ad720-90

কোমর ও হাঁটু প্রতিস্থাপনে থ্রিডি প্রিন্টিং


থ্রিডি প্রিন্টিংকোমর ও হাঁটু প্রতিস্থাপন এখন অনেকটাই সহজ হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির উন্নয়ন। অকার্যকর হাঁটু বা নিতম্ব অপসারণ করে ধাতব বা প্লাস্টিকের কৃত্রিম হাঁটু বা নিতম্ব প্রতিস্থাপন করা যায়। কোমর ও হাঁটুর কৃত্রিম এই জয়েন্ট বা প্রতিস্থাপন আধুনিক চিকিৎসার অংশ। এ আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতির পেছনে রয়েছে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির অবদান।

সম্প্রতি ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, চিকিৎসা পরামর্শ প্রতিষ্ঠান ওহলারস অ্যাসোসিয়েটসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে মেডিকেল ও ডেন্টাল ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি খাতে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির ব্যবহার হয়েছে, যা থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে তৈরি পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ।

মেডিকেল খাতে ব্যবহৃত থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমে তৈরি উপকরণ করছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের মেডিকেল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্ট্রাইকার। তাদের বড় কারখানাটি আয়ারল্যান্ডের ক্যারিগটোহিলে।

স্ট্রাইকারের ওই কারখানা আধুনিক এক শিল্পভবনের মতোই। বাইরের থেকে দেখলে ভেতরের কর্মযজ্ঞের আভাস পাওয়া যায়। কারখানার বিশাল হলঘরে সারি সারি থ্রিডি প্রিন্টার বসানো। প্রতিটির আকার বড় আকারে ফ্রিজের সমান। এ যন্ত্রেই তৈরি করা হয় অস্থি প্রতিস্থাপনে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ। কয়েক ধাপে এসব উপকরণ তৈরি করা হয়।

প্রতিস্থাপন উপযোগী উপকরণ তৈরিতে যে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, তাকে ‘ডাইরেক্ট-মেটাল লেজার সিনটেরিং’ বলে। এ প্রক্রিয়ায় প্রিন্টার যে সফটওয়্যারে পরিচালিত হয়, তা ওই বস্তুর নকশার হাজারো ডিজিটাল টুকরো করে। প্রক্রিয়াটি শুরু হয় একটি বিশেষ টেবিলের ওপর ধাতব পাউডারের ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। এরপর একটি লেজার ওই বস্তুর প্রথম স্তর সৃষ্টি করে। সঠিক ধাঁচে পড়ার পর ওই পাউডার গলে যায়। এপর ওই গলিত পাউডার কঠিন হলে টেবিল নিচে নেমে যায় এবং আরেক প্রস্থ পাউডার ছড়িয়ে পড়ে। এরপর দ্বিতীয় স্তরের কাজ শুরু হয়। এভাবে ক্রমাগত প্রিন্ট হতে থাকে। যখন বস্তুটি তৈরি হয় তখন তা সরিয়ে পরিষ্কার করা হয়। এরপর চূড়ান্ত পরীক্ষা করা হয়। পরে অব্যবহৃত পাউডার রিসাইকেল করা হয়।

স্ট্রাইকারের ওই কারখানার উৎপাদন পদ্ধতি অন্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কিছুটা আলাদা। কারখানাটি বিশ্বের বৃহত্তম থ্রিডি প্রিন্টিং সেন্টার। বছরে হাজার হাজার প্রতিস্থাপন উপযোগী উপকরণ তৈরিতে সক্ষম এটি। ক্যারিগটোহিলের ওই কারখানায় যেসব উপকরণ তৈরি হচ্ছে, তাতে যে বিশেষ ফিচার থাকে তা প্রচলিত কাস্টিং অ্যান্ড মেশিনিং পদ্ধতিতে তৈরি করা যায় না। কারণ, থ্রিডি প্রিন্টিং পদ্ধতিতে কোনো বস্তু তৈরি করতে স্তরে স্তরে জটিল অভ্যন্তরীণ কাঠামো তৈরি করে নিতে হয়। এ কারখানায় প্রতিস্থাপনে ব্যবহৃত বিশেষ বহু রন্ধ্র পৃষ্ঠ প্রিন্ট করা হয়। ওই পৃষ্ঠ হাড়ের বৃদ্ধি উৎসাহিত করে এবং ঠিক জায়গায় বসানো থাকে। যখন রোবোটিক সার্জিক্যাল প্রক্রিয়ায় এসব উপকরণ ব্যবহার করা হয় তখন প্রতিস্থাপন সফল হয় বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির কারিগরি প্রধান রবার্ট কোহেন।

শরীরের ক্ষয়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত অস্থিসন্ধি প্রতিস্থাপনের ঘটনা অনেক পুরোনো। ১৮৯১ সালে জার্মানিতে প্রথম নিতম্ব প্রতিস্থাপনের ঘটনা ঘটেছিল। আইভরি ব্যবহার করে তৈরি বল ও সকেটের মাধ্যমে ওই প্রতিস্থাপন করা হয়। ১৯৩৮ সালে লন্ডনে ফিলিপ উইলস নামের এক সার্জন সম্পূর্ণ নিতম্ব প্রতিস্থাপনে সফল হন। রোগীর হাড়ের সঙ্গে স্টেইনলেস স্টিল স্ক্রু দিয়ে আটকে দেন তিনি। এরপর থেকে নিয়মিত এ ঘটনা ঘটে। এখন স্টিলের পরিবর্তে কোবাল্ট ও ক্রোমিয়ামের মিশ্রণের সঙ্গে টাইটানিয়াম ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া অপারেশন প্রক্রিয়া ও যন্ত্র অনেক উন্নত ব্যবহৃত হচ্ছে এখন। তারপরও জটিলতা থেকে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি জটিলতা হচ্ছে প্রতিস্থাপনের পর তা সরে যাওয়া। অনেক সময় নরম কোষ ঠিকমতো সেরে না ওঠায় সকেট থেকে বল সরে আসে। প্রতিস্থাপনের বিষয়টি ঢিলা হয়ে যাওয়াটাও একটা সমস্যা। এতে ব্যথা হয় ও অস্ত্রোপচার করা লাগে। এ ধরনের সমস্যার সমাধান হয়ে এসেছে উন্নত থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar