ad720-90

প্রথমবারের মতো বিদেশি বাজারে দেশি পিসি গেম


এবার প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশে তৈরি পিসি গেম ‘জিরো আওয়ার’ প্রকাশিত হয়েছে। ‘জিরো আওয়ার’ নামের এই গেমটি একই সঙ্গে ট্যাকটিক্যাল শ্যুটার ঘরানার প্রথম কোনো দেশি গেমও বটে!

দেশি গেমারদের পাশাপাশি অন্য দেশের গেমাররাও সেটি কিনে খেলতে পারছেন। জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক গেমিং প্ল্যাটফর্ম ‘স্টিম’-এর ব্যবহারকারীরা গেমটির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তাঁরা আরো বড় বাজেটের গেমের চেয়েও জিরো আওয়ারকে ভালো মনে করছেন। গেমিং দুনিয়ায় এভাবে বাংলাদেশের নাম তুলে ধরার কাজটি করেছে গেমটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘আত্রিতো’ ও ‘এম৭ স্টুডিওজ’।

গেমের নাম জিরো আওয়ারের কারণ-

গেমটির ঘরানা ‘ট্যাকটিক্যাল শ্যুটার’, যার অর্থ গেমারের দায়িত্ব শুধু বন্দুক চালনাই নয়, বরং কিভাবে শত্রুদের পরাস্ত করা যাবে সেটি নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করে সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করে এগোনো। পিসি গেমিংয়ের শুরু থেকেই ‘সোয়াট’, ‘রেইনবো সিক্স’ বা ‘ডেল্টাফোর্স’-এর মতো গেমগুলো এই ঘরানার অগ্রভাগ দখল করে রেখেছে।

বিদেশি বাজারে দেশি পিসি গেম | 948145 ...এই ঘরানার অন্যান্য গেমের সঙ্গে তুলনা করলে ‘জিরো আওয়ার’ বলা যায় ‘রেইনবো সিক্স : সিজ’-এর মতো অনেকটা। গেমের মূল কেন্দ্রবিন্দু ‘সিজ ওয়ারফেয়ার’, দুটি দলের একটি চেষ্টা করবে নিজেদের এলাকা দখলে রাখতে আর অন্য দলটির কাজ হবে এলাকা দখলমুক্ত করা। তবে হাতে সময় অফুরন্ত থাকবে না। অতএব যেটিই দুটি দলের পরিকল্পনা হোক না কেন, কাজ সম্পন্ন করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই।

গেমটি যেভাবে শুরু-

এম৭ প্রডাকশনসের প্রধান নির্বাহী, লিড গেম ডেভেলপার, জিরো আওয়ারের সহপরিচালক মেহেরাজ মারুফ, তিনি বলেন, “শুধু ছোটবেলায় ‘সোয়াট ৪’ ও ‘রেইনবো সিক্স’ সিরিজের গেমগুলোর বিশাল ভক্ত হওয়ার জন্যই ‘জিরো আওয়ার’ তৈরিতে হাত দিয়েছিলাম।” ফলে স্বাভাবিকভাবেই গেমটিতে সোয়াট ৪ নয়, বরং রেইনবো সিক্সের প্রভাবই বেশি। জিরো আওয়ারের আরেক সহপরিচালক নাইম বিন হাসান জানালেন, ৩৩ জনের একটি দল গেমটি তৈরিতে কাজ করেছে।দেশি গেমগুলো বেশির ভাগ সময় গ্রাফিকসে পিছিয়ে থাকে। এর জন্য বাজেট, সময় এবং কারিগরি সীমাবদ্ধতাই দায়ী। অনেকটা সে চিন্তা থেকেই গেমটির নির্মাতা এম৭ প্রডাকশন গেমের সব গ্রাফিক্যাল অ্যাসেট, যেমন—চরিত্রগুলোর মডেল, পারিপার্শ্বিক মডেল ও টেক্সচার নিজেরাই একেবারে গোড়া থেকে তৈরি করেছে। অ্যাসেটগুলো শুধু এই গেমে ব্যবহৃত হয়েছে তা নয়, বহুদিন থেকেই অ্যাসেটগুলো তারা অন্য নির্মাতাদের কাছে বিক্রিও করছে। গেমের অ্যাসেট নিজেরাই তৈরি করার ফলে তারা গেমের শুধু যে দামই হাতের নাগালের মধ্যে রাখতে পেরেছে তা নয়, ভবিষ্যতে নতুন কনটেন্ট তৈরি করতে বা নতুন গেম তৈরি করতেও সেগুলো ব্যবহার করে বেশ দ্রুততার সঙ্গে কাজ শেষ করতে পারবে। এম৭ স্টুডিওজের পাশাপাশি গেমটির আরেক নির্মাতা ‘অত্রিত’। মূলত আর্কিটেকচারাল মডেল এবং ভিজ্যুয়ালাইজেশন নিয়ে কাজ শুরু করলেও দ্রুতই তারা মোশন গ্রাফিকস এবং অন্যান্য থ্রিডি মডেলিং নিয়েও কাজ শুরু করে। শুধু জিরো আওয়ার নয়, এম৭ প্রডাকশনের সঙ্গে আরো একটি গেম ‘আগন্তুক’ নিয়েও তারা কাজ করছে। তবে সে গেমটির ব্যাপ্তি বিশাল হওয়ায় বাজারে প্রকাশ করতে আরো কিছুটা সময় লাগবে।

গেমপ্লেটির ধরণ-

জিরো আওয়ারের গেমপ্লে বেশ চ্যালেঞ্জিং। প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো, একা একা এই গেম খেলা অত্যন্ত কঠিন এবং খেলার জন্য অবশ্যই ইন্টারনেট লাগবে। কেননা কোনো সিঙ্গল প্লেয়ার ক্যাম্পেইন এই গেমে নেই। বাংলাদেশের বিভিন্ন বাস্তব জায়গার ওপর ভিত্তি করে ম্যাচ খেলার জন্য বেশ কিছু ম্যাপ বা মানচিত্র গেমটিতে দেওয়া হয়েছে। পছন্দ অনুযায়ী ম্যাপ বেছে নেওয়ার পর দল বাছাইয়ের পালা। ডিফেন্ডার এবং অ্যাটাকার—এ দুটি দলের মধ্যে ম্যাচটি চলবে। ডিফেন্ডারদের কাজ, ‘ম্যাপের হোস্টেস বা জিম্মি এবং বোমা রক্ষা করা।’ আর অ্যাটাকাররা কাল্পনিক বাংলাদেশি এমএস-০৯ স্পেশাল ফোর্সেস টিমের অংশ হিসেবে চেষ্টা করবে ডিফেন্ডারদের হারিয়ে জিম্মি উদ্ধার করে বোমা নিষ্ক্রিয় করতে। গেমটির প্রায় সব কিছুই অত্যন্ত বাস্তবসম্মত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। কী কী অস্ত্র এবং যন্ত্রপাতি গেমার বাছাই করেছেন, কোথায় অবস্থান নিয়েছেন বা কিভাবে প্রবেশ করেছেন বিল্ডিংয়ে—সব কিছুর ওপরই নির্ভর করবে হারজিত। অন্যান্য গেমে যেখানে গেমারকে প্রায় সুপারহিরো বানিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে এ গেমে গা বাঁচিয়ে বাস্তবসম্মতভাবে হেলথ এবং গিয়ারের সমন্বয় করে এগোতে হবে।

গেমটি খেলার জন্য লাগবে অন্তত উইন্ডোজ ৭ বা ততোধিক ৬৪ বিট অপারেটিং সিস্টেম, ইন্টেল কোর আই৩ ৭১০০ বা এএমডি রাইজেন ৩ ১২০০ প্রসেসর, ৬ গিগাবাইট র্যাম, এনভিডিয়া জিটিএক্স ৭৫০টিআই বা এএমডি রেডিওন আর৭ ২৬০এক্স জিপিউ, ৮ গিগাবাইট জায়গা এবং ব্রডব্র্যান্ড ইন্টারনেট। গেমটি কেনা যাবে স্টিম থেকে বা সরাসরি গেম নির্মাতাদের পেজ থেকে। শুধু প্রাপ্তবয়স্করাই গেমটি খেলতে পারবেন।

ভবিষ্যতে নতুন আপডেট, বেশ কিছু নতুন ম্যাপ বা মানচিত্র, নতুন মাল্টিপ্লেয়ার ফিচার গেমটিতে যুক্ত করা হবে। জিরো আওয়ার এখনো পরীক্ষাধীন অবস্থায় আছে। কাজ শেষ হলে গেমটির পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ হবে আরো ব্যাপক।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar