ad720-90

আট দশকেই জলমগ্ন হবে অধিকাংশ মহাদেশ: জাতিসংঘ


মহাপ্রলয়ের আর খুব একটা হয়তো দেরি নেই। বড়জোর ৮০টা বছর! তিন ভাগ জল আর এক ভাগ স্থলের এই পৃথিবীর প্রায় পুরোটাই ২১০০ সালের মধ্যে চলে যাবে সাগর, মহাসাগরের তলায়! এমনটাই বলছে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট।

গত ১০০ বছরে সমুদ্র যতটা উপরে উঠে এসেছে, বিশ্ব উষ্ণায়নের দৌলতে সাগর, মহাসাগরগুলির জলস্তর আগামী ১০০ বছরে তার প্রায় ৪০ গুণ উপরে উঠে আসবে। যা কার্যত, ডুবিয়ে দেবে প্রায় গোটা পৃথিবীকেই। অনিয়ন্ত্রিত উষ্ণায়নের জন্য পৃথিবীর গায়ের ‘জ্বর’ (তাপমাত্রা) বাড়বে এখনকার হিসেবের চেয়ে আরও এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। তাপমাত্রা বেড়ে যাবে আরও তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা মেরুর বরফ এতটাই গলিয়ে দেবে যে, সেই বরফ-গলা জল সমুদ্রের এখনকার জলস্তরকে আরও প্রায় ২০ ফুট উঁচুতে তুলে দেবে।

আমাদের সেই ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের অশনি সঙ্কেত মিলেছে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউনাইটেড নেশন্স এনভায়রনমেন্ট প্রজেক্ট বা ‘ইউএনইপি’)-র সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টে। ‘এমিশন্স গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৮’ শীর্ষক রাষ্ট্রপুঞ্জের ১১২ পাতার ওই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে গত ২৭ নভেম্বর।

সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ১০০ বছরে (১৮৯৭ থেকে ১৯৯৭) সমুদ্রের জলস্তর উঠে এসেছে ৭.১ ইঞ্চি বা ১৮ সেন্টিমিটার। বিভিন্ন উপগ্রহের পাঠানো তথ্যাদি জানাচ্ছে, সমুদ্রের জলস্তর বিশেষ করে উঠে এসেছে গত ২৪ বছরে। ১৯৯৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে সমুদ্রের জলস্তর উঠে এসেছে ৩ ইঞ্চি বা সাড়ে ৭ সেন্টিমিটার। তার মানে, আগের ৭৫ বছরের প্রায় অর্ধেক।

এও বলা হয়েছে, গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমিয়ে পৃথিবীর গায়ের জ্বর ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে না দেওয়ার জন্য ১৩ বছর আগে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যে লক্ষ্য়মাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, আমেরিকা ২০৩০ সালের মধ্যে তা ছুঁতে পারবে না।

জাতিসংঘের ওই রিপোর্ট যে ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের ছবি তুলে ধরেছে গবেষণা, উপগ্রহের পাঠানো ছবি ও তথ্য-পরিসংখ্যানের মাধ্যমে, তাতে পৃথিবীর গায়ের জ্বর যদি আরও ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে, তা হলে ২১০০ সালের মধ্যে, সেই অনিয়ন্ত্রিত উষ্ণায়নের জন্য সমুদ্রের জলস্তর উঠে আসবে একলাফে ১৬ ফুট বা ৫ মিটার। যার মানে, গত ১০০ বছরে সমুদ্রের জলস্তর যতটা উঠে এসেছিল, তার খুব কাছাকাছি। আর পৃথিবীর গায়ের জ্বর যদি আরও ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে, তা হলে ২১০০ সালের মধ্যে, সেই অনিয়ন্ত্রিত উষ্ণায়নের জন্য সমুদ্রের জলস্তর উঠে আসবে একলাফে ২০ ফুট বা ৬.০৯৬ মিটার। যার অর্থ, গত ১০০ বছরে উষ্ণায়নের জন্য যতটা উঠে এসেছে সমুদ্রের জলস্তর, আর ৮০ বছরের মধ্যে সেই সাগর, মহাসাগর তার ৪০ গুণ ফুলে-ফেঁপে উঠবে।

জাতিসংঘের রিপোর্ট জানিয়েছে, বিশ্বের এই অনিয়ন্ত্রিত উষ্ণায়নের জন্য দায়ী মূলত চীন, আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি ও ভারতের বড় ও মাঝারি শিল্পক্ষেত্র ও জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর যানবাহন। যা স্থলে, জলে, বাতাসে উদ্বেগজনক ভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইডের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস (জিএইচজি)-এর পরিমাণ।

তবে আগামী ১০০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা যাতে আরও দেড় থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস না বড়ে, তার জন্য ২০০৫ সালের প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে ১৯৪টি দেশকে যে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, চীন, আমেরিকার মতো বিশ্বের প্রথম সারির গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপাদক দেশগুলি আর ১২ বছরের মধ্যে (২০৩০) সেই লক্ষ্যমাত্রায় আদৌ পৌঁছতে পারবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্টই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে জাতিসংঘের ওই রিপোর্টে।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar