ad720-90

ফেসঅ্যাপ এখন তদন্তের মুখে


ফেসঅ্যাপফেসঅ্যাপ নামের একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের সাহায্যে চেহারার ধরন পাল্টানোর বিষয়টি নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে। অনেকেই নীতিমালা না পড়ে অ্যাপ ডাউলোড করে তা দিয়ে ‘বুড়ো ছবি’ বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করছেন। কিন্তু অ্যাপটির বিরুদ্ধে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেসঅ্যাপ নিয়ে এফবিআইকে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন সিনেটর চাক শুমার। টুইটারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে শুমার লিখেছেন, মার্কিন নাগরিকদের তথ্য বিদেশি শক্তির কাছে চলে যেতে পারে।

শুমার ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) ও ফেডারেল ট্রেড কমিশনের (এফটিসি) কাছে চিঠি দিয়েছেন। এতে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে লিখেছেন, রাশিয়ার সরকার আপলোড করা ব্যক্তিগত তথ্যে ঢুকতে পারে। তাঁর মতোই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটি (ডিএনসি)।

বার্তা সংস্থা সিএনএনকে ডিএনসির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বব লর্ড বলেছেন, অ্যাপটি ঘিরে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সামান্য একটি সেলফি আপলোড করতে গেলেও এটি ছবির পুরো অ্যাকসেস নিয়ে নেয়। তিনি সবাইকে দ্রুত অ্যাপটি মুছে ফেলার পরামর্শ দেন। ডিএনসির পক্ষ থেকে অবশ্য সতর্ক থাকার কারণ রয়েছে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে তাদের কম্পিউটার নেটওয়ার্কে আক্রমণ হয়েছিল। যাতে প্রচুর তথ্য বেহাত হয়। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলেন, এর পেছনে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার হাত ছিল।

ফেসঅ্যাপ নিয়ে যা হচ্ছে
বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, সবাই এখন ফেসঅ্যাপ নিয়ে কথা বলছেন। অ্যাপটি ছবি সম্পাদনা করে চেহারায় তারুণ্য বা বয়সের ভাঁজ দেখাতে পারে। নিজের ছবির ক্ষেত্রে এ অভিজ্ঞতা কেমন হয়, তা দেখতেই অনেকে ফেসঅ্যাপের বুড়ো ফিল্টার ব্যবহার করছেন। ফেসঅ্যাপ কিন্তু নতুন কোনো অ্যাপ্লিকেশন নয়। ২০১৭ সালেই এ অ্যাপ বিভিন্ন ফিল্টারের কারণে ভাইরাল হয়েছিল। অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস প্ল্যাটফর্মে চালু আছে এটি। নিউরাল ফেস ট্রান্সফরমেশনস অ্যাপ হিসেবে তৈরি করেছে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওয়্যারলেস ল্যাব।
অ্যাপটির মাধ্যমে মানুষের মুখের বিভিন্ন রূপ বদল করার সুবিধা ওই সময় থেকেই চালু ছিল। এটি অনেকটাই বাস্তবসম্মত ছবি তৈরি করতে পারছে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটি চ্যালেঞ্জ আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। কার চেহারা বেশি মানানসই, তা দেখাতেই বুড়ো ছবি আপলোডের এ চ্যালেঞ্জ নেওয়া হচ্ছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে ছবি সম্পাদনার কাজ করছে জনপ্রিয় অ্যাপটি। স্মার্টফোন থেকে যেকোনো ছবি নিজেদের সার্ভারে আপলোড করে এই ছবি এডিটিংয়ের কাজ করে ফেসঅ্যাপ। অ্যাপটির বিরুদ্ধে উদ্বেগ তিনটি:
১. এটি রাশিয়ার কোম্পানি ওয়্যারলেস ল্যাবের তৈরি।
২. এটি স্থানীয়ভাবে ছবি প্রক্রিয়াকরণ করে না। এটি ক্লাউডে ছবি আপলোড করে।
৩. আইওএস প্ল্যাটফর্মে ক্যামেরা রোলে অনুমতি দেওয়া না হলেও ছবি আপলোড করে অ্যাপটি।

ফেসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
সমালোচনার জবাবে ফেসঅ্যাপ নির্মাতারা বলছেন, অ্যাপ ব্যবহারকারী সম্পাদনার জন্য যে ছবিটি নির্বাচন করেন, তার বাইরে কোনো ছবি স্থানান্তর করে না ফেসঅ্যাপ। তারা কোনো থার্ড পার্টির কাছে তথ্য বিনিময় বা বিক্রি করে না। তারা কোনো তথ্য রাশিয়ায় পাঠায় না। ছবি আপলোড করার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তারা তা মুছে ফেলে। ক্লাউডে ছবি রাখার জন্য গুগল ও আমাজনের ক্লাউড সার্ভার ব্যবহার করে। পেইড সাবসক্রিপশন মডেলের মাধ্যমে তারা অর্থ আয় করে। তারা কোনো নিয়মবহির্ভূত কাজ করছে না।
কিন্তু কোম্পানিটির এসব বক্তব্য সত্ত্বেও এফবিআই ও মার্কিন ফেডারেল ট্রেড কমিশনকে (এফটিসি) ফেসঅ্যাপের বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলেছেন সিনেটর শুমার। চিঠিতে ওই সিনেটর বলেছেন, ‘যেসব তথ্য জড়ো করা হচ্ছে, সেগুলোর সুরক্ষার পাশাপাশি কারা এ তথ্যভান্ডারে প্রবেশ করতে পারবে, সে বিষয়ে ব্যবহারকারীরা সচেতন কি না, এ উভয় বিষয় নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’ ডেমোক্রেট পার্টির জাতীয় কমিটি ২০২০ সালের নির্বাচনে তাদের দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের ও তাদের প্রচারণা কর্মকর্তাদের ফেসঅ্যাপ ব্যবহার না করার জন্য সতর্ক করার পর শুমার এ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন বলে মার্কিন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে।

বাড়ছে ক্লোন অ্যাপের ব্যবহার
অ্যাপ বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান সেন্সর টাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ দিনে ১ কোটি ৩০ লাখ বার ডাউনলোড হয়েছে ফেসঅ্যাপ অ্যাপ্লিকেশনটি। ফেসঅ্যাপের জনপ্রিয়তা দেখে এর বেশ কিছু ‘ক্লোন’ বা নকল অ্যাপও চলে এসেছে। ‘ক্লোন’ অ্যাপগুলোর জনপ্রিয়তাও বাড়ছে ব্যাপক হারে। অ্যাপ স্টোর ও গুগল প্লেস্টোরে ফ্রি ও পেইড অ্যাপের শীর্ষ তালিকায় অনেক চেহারা পরিবর্তনের অ্যাপ জায়গা করে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এগেইনবুথ, ফেসঅ্যাপ! ওল্ডিফাইয়ের ডাউনলোড বেড়েছে ব্যাপক হারে।

আরও পড়ুন:
ফেসবুকে বুড়ো চেহারা দেওয়া বিপদ না তো?
চেহারা বদলে দিচ্ছে ফেসঅ্যাপ
‘সারাহাহ’ নিয়ে কেন এত মাতামাতি? 





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar