ad720-90

হার্ট সুস্থ রাখতে চাই খাদ্যভ্যাসে পরিবর্তন


হার্টের রোগ দিন আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। সাধারণত জেনেটিক বা বংশগত, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, কায়িক পরিশ্রমের অভাব, দুশ্চিন্তা, নারীদের বেশি বয়সে বিয়ে ও সন্তানধারণ, ধূমপান ইত্যাদি কারণেই এই হার্টের রোগ হয়। তবে এই সমস্যার সমাধান আছে। বংশগত কারণ ছাড়া বাকিগুলো নিয়ন্ত্রণে রেখে কিংবা পরিবর্তন করে হার্টকে সুস্থ রাখা সম্ভব।

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের মাধ্যমে  হৃদরোগ ও স্ট্রোক থেকে  নিজেদের রক্ষা করা সম্ভম মর্মে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও হৃদরোগ ও স্ট্রোক এর কারণে বহু মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। স্বাস্থ্য গবেষকরা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে সামান্য কিছু পরিবর্তন এনেই এসব অর্জন করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন সচেতনতা।তবে আর দেরী না করে চলুন জেনে নেই হার্ট ভালো রাখার উপায়গুলো সম্পর্কে-

. বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার খান

যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ আছে সেসব খাবার খাবেন। এসব খাবারের কারণে শরীরে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়। কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে সাহায্য করে এই ব্যাকটেরিয়া। বেশি আঁশ আছে এরকম সবজির মধ্যে রয়েছে শিম মটরশুঁটি জাতীয় সবজি, কলাই ডাল জাতীয় শস্য এবং ফলমূল। তাছাড়াও আলু এবং শেকড় জাতীয় সবজি খোসাসহ রান্না করলে সেগুলো থেকেও প্রচুর আঁশ পাওয়া যায়।

. স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা জমাটবাঁধা চর্বি জাতীয় খাবার কমিয়ে ফেলুন

খাদ্য বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেসব খাবারে বেশি স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা জমাট-বাঁধা চর্বি থাকে সেসব খাবার খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে বেড়ে যায় হৃদরোগের ঝুঁকিও। চিজ, দই, লাল মাংস, মাখন, কেক, বিস্কিট ও নারকেল তেলে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে হলে স্যাচুরেটেড নয় এমন চর্বি (যেসব খাবারের উপর চর্বি জমাট বাঁধে না) সে ধরনের খাবার খেতে পরামর্শ দিয়েছেন খাদ্য বিজ্ঞানীরা ।

এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে, তেল সমৃদ্ধ মাছ, বাদাম ও বীজ। অলিভ, রেপসিড, সানফ্লাওয়ার, কর্ন এবং ওয়ালনাট তেল দিয়ে রান্নার বিষয়ে তারা জোর দিয়েছেন। দুধের বেলায় স্কিমড বা সেমি-স্কিমড (দুধ থেকে চর্বি সরিয়ে নেওয়া) দুধ খেতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে খাবারে যাতে বাইরে থেকে চিনি মেশানো না থাকে। লাল মাংসের বদলে খেতে হবে মুরগির মাংস। মুরগির চামড়া তুলে ফেলে দিন। গরুর মাংস খেলে তার উপর থেকে চর্বি ফেলে দিয়ে রান্না করতে হবে।

৩. খাবার তালিকায় মাছ যোগ করুন

মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায় যা খেলে হার্টের রোগের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে আসে। পাশাপাশি এই এসিড রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে ও রক্তনালীতে কোলেস্টেরল জমাট বাঁধা প্রতিরোধেও সাহায্য করে। তাই সপ্তাহে অন্তত একদিন এমন মাছ খেতে হবে যাতে প্রচুর তেল আছে।

৪. লবণ কে বলুন ‘না’

অতিরিক্ত লবণ খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়—এই কথা ছোট থেকেই জানা অনেকের। খাবারে বাড়তি লবণ আপনার রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় এমনকি হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও অনেক বাড়িয়ে দেয়।

আমরা যা লবণ খাই তার প্রায় ৭৫ শতাংশ আসে প্রক্রিয়াজাত কিংবা প্যাকেটজাত খাবার থেকে, তাই চেষ্টা করুন এ ধরনের খাবার এড়িয়ে টাটকা কিছু খেতে। খাওয়ার সময় পাতে বাড়তি লবণ নেয়া বন্ধ করুন, রান্নাতেও লবণ একটু হিসেব করে দিন। কয়েক সপ্তাহ একটু কষ্ট করলেই অভ্যাস হয়ে যাবে। খাদ্য বিশেষজ্ঞ বলছেন, লবণের পরিবর্তে মশলা দিয়ে খাবার প্রস্তুত করলে তা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাবে।

৫. ভিটামিন মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খাবেন

যেসব খাবারে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ বেশি থাকে সেগুলো আমাদেরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এসব খাবার হৃদরোগের ঝুঁকিও কমিয়ে দেয়।ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়ামের মতো খনিজ উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করে। হৃদরোগের যেসব কারণ আছে সেগুলো ঠেকাতেও এসব খনিজ ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে।

অনেক খাদ্য বিশেষজ্ঞ মনে করেন, স্বাস্থ্যকর ও ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েটের মাধ্যমেই এসব ভিটামিন ও খনিজ পাওয়া সম্ভব।

এসবের জন্যে ট্যাবলেটের উপর নির্ভর করতে হবে না। তবে তার মধ্যে ব্যতিক্রম হচ্ছে ভিটামিন ডি। কারো শরীরে ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব থাকলে যেসব খাবার খাওয়া প্রয়োজন: প্রতিদিন পাঁচটি ফল বা সবজি খাওয়া। ছোট্ট এক গ্লাস জুস। শিম ও ডাল জাতীয় শস্যও খেতে পারেন। বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবারে থাকে ভিটামিন ই। মাছ, দুগ্ধজাত খাবার ও হোলগ্রেইনে পাওয়া যায় ভিটামিন বি। কলা, আলু এবং মাছে পটাশিয়াম। ডাল ও হোলগ্রেইনে ম্যাগনেসিয়াম। দুগ্ধজাত খাবার ও সবুজ পাতার সবজি থেকে পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম।

৬. ধূমপান ছাড়ুন!

সিগারেটের সুখটান আপনার হৃদপিণ্ডের জন্য কোনো ভাল খবর বয়ে আনবে না! কারণ ধূমপান আমাদের শরীরের রক্তনালীর নমনীয়তা নষ্ট করে, যার ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। এছাড়াও অনমনীয় রক্তনালীতে চর্বি জমে হৃদরোগের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তাই বাঁচতে চাইলে দেরি না করে আজই ছাড়ুন এই বিষপান।

 

৭. রান্নায় সঠিক তেলের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হউন

 হার্টের সুস্থতায় রান্নার তেল নির্বাচনের সময়ও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। রান্নায় অলিভ ওয়েল বা বাদাম তেল ব্যবহার করা ভালো। ভেজিটেবল ওয়েলও হার্টের জন্য ভালো।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar