ad720-90

স্পর্শ ছাড়াই যন্ত্র চালু


যন্ত্রের নিেচ হাত রাখলেই তা শুকিয়ে দেয় যন্ত্র। আর তা সেন্সর থাকার কারণে। মডেল: লাবণ্য,  ছবি: সুমন ইউসুফঘরে বাতি জ্বালানোর কোনো সুইচ নেই। কিন্তু ঘরে ঢুকতেই জ্বলে উঠল বৈদ্যুতিক বাতি। জলের কলের নিচে হাত রাখতেই পানি ঝরতে থাকল। আবার হাত সরাতেই কল বন্ধ। এমন অনেক কিছুই এখন যন্ত্র নিজেই বুঝে নেয়। বাংলাদেশেও এমন সেন্সর লাগানো যন্ত্রপাতির ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। সেন্সর প্রযুক্তির যন্ত্র জীবনটাকে আরও সহজ করে দিচ্ছে।

লন্ডনের অক্সফোর্ড স্ট্রিটে বিবিসির অফিসের পাশের একটি খাবারের দোকানে ঢুকেছি রাতের খাবার খেতে। সময়টা ২০১৪ সালের মাঝামাঝি। বাইরে থেকে এসে হাত ধোয়ার জন্য প্রসাধন কক্ষে প্রবেশ করার আগে দেখি বাতির কোনো সুইচ নেই। ভাবলাম এ আবার কেমন ঘর, লাইট নেই! দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই দপ করে জ্বলে উঠল বাতি। এবার হাত ধোয়ার পালা। দেখলাম, এখানেও পানির ট্যাপ চালুর কোনো সুইচ নেই। হাত দিয়ে এখানে–সেখানে স্পর্শ করতেই হঠাৎ পানি পড়তে শুরু করল। বুঝতে কিছুটা দেরি হলেও পরে বুঝলাম, এখানে ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ প্রযুক্তি; যা স্পর্শ ছাড়াই চালু হয়। এসব যন্ত্র মানুষের হাঁটাচলা বা গতিবিধি শনাক্ত করতে পারে। আর স্পর্শ ছাড়াই চালু হয়ে যায়। এরপর নরওয়ে, স্পেন, তুরস্ক গিয়েছি। প্রতিটি দেশেই এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার দেখেছি।

আশার কথা হলো, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও বেশ কয়েক বছর ধরে এসব যন্ত্রের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। ধীরগতিতে ব্যবহার শুরু হলেও দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে এসব প্রযুক্তি।

ঘরে মানুষ এলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলে ওঠে বাতিপ্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এসব যন্ত্রের সুবিধা অনেক। যন্ত্রে লাগানো থাকে সেন্সর; যা মানুষের হাঁটাচলা শনাক্ত করতে পারে। আমরা অনেক সময় বেসিনে হাত ধুতে গিয়ে পানির কল বন্ধ করতে ভুলে যাই। ফলে পানি পড়তেই থাকে। কেউ দেখলে ভালো, না দেখলে অনবরত পানি পড়তেই থাকবে। এভাবে পানির অনেক অপচয় হয়। আবার একইভাবে ঘরের বাতি বন্ধ না করে বাইরে যাই। সারা দিন হয়তো বাসায় আর কেউই এল না। বিদ্যুতের অপচয় হতেই থাকে। এসব অপচয় রোধ করার জন্যই চালু হয়েছে স্পর্শ ছাড়া যন্ত্রের ব্যবহার। পানির সুইচ বা বাতির সুচই আপনি বন্ধ করতে ভুলে যেতেই পারেন। কিন্তু প্রয়োজন শেষে যন্ত্র আপনা–আপনিই বন্ধ হয়ে যাবে।

কয়েক বছর আগে গুলশানের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে দেখা গেল টয়লেটের ব্যবহার শেষে আপনা–আপনিই সেটি ফ্ল্যাশ হয়ে যাচ্ছে। অনেকে ফ্ল্যাশ না করে টয়লেট থেকে বের হয়ে যান। পরেরজন যখন আসেন, তখন বিব্রত বা বিরক্ত হন। এই ঝুটঝামেলা এড়াতে টয়লেটে ব্যবহার করা হয় এই প্রযুক্তি। এখন ব্যক্তিপর্যায়ে এমন যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে বলে জানালেন হাতিরপুলের জুম করপোরেশনের বিক্রয় নির্বাহী জামাল হোসেন। তাঁদের প্রতিষ্ঠান পানির কল, টয়লেট থেকে বের হয়ে হাত শুকানোর যন্ত্র, হাত ধোয়ার যন্ত্র আমদানি করে থাকে। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এসব যন্ত্রের বেশির ভাগই চীন থেকে আমদানি করেন। পানির কল হয় দুই ধরনের—সিঙ্গেল ও ডাবল। সিঙ্গেল পানির কল দিয়ে শুধু সরবরাহ করা পানি পড়ে। আর ডাবল কল গিজারের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এর একটি নল দিয়ে গরম পানি, আরেকটি দিয়ে ঠান্ডা পানি পড়ে। পানির কলের পানি পড়ার স্থানে হাত দিলেই পানি পড়া শুরু হয়। আবার হাত সরিয়ে নিলে পানি পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।

এ ছাড়া হাত শুকানোর যন্ত্র আছে কয়েক ধরনের। কোনোটি ছোট, কোনোটি মাঝারি আর কোনোটি আকারে কিছুটা বড়। যাঁর যে ধরনের আকার প্রয়োজন, সে আকারের কিনে নেন। টয়লেট থেকে বেরিয়ে ভেজা হাত যন্ত্রের সামনে ধরলেই বেরিয়ে আসে গরম বাতাস। আর তাতেই ভেজা হাত শুকিয়ে যাবে।

এ ছাড়া হাত ধোয়ার যন্ত্রে সেন্সর লাগানো আছে। হাত পেতে দিলে আপনা–আপনি তরল সাবান বেরিয়ে আসে। প্রয়োজনীয় সাবান নিয়ে হাত সরিয়ে নিলেই আবার যন্ত্র বন্ধ হয়ে যায়। এগুলোর পাশাপাশি ধোয়া বা আগুন ধরার বেশ কিছু যন্ত্র আছে। কোনো বাসা বা অফিসে ধোঁয়া উঠলে বা আগুন লাগলে এই যন্ত্র সেন্সর দিয়ে তা শনাক্ত করবে। শুধু তা–ই নয়, ফায়ার অ্যালার্ম দিয়ে মানুষকে সতর্কবার্তাও দেবে।

ঢাকার হাতিরপুলের বেঙ্গল এজেন্সিতে গিয়ে দেখা গেল, তারা পানির কলের পাশাপাশি স্মার্ট কমোড আমদানি করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মী মাহবুব আলম দেখালেন থাইল্যান্ডের কোটো ব্র্যান্ডের স্মার্ট কমোড। সেখানে অনেক অপশন। কমোডে বসলেই যন্ত্র চালু। বোতাম টিপলেই পানি পড়বে। উঠলেই আপনা–আপনিই ফ্ল্যাশ হবে। আবার এখান থেকে পাঠানো যাবে বার্তাও। দাম ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

রাজধানীতে কিছু কিছু শপিং মলে সেন্সর লাগানো দরজা ব্যবহৃত হচ্ছে। মানুষ এর সামনে এলেই খুলে যাবে দরজা। আবার নিজে নিজে বন্ধ হয়ে যাবে। দেশে সেন্সর দেওয়া লাইটের ব্যবহারও শুরু হয়েছে বসতবাড়ি বা অফিসে। চাইলে এ ধরনের সুইচও লাইটের সঙ্গে লাগানো যাবে।

সুপারস্টার গ্রুপ রুটস ব্র্যান্ডের একটি ইমার্জেন্সি লাইট বাজারে এনেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপারস্টার গ্রুপের রুটস ব্র্যান্ডের জ্যেষ্ঠ বিপণন নির্বাহী আরিফুল হক বলেন, রুটস ব্র্যান্ডের একটি লাইট আমরা বাজারে এনেছি। এটি ১০ ওয়াটের। এ ছাড়া ৫ ও ১৫ ওয়াটের আরও দুটি লাইট বাজারে আনা হচ্ছে। এসব লাইট বিদ্যুৎ গেলেও তিন ঘণ্টা পর্যন্ত আলো দেবে। এ ছাড়া বিশেষ একধরনের সুইচ আনবেন শিগগিরই। এই সুইচ রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে পরিচালনা করা যাবে। বাতি চালু বা বন্ধ করা যাবে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে। আরিফুল হক আরও জানালেন, শিগগিরই তাঁরা বাজারে সেন্সর লাইট আনবেন। এসব লাইটের কোনো সুইচ থাকে না। মানুষের যাওয়া–আসা হলে লাইট জ্বলবে। আবার চলাচল না থাকলে লাইট আপনা–আপনিই বন্ধ হয়ে যাবে।

চট্টগ্রামের হালি শহর থেকে ঢাকার হাতিরপুলে স্মার্ট পানির কল কিনতে এসেছিলেন ব্যবসায়ী রিয়াজ হোসেন। তিনি বলছিলেন, কাজের সুবাদে প্রায় সময় দেশের বাইরে যেতে হয়। আবার দেশের বাইরে থেকে অতিথি আসে তাঁর বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে। দেশের বাইরে স্মার্ট পানির কলের ব্যবহার তাঁকে মুগ্ধ করেছে। পানির অপচয় কমাতে এ ধরনের কল কিনতে এসেছেন তিনি।

বাজার ঘুরে: বাজারে বিভিন্ন ধরনের পানির স্মার্ট কল আছে। এসবের মান ও ব্র্যান্ডের ওপর দরদাম নির্ভর করে। এসব কল ১০ হাজার থেকে শুরু করে ২৪ হাজার টাকায় পাওয়া যাবে। এ ছাড়া হাত শুকানোর যন্ত্র ৪ থেকে ৬ হাজার টাকায় মিলবে। হ্যান্ড ওয়াস মিলবে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকায়।

 





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar