জেনে নিন কলা চা পানের উপকারীতা ও প্রস্তুত পদ্ধতি
সাধারণত বিশ্বাস করা হয় যে, কলা পুষ্টিকর উপাদানগুলিতে সমৃদ্ধ, যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। তবে আপনি কি কখনও এ থেকে তৈরি চা পান করেছেন? হ্যাঁ, আমরা অবাক হয়েছি যে কলা থেকে কীভাবে চা তৈরি করা যায়। আপনি অবশ্যই কলা স্মুদি বা ঝাঁকুনি পান করেছেন। তবে আসুন আমরা আপনাকে বলি যে কলা চা পান করা আপনাকে চর্বিমুক্ত করে তুলবে। এর সাথে সাথে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অনেকগুলি সুবিধা থাকবে। কলা চা পানে নানা ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে পারেন। যেমন-
* অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান: কলাতে স্বাভাবিকভাবেই ডোপামিন এবং গ্যালোক্যাচীন সহ পানিতে দ্রবণীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো বেশি থাকে। এসব উপাদান ফ্রি র্যাডিক্যালগুলোর সঙ্গে লড়াই করতে এবং হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী দশা প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। তবে কলার তুলনায় এর খোসায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে। ফলে পানীয়টি তৈরির সময় এতে খোসা যুক্ত করলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি পাওয়া যাবে। অন্যদিকে কলাতে প্রকৃতিগতভাবে ভিটামিন সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে, কলা চা এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস হিসেবে ভালো নয়। ভিটামিন সি তাপ সংবেদনশীল, সম্ভবত কলা চা তৈরির সময় এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টটি নষ্ট হয়ে যায়।
* পেট ফাঁপা কমাতে পারে : কলা চা-তে পটাশিয়াম বেশি থাকে, এই মিনারেল এবং ইলেকট্রলাইট উপাদানটি শরীরে তরলের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর রক্তচাপ ও পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রণের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। শরীরে তরলের ভারসাম্য বজায় রাখতে সোডিয়াম, অন্যান্য মিনারেল ও ইলেকট্রোলাইটের সঙ্গেও পটাশিয়াম ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে। পটাশিয়ামের চেয়ে সোডিয়ামের পরিমাণ যখন বেশি হয় তখন পেট ফুলে যাওয়া বা পেট ফাঁপা সমস্যার সৃষ্টি হয়। কলা চা-তে বিদ্যমান পটাশিয়াম এবং পানি উপাদানগুলো শরীরকে প্রস্রাবের মাধ্যমে সোডিয়াম ত্যাগ করার সংকেত দিয়ে উচ্চ-লবণযুক্ত খাদ্যের কারণে পেট ফোলা প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।
* ভালো ঘুম হয় : ভালো ঘুমের দাওয়াই হিসেবে কলা চা বেশ জনপ্রিয়। এতে তিনটি প্রধান পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা অনেকেই ঘুমের উন্নতিতে সহায়তা হিসেবে দাবি করেন- পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ট্রিপটোফ্যান। ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়ামের একটি ভালো উৎস হচ্ছে কলা। এটি দুটি খনিজ পেশী-শিথিল করে আরো ভালো মানের ঘুম এবং বেশি সময়ের ঘুমের সঙ্গে সম্পর্কিত। কলা শরীরে কিছু ট্রিপটোফ্যান সরবরাহ করে- এটি একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা ঘুম-প্ররোচিত হরমোন সেরোটোনিন এবং মেলাটোনিন তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদিও কোনো গবেষণায় ঘুমের সহায়ক হিসেবে কলা চায়ের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়নি। তাই এটা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে, এই পুষ্টিগুলো চায়ে মেশানোর পর কি পরিমাণ থাকে। কলা যেভাবে চোখে ঘুম আনে, কলা চায়ের প্রভাব একইরকম কিনা তা বলাটা আসলে কঠিন।
* চিনির পারিমাণ কম : চিনিযুক্ত পানীয়গুলোর ভালো বিকল্প হতে পারে কলা চা। কলা সেদ্ধ করার সময় এর খুব অল্প পরিমান সুগার পানিতে মেশে, যা আপনার চায়ের জন্য প্রাকৃতিক মিষ্টি হিসেবে কাজ করে। অনেকেই কোমল পানীয় থেকে প্রচুর পরিমাণে চিনি গ্রহণ করে যা স্থূলতা, হৃদরোগ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই শর্করা যোগ করা হয়নি এমন পানীয় হিসেবে কলা চা বেছে নিতে পারেন, এটি আপনার চিনির পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার সহজ উপায় হতে পারে।
* হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক: কলা চা-এর পুষ্টিগুণ হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। কলা চা-তে পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা রক্তচাপ কমাতে এবং হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানোর জন্য সহায়ক। ক্যাটচিন সমৃদ্ধ খাদ্য- কলা চা-তে বিদ্যমান এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।
- যেভাবে তৈরি করবেন কলা চা
কলা চা তৈরি করা খুবই সহজ। খোসা ছাড়া অথবা খোসা সহ এই চা তৈরি যায়।
১. খোসা ছাড়া কলা চা
* একটি পাত্রে ২-৩ কাপ পানি নিন (৫০০-৭০০ মিলিলিটার) এবং চুলায় ফুটাতে দিন।
* পরিষ্কার পানি দিয়ে একটি পাকা কলা (খুব বেশি পাকা নয়) ধুয়ে নিন।
* কলার সামনের এবং পিছনের অংশ কেটে ফেলে দিন। খোসা ফেলে দিন।
* ফুটতে থাকা পানিতে কলা দিন।
* চুলার জ্বাল কমিয়ে ৫-১০ মিনিট সেদ্ধ করুন।
* পানি ফুটে আসলে এতে দারুচিনি অথবা মধু যোগ করুন (স্বাদ বাড়াতে চাইলে)।
* এবার কলা ফেলে দিয়ে পানিটুকু ২-৩ কাপে ভাগ করে নিন।
২. কলার খোসার চা
* একটি পাত্রে ২-৩ কাপ পানি নিন (৫০০-৭০০ মিলিলিটার) এবং চুলায় ফুটতে দিন।
* একটি কলার খোসা নিন।
* খোসার সামনের এবং পিছনের অংশ কেটে ফেলে দিন।
* ফুটতে থাকা পানিতে খোসা দিন।
* চুলার জ্বাল কমিয়ে ১৫-২০ মিনিট ধরে সেদ্ধ করুন।
* পানি ফুটে আসলে এতে দারুচিনি অথবা মধু যোগ করুন (স্বাদ বাড়াতে চাইলে)।
* এবার খোসা ফেলে দিয়ে পানিটুকু ২-৩ কাপে ভাগ করে নিন।
যদি এই চা আপনার কাছে উপভোগ্য হয়ে থাকে, তাহলে বাকিটুকু ফ্রিজে রেখে দিয়ে ১-২ দিনের মধ্যে পান করতে পারেন- ঠান্ডা কিংবা গরম করে।
অপচয় এড়াতে সেদ্ধ কলাটি স্মুদি, ওটমিল, পাউরুটি বা অন্য কিছুর সঙ্গে খেতে পারেন।
Comments
So empty here ... leave a comment!