ad720-90

বয়সের চাকা উল্টো ঘুরবে


বার্ধক্য রুখে দেওয়ার স্বপ্ন মানুষের অনেক দিনের। সে স্বপ্নের পথে আরেকটি সফল পদক্ষেপ মানুষের। ছবি: সংগৃহীতবাড়লে বয়স কত রকম যন্ত্রণাই তো বাসা বাঁধে শরীরে। শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রদাহজনিত সমস্যা থেকে শুরু করে ডায়াবেটিসসহ নানা রকম রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে। কলকবজায় জং ধরে। আজকের মানুষ অনেক কিছু জয় করতে পারলেও এখনো বয়স তাকে চোখ রাঙায়। কিন্তু এই চোখরাঙানি আর বোধ হয় চলবে না। কারণ, বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এক আণবিক চাবির (মলিকিউলার সুইচ) খোঁজ পেয়েছেন, যার মাধ্যমে এই বয়সের চাকাটি থমকে দেওয়া যাবে, এমনকি এটি উল্টো ঘোরানোটাও অসম্ভব নয়।

বিজ্ঞানীদের নতুন আবিষ্কারটি সম্পর্কে জানার আগে, বোঝা দরকার বয়স হওয়া বা ‘এজিং’ মানে কী। শরীরের বয়স কখন বাড়ে? প্রাণীদের জীবনকালের পুরোটি জুড়েই শরীরে কোষের জন্ম-মৃত্যু চলতে থাকে। নতুন জন্ম নেওয়া কোষের সংখ্যা যখন মারা যাওয়া কোষের তুলনায় অনেক বেশি থাকে, তখনই ওই প্রাণীর শরীর আকারে, শারীরিক শক্তিতে বাড়তে থাকে। একটা সময় এই অনুপাত বদলে যায়। অর্থাৎ, মৃত কোষের সংখ্যা বেড়ে যায়। এর অর্থ হলো, নানা ক্রিয়ায় শরীর যে পরিমাণ কোষ হারাচ্ছে, তার আর ক্ষতিপূরণ হচ্ছে না। এটিই মূলত বার্ধক্যের দিকে নিয়ে যায়। এই দশায় শরীরের প্রতিরক্ষা দপ্তরও ক্ষতির শিকার হয়। এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাঁরা শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে এমন আণবিক চাবিটি খুঁজে পেয়েছেন। এটি ব্যবহার করে কোষের প্রদাহজনিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা যাবে। একই সঙ্গে বার্ধক্যজনিত নানা সংকট মোকাবিলা করা যাবে। অর্থাৎ কোষের মৃত্যু কমিয়ে আনা যাবে। আর এটি সম্ভব হলে শরীরে কোষের জন্ম-মৃত্যুর মধ্যে ভারসাম্য আনা সম্ভব হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের এক দল বিজ্ঞানী সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে দাবি করেন, তাঁরা শরীরের আণবিক চাবিটি শনাক্ত করতে পেরেছেন। শরীরের দীর্ঘ মেয়াদি প্রদাহ, সে–সম্পর্কিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত এই আণবিক চাবি। ৬ ফেব্রুয়ারি এ–সম্পর্কিত গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় সেল মেটাবলিজম জার্নালে। ওই গবেষণা নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, এর মাধ্যমে বয়সজনিত নানা সংকট সমাধানের পাশাপাশি বার্ধক্য থামিয়ে দেওয়া, এমনকি বয়সের চাকা উল্টো ঘুরিয়ে দেওয়াও সম্ভব হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেটাবলিক বায়োলজি, নিউট্রিশনাল সায়েন্সেস অ্যান্ড টক্সিকোলজির সহযোগী অধ্যাপক ও অন্যতম গবেষক ড্যানিকা চ্যান এ বিষয়ে গবেষণা পত্রিকা সায়েন্সডেইলিকে বলেন, ‘বার্ধক্যের কারণ, এর ফলাফলসহ নানা দিক বুঝতে আমরা খুবই আগ্রহী। এর আগে আমরাই গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছি যে বয়স্ক স্টেম সেলকে নবযৌবন দেওয়া সম্ভব। এখন আমাদের মূল কৌতূহল হলো, বয়সের চাকা ঠিক কতটা উল্টো ঘোরানো যায়? এরই মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে আমরা বেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি পেয়েছি।’

গবেষক দল দেখে, শরীরের ঝুঁকি শনাক্ত ও সম্ভাব্য প্রদাহের বিরুদ্ধে সাড়া দেওয়ার কাজটি যে প্রোটিন করে থাকে, তা হলো এনএলআরপি-থ্রি ইনফ্ল্যামাসোম। এই প্রোটিনটি কখনো কখনো অতি সক্রিয় হওয়ার কারণে নানা ধরনের বিপত্তি তৈরি হয়। এর মধ্যে স্মৃতিভ্রংশ, ডায়াবেটিস, ক্যানসারসহ নানা মারাত্মক রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য। এই প্রোটিন থেকে বিশেষ একধরনের অণুকে সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে প্রোটিনটিকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা সম্ভব। গবেষক দল এই বিশেষ অণু অপসারণের কাজটি সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করে। যে প্রক্রিয়ায় কাজটি করা হয়, তা হলো ডিএসিটাইলেশন।

প্রশ্ন হলো, বড় কোনো প্রদাহের সংকট তৈরি হলে, তখন প্রয়োজনীয় এ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অনুপস্থিতি তো সংকট বাড়িয়ে তুলবে। এর উত্তরও দিয়েছেন গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে এসিটাইলেশন করা হবে। অর্থাৎ, সুইচটি অন করা হবে। প্রয়োজনে আবার তা বন্ধ করা হবে। অর্থাৎ শরীরের বিশেষ এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বা পাহারাদার হিসেবে কাজ করা প্রোটিনটির সক্রিয়তা-নিষ্ক্রিয়তার সিদ্ধান্ত এখন থেকে মানুষই নিতে পারবে।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar