ad720-90

শিক্ষার্থীদের তৈরি গেম ও অ্যাপ


বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ছবি: সংগৃহীতড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটির কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পড়েন মহিউদ্দিন তারেক। পড়ার বিষয়টা যেহেতু কম্পিউটার, পড়ালেখার পাশাপাশি এ–সংক্রান্ত কিছু কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের ইচ্ছে ছিল তাঁর। তারেক বলছিলেন, ‘এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে জানলাম, সরকারিভাবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাপ বানানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আমারও অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরি নিয়ে কাজ করার আগ্রহ ছিল। তাই একদিন নাম নিবন্ধন করে ফেললাম।’ 

সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের যেই প্রকল্পটির কথা মহিউদ্দিন তারেক বলছিলেন, তার নাম ‘মোবাইল গেম ও অ্যাপ্লিকেশনের দক্ষতা উন্নয়ন’। প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন পর্যন্ত এই তরুণ প্রায় ৪০টি অ্যাপ তৈরি করেছেন। কাজ করেছেন দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য। আয়ও হয়েছে বেশ। তারেক বলছিলেন, ‘কুইজের একটা অ্যাপ বানিয়েছিলাম। গুগল প্লে স্টোরে সেটা এখন পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি ডাউনলোড হয়েছে। এই অ্যাপ থেকে আয় হয়েছে প্রায় ২০০ ডলার। তা ছাড়া গ্রাহকের জন্য ক্রিপ্টো কারেন্সির ওপর একটা অ্যাপ বানিয়েছিলাম। সেটা প্রায় ৫ হাজার ডাউনলোড হয়েছে।’ নিজের পড়ালেখার খরচ এখন তিনি নিজেই বহন করেন। অ্যাপ নির্মাণে আরও দক্ষ হওয়ার পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে তারেকের। 

সরকারি হিসাব বলছে, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচির মাধ্যমে ১৬ হাজার ১০০ জন তরুণকে ‘মোবাইল গেম ও অ্যাপ্লিকেশনের দক্ষতা উন্নয়ন’ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। দেশজুড়ে এই প্রশিক্ষণের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অনেক শিক্ষার্থীও অ্যাপ নির্মাণে আগ্রহী হয়েছেন। আগ্রহী এমন কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম আমরা। জানতে চেয়েছি, এই দক্ষতা তাঁদের কীভাবে সাহায্য করছে। 

ঢাকার সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির ছাত্র মো. তৌহিদুল ইসলাম জানালেন, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ বানানো সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণাই ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের খবর পেয়ে চার মাস হাতেকলমে কাজ শিখেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত তৈরি করেছেন তিনটি অ্যাপ। তবে অ্যাপের ধারণাগুলো বেশ মজার। তৌহিদুল বলছিলেন, ‘আমার বানানো অ্যাপগুলোর মধ্যে একটি পাওয়া যাবে গুগল প্লে স্টোরে। নাম—নকশীকাঁথার মাঠ। অ্যাপটি ১ হাজার ডাউনলোড হয়েছে। বাকি দুটি অ্যাপ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর তৈরি। একটির নাম ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্স। এটি গুগল অ্যাসিস্ট্যান্সের মতোই। তবে এই অ্যাপ বাংলা ভাষাও বুঝতে পারে। আমার বানানো আরেকটা অ্যাপের মাধ্যমে ছবিকে লেখায় রূপান্তর করা যায়।’ এসব দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তৌহিদুল একটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে চাকরিও করছেন। 

পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি করছেন খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী কারিবা ইয়াসমিনও। মুঠোফোনে কথা হলো তাঁর সঙ্গে। কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশলের এই ছাত্রী শুরুতে অ্যাপ নির্মাণ সম্পর্কে গুগল জিডিজি গ্রুপের একটি প্রাথমিক প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিলেন। পরে ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর মোবাইল গেম অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশন’ প্রকল্পের মাধ্যমে শেখাটা আরও পূর্ণতা পায়। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি অ্যাপ বানিয়েছেন কারিবা। তবে গুগল প্লে স্টোরে এখনো দেওয়া হয়নি। কিছুদিন আগে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন তিনি। 

কী ধরনের অ্যাপ নিয়ে কাজ করছেন? জানতে চাইলে কারিবা তাঁর তৈরি একটি অ্যাপের কথা বললেন, ‘মোবাইলের চার্জ কম থাকলে অনেক সময় ফ্ল্যাশ লাইট জ্বলে না। আমি একটা অ্যাপ তৈরি করেছি, যার মাধ্যমে জরুরি পরিস্থিতিতে মুহূর্তেই লাইট অন হয়ে যাবে। মেসেজ আদান-প্রদানের একটা অ্যাপও বানিয়েছি। এটা মূলত কমিউনিটিভিত্তিক। একটা জনগোষ্ঠীর মানুষ এই অ্যাপের মাধ্যমে পরস্পর যুক্ত থাকতে পারবে।’ 

আজকাল স্মার্ট হোমের নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে যখন-তখন খাবার অর্ডার করা, সবই সম্ভব হচ্ছে অ্যাপের মাধ্যমে। সামনের দিনগুলোতে হয়তো এর গুরুত্ব আরও বাড়বে। পাশাপাশি, বিশ্বজুড়ে মোবাইল গেমেরও একটা বড় বাজার তৈরি হয়েছে। এই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই ‘মোবাইল গেম ও অ্যাপ্লিকেশনের দক্ষতা উন্নয়ন’ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। 

প্রকল্পটির অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রামার সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘মোবাইল অ্যাপ ও গেমের বিশ্ববাজারে আমরা আমাদের দেশের তরুণদের পৌঁছে দিতে চাই। এরই মধ্যে অনেকের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। অনলাইনে মূল্যায়নের মাধ্যমে পাঁচ মাসের জন্য ৬২৫ জনের প্রশিক্ষণ এখনো চলছে। সারা বাংলাদেশ থেকে এই ৬২৫ জনকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। যেন তারা আরও ভালো কিছু করে। এ বছর আমরা ১০ হাজার তরুণকে প্রশিক্ষণ দেব।’ তিনি জানালেন, দেশের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। সরোয়ার বলেন, ‘সারা দেশে আমরা প্রায় ৪০টি ল্যাব তৈরি করেছি, যেখানে ২০ জন করে কাজ করতে পারবে। এখন ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে।’ প্রশিক্ষণ সম্পর্কে আরও জানতে চোখ রাখতে পারেন প্রকল্পের ফেসবুক পেজে: 

facebook.com/MobileSkill/





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar