ad720-90

টিয়া পাখিও গণিত জানে


পথে-ঘাটে চলতে–ফিরতে কখনো কখনো কোনো জটলার মধ্যে দেখা যায়, টিয়া পাখি দিয়ে ভাগ্যগণনার ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন কেউ। কতগুলো কাগজের টুকরা থেকে একটি টুকরা টেনে নেয় পাখিটি। তাতে যা লেখা থাকে, সেটাই ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে হাজির করা হয়। কিন্তু গবেষকেরা বলছেন, টিয়ার এই কাগজ টানার সঙ্গে ভবিষ্যতের কোনো সম্পর্ক নেই। স্রেফ খাবারের চিন্তা থেকে গাণিতিক হিসাব করে পাখিটি কাগজ টানে।

টিয়া পাখির এই গাণিতিক হিসাব করার ক্ষমতার তথ্য গত মঙ্গলবার জানিয়েছেন গবেষকেরা। নিউজিল্যান্ডের একদল বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞের এই গবেষণা বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার কমিউনিকেশনস প্রকাশ করেছে।

গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বেছে নিয়েছিলেন ছয়টি টিয়া। পাখিগুলোকে তাঁরা প্রথমে কালো ও কমলা রঙের টোকেন দিয়ে প্রশিক্ষণ দেন। এ ক্ষেত্রে কালো টোকেন টানলে পুরস্কার হিসেবে খাবার দেওয়া হয়। কমলা টোকেনের জন্য কোনো খাবার ছিল না।

গবেষকেরা জানান, প্রশিক্ষণ শেষে তাঁরা পাখিগুলোর সামনে জারভর্তি টোকেন হাজির করেন। দুই জারের কোনোটায় কালো টোকেন বেশি, আবার কোনোটায় কমলা টোকেন বেশি ছিল। এ সময় দেখা গেল, পাখিগুলো অপেক্ষাকৃত কালো রঙের টোকেন বেশি রয়েছে—এমন জারই পছন্দ করছে। আবার তারা ব্যক্তিও পর্যবেক্ষণ করে। গবেষণার একটি ধাপে দুই গবেষকের হাতে দুটি জার ধরিয়ে দেওয়া হয়। একটিতে কালো টোকেন বেশি, অন্যটিতে কমলা বেশি। কিন্তু এ সময় পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে কমলা টোকেন বেশি রয়েছে যে জারে, সেটি পছন্দ করে তারা। কারণ, এ সময় পাখিগুলো গবেষককে পর্যবেক্ষণ করেছে। আবার অপর একটি ধাপে দুই জারের একটিতে ওপরের দিকে কালো টোকেন বেশি ছিল। পাখিগুলো ওই জারটিই পছন্দ করেছে।

গবেষকদের দাবি, টোকেন টানার সময় টিয়া কেবল পুরস্কারপ্রাপ্তির চিন্তাই করে। পাখিগুলো সম্ভাব্যতা ও পরিসংখ্যানের মডেল ব্যবহার করে বোঝার চেষ্টা করে, কোন টোকেনটি টানলে খাবার পাওয়া যেতে পারে।

টিয়া পাখি নিয়ে এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব সাইকোলজির গবেষণা সহকারী আমালিয়া বাস্তোস। তিনি বলেন, ‘আমরা জানতাম, টিয়া পাখি যথেষ্ট বুদ্ধিমান। কাজেই এই গবেষণার ফলাফলে আমরা তেমন আশ্চর্য হইনি। তবে চমকপ্রদ বিষয় হলো, পাখিগুলো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সামাজিক বা বাস্তবিক তথ্য ব্যবহার করে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা করে।’ তিনি আরও জানান, শিম্পাঞ্জি পরিবারের বাইরে টিয়াই প্রথম প্রাণী, যারা গণিত জানে বলে গবেষকেরা জানতে পেরেছেন।

আমালিয়া বাস্তোস বলেন, ‘আমি যত দূর জানি, সব পাখি প্রজাতির মধ্যে টিয়ার ব্যক্তিত্ব অনন্য। যে ছয়টি টিয়া নিয়ে আমরা কাজ করেছি, তাদের প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত পছন্দ ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ছিল। তবে সবগুলো পাখিই মিশুক প্রকৃতির, আর তাদের মধ্যে আগ্রহও ছিল। ফলে এগুলোকে নিয়ে কাজ করা সহজ হয়েছে।’





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar