ad720-90

শৃঙ্খলায় আসছে ঢাকা মেগা সিটি


ফাইল ছবি

বঙ্গ-নিউজঃ শৃঙ্খলার মধ্যে আনা হচ্ছে দেশের মেগা সিটিকে। পরিকল্পিত নগরায়ণে বিগত সময়ে জারি করা পৃথক সব নীতিমালা একত্রিত করে যুগোপযোগী ‘জাতীয় নগরায়ণ নীতিমালা ২০১৯’ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। নীতিমালা অনুযায়ী এখন থেকে মেগা সিটিতে আর শিল্প ও অন্যান্য প্রধান খাতে বড় বিনিয়োগ করা যাবে না। এর পরিবর্তে মেগা সিটির বাইরে কোনো নগর ও অঞ্চলে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হবে। দরিদ্রদের জন্য বিশেষ অঞ্চল, নগরের স্থানীয় প্রশাসনকে শক্তিশালীকরণ, মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নগরের উন্নয়ন, ভূমি ব্যবহারে যথোপযোগী নির্দেশনা, যানজট নিরসনে গণপরিবহনের উন্নয়ন ও আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়নে নানা ধরনের পরিকল্পনা ঠাঁই পেয়েছে এই নীতিমালায়। ইতিমধ্যে নগর নীতিমালার একটি খসড়া তৈরি করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। শিগগিরই এটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে মন্ত্রিসভার বৈঠকে। সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘নগরগুলোকে পরিকল্পনামাফিক গড়ে তোলার তাগিদ থেকেই এ নীতিমালা করা হচ্ছে। ঢাকার দিকে তাকালেই বোঝা যায় পরিকল্পিত নগরের প্রয়োজন কতটুকু। এটি আগেই হওয়া দরকার ছিল। যেহেতু হয়নি, তাই এর সঙ্গে জড়িত সবার মতামত নিয়ে একটি নীতিমালা করা হচ্ছে।’

স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের জাতীয় উন্নয়নে শহর ও নগর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে নগর জনগোষ্ঠী দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ২৮ ভাগ। প্রতিনিয়ত নগরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অব্যাহতভাবে দ্রুত নগরায়ণে সৃষ্ট অবকাঠামো ও পরিসেবার বিপুল চাপ এবং টেকসই নগরায়ণের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও প্রতিষ্ঠানিক দুর্বলতা সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া বর্ধিত এ জনগোষ্ঠীর জন্য আবাসন, পানি, পয়ঃনিস্কাশন, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিদ্যুৎ, যোগাযোগসহ নগর সুবিধাদিও বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমতাবস্থায় পরিকল্পিত নগরায়ণ না হলে এ চ্যালেঞ্জ মোকবেলা সম্ভব হবে না সরকারের পক্ষে। এমন উপলব্ধি থেকে সরকার পরিকল্পিতভাবে নগরায়ণে নগর নীতিমালা তৈরি করছে।

সংশ্নিষ্টদের ভাষ্য, এ নীতিমালা বাস্তবায়ন করা হলে নগরায়ণের ইতিবাচক দিকগুলো বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্জিত হবে নগরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও। ভবিষ্যতে নগরবাসীকে কার্যকর নগর সুবিধাও দেওয়া হবে যথাযথভাবে। এতে মাস্টারপ্ল্যান বা মহাপরিকল্পনাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

নীতিমালার ভবিষ্যৎ রূপকল্প অংশে বলা হয়েছে- নীতিমালা কার্যকর করার পর নগর ও শহরগুলো বিকেন্দ্রীকৃত ও কার্যকর স্থানীয় সরকার দ্বারা পরিচালিত হবে, যেখানে সুশীল সমাজ ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীসহ স্থানীয় নগরবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে। সুষ্ঠু নগরায়ণ নীতিমালা প্রণয়নের ফলে প্রধান প্রধান নগরে অবৈধ বস্তির সংখ্যাও কমবে বলে মত দিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা।

নীতিমালার ‘নগরের ক্রমবিন্যাস’ অংশে বলা হয়েছে- অধিকতর ভারসাম্যপূর্ণ ও বিকেন্দ্রীকৃত নগর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে জাতীয় নগর কৌশল প্রণীত হবে। জাতীয় নগর নীতিমালার আওতায় সর্বাগ্রে একটি নগর ক্রমবিন্যাস তৈরি করা হবে, সব নগর ও শহরের অবস্থানকে সুনির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করা হবে সেখানে। জাতীয় নগর ক্রমবিন্যাসের জন্য ছয়টি ধাপে নগরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে জনসংখ্যা একশ’ লাখ বা তদূর্ধ্বকে মেগা সিটি, ৫ লাখ থেকে একশ’ লাখ অনূর্ধ্ব জনসংখ্যার এলাকাকে মহানগর বা মেট্রোপলিটন সিটি, দুই লাখ থেকে অনূর্ধ্ব ৫ লাখ জনসংখ্যার এলাকাকে আঞ্চলিক শহর বা শিল্পশহর বলা হবে। এ ছাড়া জনসংখ্যা পঞ্চাশ হাজার থেকে অনূর্ধ্ব দুই লাখ পর্যন্ত মাঝারি শহর বা জেলা শহর, এরপর ক্রমান্বয়ে উপজেলা শহর, ছোট শহর ও কমপ্যাক্ট টাউন বা বিকাশমান অনুকেন্দ্র বলা হয়েছে।

নীতিমালা অনুযায়ী, মেগা সিটিতে অর্থাৎ রাজধানীতে শিল্প খাতসহ অন্যান্য বড় খাতে বিনিয়োগ করা যাবে না আর। মহানগর বা অন্যান্য আঞ্চলিক শহরে শিল্প খাতে বিনিয়োগ করা যাবে। খসড়ায় ‘মাস্টার প্ল্যান’ তথা কৌশলগত পরিকল্পনার জন্য সব উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ/সিটি করপোরেশন/পৌরসভা ব্যবস্থা নেবে। যতদিন সংশ্নিষ্ট স্থানীয় সংস্থা নিজে পরিকল্পনা তৈরি করতে না পারে, ততদিন কেন্দ্রীয় সংস্থা যেমন নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর বা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে এ কাজ সম্পাদন করবে। সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে মাস্টার প্ল্যানের আওতাভুক্ত স্কিমগুলোর মধ্যে থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্কিম গ্রহণ করবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, নগরের মধ্যবিত্ত ও দরিদ্রদের আবাসনে ভূমি ও অর্থ সরবরাহে এবং আবাসনের যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকার সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। অতিদরিদ্র, নিম্ন আয়ের মানুষ এবং গৃহহীনদের জন্য আবাসন প্রকল্প গ্রহণ করবে সরকার। এ ছাড়া দরিদ্রদের জন্য বস্তি উন্নয়নের কাজ করবে। নীতিমালায় বলা হয়েছে- প্রয়োজনীয় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে বস্তি উচ্ছেদ করা যাবে না। বস্তিগুলোতে রক্ষাযোগ্য ও অযোগ্য তালিকা তৈরি করবে সরকার। যোগাযোগ অযোগ্য বস্তিগুলো উচ্ছেদ করা হবে। কিন্তু তার আগে বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন করতে হবে। নীতিমালায় নগর পরিবহনের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নগরে চলাফেরায় ব্যক্তি মোটরযানের পরিবর্তে গণপরিবহনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। নগরের রাস্তায় পথচারীদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের কথা বলা হয়েছে এ নীতিমালায়। অগ্রাধিকার অনুযায়ী প্রতিটি সড়কে পর্যাপ্ত ফুটপাত রাখার সুযোগ রাখা হয়েছে হাঁটার জন্য। এ ক্ষেত্রে রাস্তার পাশে অবৈধ দখলদারিত্ব উচ্ছেদের কথা বলা হয়েছে। ফুটপাতে ব্যবসায়ীদের জন্য নির্দিষ্ট একটি অঞ্চল তৈরি করে ব্যবসার সুযোগের কথা বলা হয়েছে এ নীতিমালায়। এ ছাড়া রাস্তায় প্রতিটি পরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে পৃথক লেন নির্দিষ্ট করার কথা বলা হয়েছে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রতিটি শহরে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে খেলার মাঠ, পার্ক এবং বিনোদেনের জন্য জায়গা রাখতে হবে। পাশাপাশি কবরস্থান ও শ্মশানঘাটের জন্য রাখতে হবে আলাদা জায়গা। নগরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সব স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর ব্যাপারেও জোর দেওয়া হয়েছে নীতিমালায়। নগরের যুব সমাজের উন্নয়নেও রয়েছে নানা ধরনের পরিকল্পনা। যুবসমাজকে আত্মনির্ভরশীল করতে সহজলভ্য ঋণ, তাদের আবাসনে ব্যচেলর হোস্টেল নির্মাণ, দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের কথা বলা হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যম্যে। এ ছাড়া নগরের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি গঠনের কথাও বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০:০৫:৩১   ৭ বার পঠিত   #  #  #





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar