ad720-90

ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের অর্ধেকের হাতে মোবাইল: জরিপ


বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান
সানেম পরিচালিত এই জরিপের ফলাফল শনিবার একটি ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় উপস্থাপন করা হয়।

সানেম ও অ্যাকশন এইড
বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘জেন্ডার অ্যান্ড ইয়ুথ ইনক্লুসিভনেস ইন টেকনোলজি ইন
বাংলাদেশ’ শীর্ষক সভায় সানেমের রিসার্চ ইকোনমিস্ট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি
বিভাগের প্রভাষক মাহতাব উদ্দিন এই জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “দেশে তরুণদের
মধ্যে ৮০ শতাংশ ছেলের মোবাইল ফোন থাকলেও মেয়েদের মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশের মোবাইল ফোন
আছে। সবচেয়ে বেশি আয় করে যে ১০ শতাংশ পরিবার, সেখানে ৯২ শতাংশ তরুণের মোবাইল ফোন আছে।
আর সবচেয়ে কম আয় করে যে ১০ শতাংশ, সেখানে ৭২ শতাংশ তরুণের মোবাইল ফোন আছে।

“সবচেয়ে বেশি আয় করা
১০ শতাংশ পরিবারের ৭৩ শতাংশ তরুণীর হাতে মোবাইল ফোন থাকলেও সবচেয়ে কম আয় করা ১০ শতাংশ
পরিবারের মাত্র ২৪ শতাংশ তরুণী মোবাইল ফোনের মালিক।”

দরিদ্র ও স্বচ্ছল উভয়
ক্ষেত্রেই নারীর চেয়ে পুরুষ মোবাইল ব্যবহারে এগিয়ে আছে বলে জানান তিনি।

কম্পিউটার ও ইন্টারনেট
সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও বৈষম্য রয়েছে জানিয়ে মাহতাব বলেন, “বাংলাদেশে মাত্র ৬ শতাংশ
পরিবারের কম্পিউটার আছে। ৪ শতাংশেরও কম নারী কম্পিউটার ব্যবহার করেছেন। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক
বৈষম্যও বিদ্যমান। ঢাকা ও চট্টগ্রামে অন্য বিভাগের চেয়ে কম্পিউটার মালিকানা অনেক বেশি।

“শহরাঞ্চলে মাত্র ৫০
শতাংশ পরিবারের ইন্টারনেট সুবিধা আছে। গ্রামাঞ্চলে এ সুবিধা আছে মাত্র ৩০ শতাংশ পরিবারের।
সারা দেশে মাত্র ১০ শতাংশ নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। অন্যদিকে মোবাইল ইন্টারনেট
সেবার দ্রুততার ক্ষেত্রে র‍্যাংকিংয়ে ১৪৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৩৪। ফলে শুধু ইন্টারনেট
সেবা প্রাপ্তিই নয়, সেবার মানও প্রশ্নসাপেক্ষ।”

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য
দেশের তুলনায় কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ প্রাপ্তিতে বাংলাদেশ ‘অনেক পিছিয়ে আছে’ বলে
জানান মাহতাব উদ্দিন।

বৈষম্য নিরসনে কম্পিউটার
বা মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ভ্যাট ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।

দেশের জনসংখ্যার তুলনায়
কারিগরি ও প্রযুক্তি শিক্ষার অবকাঠামো অপ্রতুল উল্লেখ করে মাহতাব উদ্দিন বলেন, “এ ধরনের
শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের চাহিদাও কম। ২০১৯-২০ এ ৬২৪টি সরকারি ও বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানের ডিপ্লোমা কোর্সে প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার আসন ফাঁকা পড়ে ছিল।

“৫১১টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে
১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫টি আসনের মধ্যে ১ লাখ ২৭ হাজার ৯৭৬টি আসন ফাঁকা ছিল। ৪৯টি সরকারি
ইনস্টিটিউট এবং ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৭ হাজার ১২৭টি আসন ফাঁকা ছিল।
সব কয়টি প্রতিষ্ঠানেই প্রশিক্ষক এবং শিক্ষা প্রণালীর মান প্রশ্নসাপেক্ষ।”

অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের
আবাসিক প্রতিনিধি ফারাহ কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শিক্ষা
উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।

প্রযুক্তি বিভাজনের
মূল কারণ হিসেবে সামাজিক প্রেক্ষাপটে মেয়েদের বিভিন্ন বাধাকে চিহ্নিত করে তিনি বলেন,
“সামাজিক নানা সংস্কার এবং রক্ষণশীল মনোভাবের কারণে প্রায়শই নারীদের প্রযুক্তি ব্যবহারে
বাধা দেওয়া হয় বা নিরুৎসাহিত করা হয়। অনলাইনে নারীদের নানা হয়রানিরও শিকার হতে হয়।
উপযুক্ত অবকাঠামো থাকলেও অনেক সময় নারীদের জন্য এই বাধাগুলো দূর করা যায় না।”

কারিগরি শিক্ষা নিয়ে
তিনি বলেন, “২০০৯ সালে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ছিল শুন্য। বর্তমানে এ হার ১৭ শতাংশ।
প্রশিক্ষণ কোর্সগুলোর ক্ষেত্রে চাকরির বাজারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষাপ্রণালী তৈরি
এবং প্রশিক্ষকের দক্ষতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় অবৈধ সরকারগুলো
সস্তা জনপ্রিয়তার লক্ষ্যে অর্থনীতি এবং উন্নয়নের কথা চিন্তা না করেই, কারিগরি শিক্ষাকে
কোনো গুরুত্ব না দিয়ে সাধারণ শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষার প্রসার করেছে। ফলে প্রায় ৫০ লক্ষ
গ্র্যাজুয়েট তৈরি হয়েছে, যাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন,
কারিগরি ও ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ সবার জন্য উন্মুক্ত হতে হবে, বয়সভিত্তিক বাধা থাকা যাবে
না। এজন্য সরকার, পেশাজীবী, ছাত্রসহ সব পর্যায়ের সবাইকে উন্মুক্ত মানসিকতা ধারণ করতে
হবে।

“যারা ইতোমধ্যে সাধারণ
শিক্ষায় উচ্চশিক্ষার ডিগ্রি নিয়েছেন, কিন্তু উপযুক্ত কাজ পাচ্ছেন না তাদেরও কারিগরি
শিক্ষায় প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিত।”

সানেমের নির্বাহী পরিচালক
সেলিম রায়হান বলেন, চলমান কোভিড-১৯ সংকটে ডিজিটাল অসমতার বিষয়টি আরও প্রকটভাবে ফুটে
উঠেছে।

সূচনা বক্তব্যে সানেমের
গবেষণা পরিচালক সায়মা হক বিদিশা বলেন, “জনমিতির লভ্যাংশের সুবিধা অর্জনের জন্য তরুণ
জনগোষ্ঠীর গুণগত মান উন্নয়ন ও তাদের উপযুক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

তিনি বলেন, চতুর্থ
শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলা করতে প্রযুক্তিতে তরুণ
এবং নারীদের অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন। ডিজিটাল বিভাজনের মধ্যে আরও বিশেষ কিছু বিভাজন রয়েছে
যেমন লৈঙ্গিক বিভাজন, বয়সগত বিভাজন এবং অঞ্চলভিত্তিক বিভাজন। এই বিভাজন দেখা যায় উচ্চশিক্ষায়,
প্রশিক্ষণে, উদ্যোগে, অভিবাসনে, গবেষণায় এবং বিশেষ করে প্রযুক্তি ব্যবহারে।

আলোচনায় সরকারের এটুআই
কর্মসূচির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নীতি বিষয়ক উপদেষ্টা আনির চৌধুরী কোভিড-১৯ পরিস্থিতির
কথা উলেখ করে বলেন, “গত তিন মাসে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষায় সাড়ে
চার হাজারেরও বেশি লাইভ ক্লাস নেওয়া হয়েছে। তবুও অন্তর্ভুক্তিতে পিছিয়ে আছে নারী, দরিদ্র,
প্রতিবন্ধী, শরণার্থী, বন্যার্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।”





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar