ad720-90

কাজের সঙ্গে পরিবারের সঙ্গেও


কাজী মামুন। ছবি: খালেদ সরকারঅবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী বাবা ইব্রাহিম খলিল, গৃহিণী মা মমতাজ বেগম, চাকরিজীবী স্ত্রী মুন সাদিয়া এবং মেয়ে মানহাকে নিয়ে কাজী মামুনের ছোট পরিবার। বাসায় বসেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করেন। বাকিটা সময় পরিবারের জন্য। কাজী মামুন কাজ করেন আউটসোর্সিংয়ের অনলাইন বাজার (মার্কেটপ্লেস) আপওয়ার্কে। কাজ করেন ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট নিয়ে। মাসে তিন হাজার ডলারের মতো আয় হয় মামুনের।

গল্পের শুরু আট বছর আগে

আজকের সফল ফ্রিল্যান্সার মামুনের একটা গল্প আছে। ২০১১ সালে তিনি যখন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশে (এআইইউবি) কম্পিউটারবিজ্ঞানে পড়ছেন, তখন মামুনের বাবা আক্রান্ত হন মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগে। বাবা অসুস্থ হওয়ার পর পরিবারের চলাটা একটু কষ্টকর হয়ে পড়ল। কিছু সম্পত্তি বিক্রি করে পরিস্থিত সামাল দিতে হয়। মামুনের লক্ষ্য ছিল যত দ্রুত সম্ভব চাকরি বা রোজগার শুরু করা।

২০১৩ সালে মামুনের স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনা শেষ হলে বন্ধুরা মিলে ছোটখাটো একটা ব্যবসা করার চেষ্টা করেন। সেটা হয়ে উঠল না। তখন শোনেন ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের কথা। কম্পিউটারবিজ্ঞানে পড়ার কারণে বেশ কিছু ব্যাপারে প্রাথমিক ধারণা ছিল আগে থেকেই। তবে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে মামুনের মনে হলো তিনি প্রোগ্রামিং বা ওয়েব ডেভেলপমেন্টের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নন। ভাবলেন গ্রাফিক ডিজাইন মামুনের জন্য ভালো হতে পারে। কিছু কাজ দিয়ে পোর্টফোলিও সাজিয়ে ওডেক্স (এখন আপওয়ার্ক) ও ইল্যান্সে প্রোফাইল খুললেন মামুন।

মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমে বেশ কিছু বিড করে গেলাম গৎবাঁধা নিয়মে, কিন্তু সাড়া পেলাম না। পাশাপাশি চাকরিও খুঁজতে লাগলাম। ডাক পড়লে চলে যেতাম চাকরির সাক্ষাৎকার দিতে।’ এভাবে পেয়েও গেলেন একটা চাকরি, ছোটখাটো একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে।

মামুন বলে যান, ‘হঠাৎ একদিন আপওয়ার্কে ঢুকে (লগ–ইন) করে দেখলাম কেউ একজন ইনভাইটেশন পাঠিয়েছে কাজ করার জন্য। পরীক্ষামূলকভাবে কিছু কাজ করতে বলেছে। সেটার জন্য পারিশ্রমিকও (পেমেন্ট) দেবে। আমি তো বেশ খুশি। শুরু করে দিলাম কাজ।’ মামুনের পাঠানো দুটি নমুনা গ্রাফিকস দেখে ওরা কাজ দিল। কাজটা ছিল উইকিহাউয়ের জন্য। তাদের প্রতিনিয়ত হাজার হাজার নির্দেশনা–সম্পর্কিত গ্রাফিকসের প্রয়োজন ছিল। মামুন করতে থাকলেন। প্রতিটি কাজের জন্য দুই ডলার করে পেতে থাকলেন। অভিজ্ঞদের থেকে অনেক কম। কিন্তু শুরু হিসেবে মামুনের জন্য বেশ ভালো।

এরপর এগিয়ে চলা

এভাবে আপওয়ার্ক আর ইল্যান্সে প্রায় ছয়-সাত মাস কাজ করেন মামুন। তবে চাকরি ও ফ্রিল্যান্সিং—দুটো একসঙ্গে করায় কোনোটাই খুব ভালো হচ্ছিল না। চাকরিতে প্রায় দেড় বছর কেটে গেল মামুনের। এর মধ্যে বিয়েও করে ফেলেন।

ঝুঁকি নিলেন মামুন। চাকরি ছেড়ে আবার ফ্রিল্যান্সিং করতে শুরু করলেন। মামুনের স্ত্রী চাকরি করতেন বলে কিছুটা সহায়তা ছিল। তবে ঢাকা শহরে চার–পাঁচজনের একটা পরিবার চালানোর জন্য ওই সময় একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ আয় না হলে চলা খুবই কঠিন ছিল মামুনের।

পরিবারের নতুন অতিথি আসার পর মামুন বুঝতে পারলেন, ‘চাকরি নয়, এমন কিছু করতে হবে, যা করে আমি মেয়েকে সময় দিতে পারব।’ দিনরাত ফ্রিল্যান্সিং শুরু হলো মামুনের।

মামুনের আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। নিজে কাজ করার পাশাপাশি চারপাশের মানুষ যাঁরা আউটসোর্সিং খাতে কাজ করতে চান, তাঁদের সাহায্য করেন। মামুন আপওয়ার্ক বাংলাদেশ গ্রুপের একজন অ্যাডমিন।

নতুনদের জন্য মামুনের পরামর্শ

১. মূল দক্ষতা তৈরি করা, যা নিয়ে আপনি কাজ করবেন (যেমন: গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন ইত্যাদি)।
২. ইংরেজিতে কথা বলা ও লেখায় দক্ষতা।
৩. গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ।
৪. পেশাদারত্ব।

 





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar