ad720-90

কৃত্রিম লোহিত রক্তকণিকা দেবে বাড়তি সুবিধাও


কৃত্রিম লোহিত রক্তকণিকা আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা প্রয়োজনীয় ওষুধ বহন, বিষাক্ত পদার্থ শনাক্ত করার মতো কিছু বাড়তি কাজও করতে পারবে। ছবি: সংগৃহীতবহু বছর ধরেই বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন এমন লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে, যার মধ্যে থাকবে প্রাকৃতিক সব বৈশিষ্ট্য। এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে। অবশেষে এ ক্ষেত্রে সুখবর দিল গবেষণা পত্রিকা এসিএস ন্যানো। এতে জানানো হয়, সব প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে এমন লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে, যার মধ্যে থাকবে বাড়তি কিছু উপকারী বৈশিষ্ট্য।

সায়েন্সডেইলির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাকৃতিকভাবে লোহিত রক্তকণিকায় থাকা স্থিতিস্থাপকতা, অক্সিজেন পরিবহন ও দীর্ঘ সঞ্চালনকালের মতো বৈশিষ্ট্যের সবগুলোকে একসঙ্গে এক জায়গায় করা সম্ভব হয়নি বলে এত দিন কোনো সুখবর দিতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এবার সে সুখবর তো এসেছেই, সঙ্গে রয়েছে বোনাসও। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, তাঁরা যে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন, তাতে প্রাকৃতিক সব বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি রয়েছে শরীরের জন্য উপকারী বাড়তি কিছু বৈশিষ্ট্যও। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের একদল গবেষক এই সুখবর দিয়েছেন।

শরীরের জন্য লোহিত রক্তকণিকা বা আরবিসি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, রক্তের এই অংশই ফুসফুস থেকে অক্সিজেন পরিবহন করে শরীরের বাকি টিস্যুগুলোতে পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করে। চাকতি আকৃতির এই কোষগুলোয় থাকে লাখ লাখ হিমোগ্লোবিন অণু। এই আয়রন-সমৃদ্ধ প্রোটিনের সঙ্গেই মূলত অক্সিজেন যুক্ত হয়। আরবিসির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি ভীষণরকম স্থিতিস্থাপক। এ বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি অতি সরু পথ দিয়েও পরিবাহিত হতে পারে এবং স্ফীত অংশে গিয়ে পুনরায় পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে পারে। এই কোষগুলোর উপরিতলে এমন কিছু প্রোটিন, যা তাকে রক্তনালি দিয়ে পরিবহনের সক্ষমতা দেয়। এই প্রোটিনগুলো না থাকলে, তার এই সঞ্চালন ক্ষমতা থাকত না। কারণ, তেমন করতে গেলেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার বাধার মুখে পড়তে হতো তাকে। এই সবগুলো প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সংবলিত কৃত্রিম আরবিসি তৈরিতে গবেষণা শুরু করেন চীনের বিজ্ঞানী ওয়েই ঝু ও মার্কিন বিজ্ঞানী সি জেফরি ব্রিংকার এবং তাঁদের দল।

ওয়েই ঝু ও সি জেফরি ব্রিংকারের নেতৃত্বাধীন দলের লক্ষ্য ছিল এমন একটি লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করার, যার মধ্যে প্রাকৃতিক সব বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি থাকবে নির্দিষ্ট ওষুধ বহন, শরীরের ভেতরে বিষাক্ত বস্তুর উপস্থিতি শনাক্তের মতো কিছু বৈশিষ্ট্য। এ কাজে তাঁরা বেশ ভালোভাবে সফল হয়েছেন বলা যায়।

কৃত্রিম এই লোহিত কণা তৈরিতে বিজ্ঞানীরা প্রথমে প্রাকৃতিক লোহিত কণার একটি অনুলিপি তৈরি করেন। সায়েন্সডেইলির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিজ্ঞানীরা প্রথমে মানুষের রক্ত থেকে আরবিসি সংগ্রহ করেন। এর পর সিলিকার পাতলা পর্দা দিয়ে এই প্রাকৃতিক আরবিসির ওপর আবরণ তৈরি করেন। এরপর এই সিলিকা-আরবিসির ওপর ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জবিশিষ্ট পলিমারের একটি স্তর তৈরি করেন। এর পর সিলিকার স্তরটিকে অপসারণ করে নেন। ফলে উৎপন্ন হয় স্থিতিস্থাপক অনুলিপি। এরপর এই স্থিতিস্থাপক অনুলিপিটির ওপর প্রাকৃতিক আরবিসির মেমব্রেন বসানো হয়। এমন জটিল পদ্ধতি ব্যবহার করে শেষ পর্যন্ত যে কৃত্রিম কোষটি উৎপন্ন হয়, তাতে প্রাকৃতিক আরবিসির সবগুলো বৈশিষ্ট্যই রয়েছে।

কৃত্রিম এই আরবিসি পরে ইঁদুরের শরীরে প্রবেশ করানো হয়, যেখানে এগুলো ৪৮ ঘণ্টার বেশি টিকে ছিল। এর পর এই কোষের মাধ্যমে একে একে হিমোগ্লোবিন, ক্যানসার-রোধী ওষুধ, বিষাক্ত পদার্থ শনাক্তকরণ সেন্সরসহ নানা অতি আণুবীক্ষণিক বস্তু পাঠানো হয়। এতে দেখা যায়, বাহক হিসেবেও এই কৃত্রিম আরবিসি বেশ ভালো কাজ করছে। ফলে ভবিষ্যতে ক্যানসার নানা ধরনের জটিল রোগের চিকিৎসায় এটি প্রয়োগ করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

এ গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার ফোর্স অফিস অব সায়েন্টিফিক রিসার্চ, সান্ডিয়া ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিজের ল্যাবরেটরি ডিরেক্টেড রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম, ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জি অফিস অব সায়েন্স, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ (এনআইএইচ) ও চীনের ন্যাশনাল ন্যাচারাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন অর্থায়ন করেছে।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar