ad720-90

মানুষের সাফল্যই আমাদের আশাবাদী করছে


ছবি: রয়টার্স১৮০০ সাল। সারা বিশ্বের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৮৫ শতাংশ ছিল অতিদরিদ্র। সারা বিশ্বের মানুষের জন্য তখন পর্যাপ্ত খাবার ছিল না। ব্রিটেন ও এর সাম্রাজ্যভুক্ত সব দেশে শিশুদের কাজ করে খাবার জোগাতে হতো। ব্রিটেনে শিশুদের ১০ বছর বয়স থেকেই কাজ শুরু করতে হতো। খাবার–সংকট ত্রাতা প্রবণ ছিল। সুইডেনের প্রতি পাঁচজনের একজন খাবারের জন্য আমেরিকায় পাড়ি দেয়।

আর ১৯৬৬ সাল। খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। তখন বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষের গড় আয় ছিল মাত্র দুই মার্কিন ডলার।

২০১৭ সাল। বিশ্বে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমে আসে ৯ শতাংশে। মানবসভ্যতার ইতিহাসে দারিদ্র্য কমার হার গত ২০ বছরে সবচেয়ে বেশি।

১৮০০ সালে মানুষের গড় আয়ু ছিল ৩০ বছর। এখন ৭২.৫ বছর। ১৯০০ সালে জন্মানো ৪০ শতাংশ শিশু তাদের বয়স পাঁচ বছর হওয়ার আগেই মারা যেত। ২০১৬ সালে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ শতাংশে। প্রতিটি জীবনই মহামূল্যবান—এই সংখ্যা শূন্যের কাছাকাছি চলে আসাটা শুধু সময়ের ব্যাপার।

আমাদের চারপাশে শুধু দুঃসংবাদ। করোনা, সিরিয়ার যুদ্ধ, লাখ লাখ শরণার্থী, চারদিকে শুধু নেতিবাচক খবর। এত কিছু খারাপের মাঝেও ধীরে হলেও অনেক কিছুর উন্নতি হচ্ছে। যেমন ধরুন মানুষের অপরাধ করার প্রবণতা কমে গেছে। জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধু যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯০ সালে অপরাধের সংখ্যা দেড় কোটি। ২০১৬ সালে এই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় এক কোটির নিচে।

১৯৫০ সালে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে গুটিবসন্তের প্রকোপ ছিল। ১৯৭৯ সালে সারা বিশ্ব থেকে গুটিবসন্ত বিলুপ্ত হয়। ১৯৭০ সালে বিশ্বের ২৮ শতাংশ মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগত, ২০১৫ সালে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১১ শতাংশে।

বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৮৬ শতাংশ লিখতে ও পড়তে পারে। বিশ শতকের গোড়ায়ও এই সংখ্যা ছিল ১০ শতাংশের নিচে।

১৯৮০ সালে সারা বিশ্বে মাত্র ২২ শতাংশ শিশু জন্মের এক বছরের মধ্যে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় ছিল, ২০১৬ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮ শতাংশে।

সারা বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ এখন স্বাস্থ্যকর পানীয় জল পায়। ৪০ বছর আগেও এই সংখ্যা ছিল অনেক কম। ১৯৭০ সালে প্রতি হেক্টর জমি থেকে ১ হাজার ৪০০ কেজি শস্য উৎপাদন করা হতো। ২০১৪-তে প্রতি হেক্টরে পাওয়া যায় ৪ হাজার কেজি শস্য।

খারাপ খবরগুলো আমাদের সামনে বেশি আসে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তথ্যের চেয়ে ধারণাকে আমরা প্রাধান্য দিই।

চারদিকে শুধু মৃত্যুর খবর। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ, এখন যোগ হয়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। গত শতকের গোড়ায় ১৯৩০ সালে প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে গড়ে ১০ লাখ লোক মারা যেত, ২০১৬-তে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজারে।

১৯১৮ সালে প্রাণঘাতী স্প্যানিশ ফ্লুতে পাঁচ কোটি লোক মারা যায়, যা ছিল তখনকার বৈশ্বিক জনসংখ্যার ২ দশমিক ৭ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে ভাইরাসজনিত সংক্রমণ রোগে মৃত্যুর সংখ্যা স্প্যানিশ ফ্লু থেকে অনেক কম—সোয়াইন ফ্লুতে মারা যায় ২ লাখ, ইবোলাতে ১২ হাজারেরও কম।

প্রতিটি প্রাণই মূল্যবান। ভাইরাসজনিত বৈশ্বিক মহামারির আশঙ্কা অনেক দিন ধরেই বিজ্ঞানীরা করে আসছিলেন। অতিক্ষুদ্র এই জীবাণুকে মোকাবিলার জন্য সারা বিশ্বের সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার কথা বিল গেটস ২০১৫ সালেই উল্লেখ করেছিলেন। অতিক্ষুদ্র এই জীবাণু ঠেকানোর জন্য কোনো উল্লেখযোগ্য সমন্বিত উদ্যোগ সঠিক সময়ে উন্নত দেশগুলো নেয়নি। তারা ব্যস্ত ছিল যুদ্ধ আর অস্ত্র বিক্রির প্রতিযোগিতায়।

তবে মানুষের সমন্বিত উদ্যোগেই করোনাভাইরাস জনিত মহামারি রুখে দেওয়া সম্ভব। তার জন্য আমাদের প্রত্যেকেরই দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর তা হলো বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ শোনা। সঠিক তথ্যকে বিশ্বাস করা। সব তথ্যকে নয়। গত এক শ বছরে এই পৃথিবী আমাদের ধারণার চেয়েও অনেক বেশি বাসযোগ্য হয়েছে। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, চিকিৎসা, শিক্ষা—সবকিছুতেই আমরা এগিয়েছি। এক ধাপ পিছিয়ে গেলে পরের বছর দুই ধাপ এগিয়েছি।

তথ্যসূত্র: Ourworlddata.org; FACTFULNESS By HANS ROSLING; GAPMINDER. ORG

সুব্রত বোস: লন্ডনপ্রবাসী বাংলাদেশি ও বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানির ক্লিনিক্যাল ট্র্যায়ালস অ্যানালিটিকসের গ্লোবাল প্রধান।
ই–মেইল: [email protected]





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar