশাপাশি তিনি মাল্টা চাষেও সফলতা পেয়েছেন। বারী-১ জাতের মাল্টা বাজারে পাওয়া মাল্টার মতই মিষ্টি হয়।এ অঞ্চলের মাটি মাল্টা ও লেবু চাষের জন্য বেশ উপযোগী। মোসলেম উদ্দিনের বাগান দেখে অনেকেই মাল্টা ও লেবু চাষে উৎসাহী হচ্ছেন। আমরাও চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ ও বাগান পরিদর্শন করে থাকি।

 

“নিউজ টাঙ্গাইল”র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar