ad720-90

করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি


বাংলাদেশের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা। অনেক আগেই আমাদের এ ব্যাপারে সতর্ক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। এখন অনেক দেরি হলেও বিভিন্ন এলাকায় কোয়ারেন্টিন কড়াকড়িভাবে আরোপ করতে হবে।

প্রথম দিকে চীন, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশ থেকে প্রবাসী বাঙালিরা দেশে এসে স্বাভাবিকভাবে সবার সঙ্গে মেলামেশা করেছেন। সব সময় এ রকমই হয়ে থাকে। কিন্তু এখন একটা ভিন্ন পরিস্থিতি। করোনাভাইরাস সংক্রমণের বৈশ্বিক মহামারি চলছে। বাইরের দেশের করোনাভাইরাস আক্রান্ত এলাকা থেকে কেউ যদি এসে থাকেন, তাহলে অন্তত ১৫ দিন কোয়ারেন্টিন বা অন্য সবার থেকে দূরে থাকা দরকার। এ না হলে আশপাশের লোকজনের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে বিষয়ে প্রথম দিকে আমরা মোটেই গুরুত্ব দিইনি। ফলে এখন এক মহা বিপদের মুখে রয়েছি।

বিপদটা কী? সেটা হচ্ছে, বিদেশ ফেরত কোনো ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত কি না, সেটা তাৎক্ষণিকভাবে না-ও বোঝা যেতে পারে। হয়তো ১৪ দিন পর তার শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিল। এই সময়ের মধ্যে তিনি হয়তো দিনে তিন-চারজন করে মোট প্রায় ৪০-৫০ জনের মধ্যে করোনা রোগের ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটিয়ে ফেলেছেন নিজের ও অন্যদের অজান্তেই। এবং সেই ৪০-৫০ জনের প্রত্যেকেই হয়তো ৩০-৪০ জন করে ব্যক্তিকে সংক্রমিত করেছেন। এইভাবে একটি এলাকার বেশির ভাগ মানুষই হয়তো সংক্রমিত হয়েছেন। এদের রোগের লক্ষণগুলো এখন ধীরে ধীরে প্রকাশ পাবে। তখন ভয়াবহ মাত্রায় করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

আমাদের সৌভাগ্য যে এখনো সেই মাত্রায় করোনা ছড়িয়ে পড়েনি। তাই যে সব এলাকায় প্রবাসীদের আসা-যাওয়া বেশি হয়েছে, সেই সব এলাকায় সেলফ-কোয়ারেন্টিন কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করতে হবে। তাহলে হয়তো করোনাভাইরাস আমাদের দেশে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়তে পারবে না।

কিন্তু সমস্যা হলো প্রবাসীদের কে কোথায় কত দিন আগে এসে কতজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, মেলামেশা করেছেন, সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়েছেন, তার খবরাখবর আমরা কীভাবে পাব?

ছবি: রয়টার্স

এটা জানার জন্য আমরা এআই, অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারি। দক্ষিণ কোরিয়া আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করেছে। ওরা রোগাক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যাদের মেলামেশা বেশি ছিল তাদের তালিকা তৈরি করে সে অনুযায়ী তাদের স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা কার্যকর করেছে। এ জন্য ব্যবহার করেছে একটি ‘কনটাক্ট ট্রেসিং প্রোগ্রাম’। এই প্রোগ্রামের কাজের পদ্ধতি খুব সহজ। যে সব এলাকায় রোগের আশঙ্কা বেশি সেখানে কারও জ্বর বা অন্যান্য লক্ষণ থাকলে তাদের পরীক্ষা করে করোনা রোগী কি না তা শনাক্ত করেছে। এর পর আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে যারা এসেছেন, তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করেছে। এ জন্য রোগাক্রান্তদের মোবাইলের জিপিএস ট্র্যাকিং, ক্রেডিট কার্ড ট্রেসিং ও সিসিটিভি ফুটেজ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে সেই ভিত্তিতে কোন এলাকা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা নির্ধারণ করে সেই সব এলাকায় কোয়ারেন্টিন আরোপ করেছে। এভাবে রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা তাদের জন্য সহজ হয়েছে।

পত্র-পত্রিকায় ও অন্যান্য উৎস থেকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি ও এলাকা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সরবরাহ করলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম কোন এলাকায় কী ধরনের কর্মসূচি নিতে হবে সে সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। সংবাদমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সরকারি খবরে প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে কোন এলাকায় করোনা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেশি সে সম্পর্কে জানা সম্ভব। কানাডীয় স্টার্ট আপ ব্লু-ডট এর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি এ ধরনের কাজ বেশ দক্ষতার সঙ্গে করছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা জানতে পারি কোন এলাকা কতটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এটা জানতে পারলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারি। তাহলে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।

সরকার ঝুঁকিপূর্ণ শিবচর এলাকা অবরুদ্ধ করেছে। এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ অন্যান্য এলাকাও অবরুদ্ধ করা হতে পারে বলে সরকার জানিয়েছে। এ ধরনের ব্যবস্থা আমার-আপনার-সবার ভালোর জন্যই দরকার। আমরা যদি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দেরি করি, তাহলে সারা দেশে রোগ ছড়িয়ে পড়ে বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনবে।

মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar