ad720-90

পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের সাহায্যে সংরক্ষণ করুন


বর্তমানে আমরা এতো বেশী প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছি যে,  যেকোন প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে টাকা পয়সা লেনদেনের সুবিধার্থে যেকোন সময় খুলতে হচ্ছে নতুন নতুন অ্যাকাউন্ট।  নতুন নতুন অ্যাকাউন্টে আবার ব্যবহার করতে হচ্ছে নতুন নতুন পাসওয়ার্ড৷ কিন্তু এতগুলো অ্যাকাউন্টের ভীড়ে পাসওয়ার্ড তো দূরের কথা,  কোন সাইটে কয়টা অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে সেটা মনে রাখাও আরেক চ্যালেঞ্জ।

কেউ কেউ  অতি চালাকী করে  যাবতীয় সকল অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করেন একই পাসওয়ার্ড কিন্তু ভুলে যান যে যেকোন একটি আইডি হ্যাক হলেই বিপদের মুখে পড়ে যেতে পারে বাকীগুলোও। সেক্ষেত্রে বোকা বনে যাওয়া ছাড়া আর কোন পথও খোলা থাকে না৷  অনেকে আবার মনে রাখার সুবিধার্থে এসব পাসওয়ার্ড সংরক্ষন করেন ফোন ড্রাফটস বা নোটস এ৷ কিন্তু পাসওয়ার্ড সংরক্ষনের ক্ষেত্রে এটি মোটেও কোন নিরাপদ উপায় নয়৷ ফোনটি অনাকাঙ্খিত অতিথির হাতে গেলেই একের পর এক হ্যাক হয়ে যেতে পারে আপনার প্রয়োজনীয়  প্রতিটি অ্যাকাউন্ট যেখানে হয়তো আপনি সংরক্ষন করে রেখেছেন আপনার ব্যক্তিগত অনেক ইনফরমেশন ।

এর মধ্যে কেউ কেউ আবার মনে রাখার সুবিধার্থে আট কিংবা দশ ক্যারেক্টারের ছোট এবং সহজ পাসওয়ার্ড  ব্যবহার করেন। দুর্বল প্রকৃতির এই পাসওয়ার্ড মনে রাখা যেমন সহজ, হ্যাক করাও তেমন সহজ৷ সেজন্য ব্যবহার করা উচিত এমন কোন কঠিন এবং শক্তিশালী পাসওয়ার্ড যেটা হতে পারে ১২৮ ক্যারেক্টারেরও। এ ধরনের পাসওয়ার্ড হ্যাক হওয়া যতটা মুশকিল মনে রাখাও ততটা মুশকিল৷ অ্যাকাউন্ট এবং পাসওয়ার্ডজনিত এসব সমস্যার সমাধান পেতেই আশ্রয় নিতে হয় পাসওয়ার্ডকে নিরাপত্তা দেয়ার মত সফটওয়্যার বা পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের৷

পাসওয়ার্ড ম্যানেজার নাম শুনলেই বোঝা যায় এটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজমেন্ট এর কাজ করে৷ অর্থাৎ আপনার যাবতীয় অ্যাকাউন্ট পাসওয়ার্ড মাত্র একটি ডাটাবেজ দ্বারা সুরক্ষিত অবস্থায় থাকে।  বারবার আইডি পাসওয়ার্ড মনে রাখার ঝামেলা থেকে মুক্তি দেয় এবং অটোমেটিক্যালি কিংবা পাসওয়ার্ড কপি করার মাধ্যমে লগইন করার মত সুবিধা প্রদান করে থাকে বিশেষ এই সফটওয়্যারটি৷ ফলে আপনি চাইলেই ডজন ডজন আইডি ক্রিয়েট করতে পারেন খুব সহজে৷

এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে সকল অ্যাকাউন্টের জন্য একটি ডাটাবেজ তো আপনি আপনার ফোনেই তৈরি করে ফেলতে পারেন তাহলে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার এর কাজ কি। আসলে পাসওয়ার্ড ম্যানেজারেরও একটা পাসওয়ার্ড থাকে যাকে বলা হয় মাস্টার পাসওয়ার্ড৷ এই মাস্টার পাসওয়ার্ডটি আপনার সকল পাসওয়ার্ডকে সুরক্ষা প্রদান করে এবং আপনার যাবতীয় পাসওয়ার্ডকে ক্লাউডে সংরক্ষণ করে যা আপনার ফোনের সাধারণ ড্রাফটসে পাবেন না৷

পাসওয়ার্ড ম্যানেজার শুধুমাত্র একটি সফটওয়্যার নয়।  এর ব্রাউজার এক্সটেনশনও রয়েছে৷ আপনি কোনটি ব্যবহার করবেন সেটি অবশ্যই আপনার উপর নির্ভর করছে৷  অনেক ফোনে এটি ডিফল্ট অ্যাপ্লিকেশন হিসেবেই দেখা যায়৷ তবে আপনার অ্যান্ড্রয়েড সেটটিতে যদি এটা ডিফল্ট অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে না থাকে তাহলে ব্রাউজার এক্সটেনশনের সুবিধা ছেড়ে অযথাই ফোন স্টোরেজ নষ্ট করবেন কেন! চলুন দেখে নিই কিভাবে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করবেন ও আপনার পাসওয়ার্ডগুলো সংরক্ষণ করবেনঃ

যেভাবে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করবেন ও আপনার পাসওয়ার্ডগুলো সংরক্ষণ করবেনঃ

প্রথম ধাপঃ

পাসওয়ার্ড ম্যানেজার সফটওয়্যার হোক কিংবা ব্রাউজার এক্সটেনশন  হোক,  এটি ব্যবহার করার জন্য  সর্বপ্রথম আপনাকে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। যেহেতু বর্তমানে অনলাইন সেবা দিতে অনেক ধরনের পাসওয়ার্ড  ম্যানেজার সফটওয়্যার সুবিধা রয়েছে সেহেতু প্লাটফর্ম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করতে হবে৷

নিরাপত্তার দিক থেকে বর্তমানের বহুল ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় দুটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার হলো লাস্টপাস (last pass) এবং বিটওয়ার্ডেন (bitwarden)।  লাস্টপাস এবকং বিটওয়ার্ডেনের মধ্যে অল্প বিস্তর পার্থক্য থাকলেও এ দুটোই এন্ড টু এন্ড ইনক্রিপ্টেড এবং ওপেন সোর্স প্লাটফর্ম যা যেকোন অনলাইন প্লাটফর্মের নিরাপত্তার প্রধান শর্ত৷ ধরুন আপনি আপনার পাসওয়ার্ড সংরক্ষণের জন্য বিটওয়ার্ডেন বেছে নিলেন।

তাহলে অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করতে আপনাকে বিটওয়ার্ডেন সাইটে গিয়ে আপনার মেইল আইডি এবং পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের জন্য একদম আলাদা এবং শক্তিশালী একটি পাসওয়ার্ড দিয়ে সাইন ইন করতে হবে৷ তবে এই পাসওয়ার্ডটি দেয়ার সময় আপনাকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে৷ কেননা এটা হচ্ছে আপনার মাস্টার পাসওয়ার্ড যেটার আড়ালে আপনি আপনার যাবতীয় আইডির পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবেন।  সুতরাং এই পাসওয়ার্ডটি কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না৷  পাসওয়ার্ড কনফার্ম হলেই ক্রিয়েট হয়ে যাবে আপনার পাসওয়ার্ড ম্যানেজার অ্যাকাউন্ট৷

দ্বিতীয় ধাপঃ

পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের সাহায্যে নতুন পাসওয়ার্ড জেনারেট করুন এবং আপনার যে সকল অ্যাকাউন্টে দুর্বল কিংবা একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেছেন সেসকল অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ডগুলো পরিবর্তন করে নিন৷ পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের সাহায্যে পাসওয়ার্ড জেনারেট করা একদম সহজ।

আপনাকে শুধু লিখতে হবে আপনি কত ক্যারেক্টারের পাসওয়ার্ড চান৷ আপনি যদি ১৬ ক্যারেক্টারের পাসওয়ার্ড চান তাহলে আপনাকে ১৬ ক্যারেক্টারের পাসওয়ার্ড জেনারেট করবে৷ আবার যদি ১২৮ ক্যারেক্টারের পাসওয়ার্ড চান তাহলে ১২৮ লিখে জেনারেট করলেই অনেক বড় একটি পাসওয়ার্ড আপনাআপনি জেনারেট হয়ে যাবে৷

আর জেনারেট হওয়া এই নতুন পাসওয়ার্ডটি নিঃসন্দেহে আপনার ভেবে রাখা পাসওয়ার্ডটির তুলনায় অনেক বেশী শক্তিশালী এবং নিরাপদ। কেননা পাসওয়ার্ড ম্যানেজার স্মল লেটার,  ক্যাপটাল লেটার এবং (@#&*-$^) এই ধরনের বিশেষ কিছু ক্যারেক্টারের সমন্বয়ে একটি লম্বা পাসওয়ার্ড তৈরি করে৷ এ ধরনের জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলে হ্যাকার কোন সাইটের ডাটাবেজ হ্যাক করলেও আপনার পাসওয়ার্ড ক্র্যাক করতে তাকে হিমশিম খেতে হবে৷

কেননা ডাটাবেজে পাসওয়ার্ডগুলো ইনক্রিপ্টেড অবস্থায় থাকে৷ পাসওয়ার্ড আপনার পছন্দ না হওয়া পর্যন্ত জেনারেট করতে পারবেন। কাঙ্খিত নতুন পাসওয়ার্ডটির পাশে কপি করার জন্য একটি চিহ্ন দেয়া থাকবে৷ সেখানে ক্লিক করে দৈত্যাকার  পাসওয়ার্ড যা হয়তো আপনারই কখনো মনে থাকবে না , সেটি ক্লিপ বোর্ডে কপি করে নিন৷

কপি করা পাসওয়ার্ডটি আপনার অ্যাকাউন্টের সেটিংসে গিয়ে পেস্ট করে পরিবর্তন করে ফেলুন আপনার পুরাতন পাসওয়ার্ডটি৷ এভাবে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য যতদূর সম্ভব নতুন নতুন পাসওয়ার্ড জেনারেট করুন এবং আপনার অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন৷

তৃতীয় ধাপঃ

আপনাকে আপনার সকল অ্যাকাউন্ট তাদের পাসওয়ার্ড এবং ইউআরএল সহ সংযোজন করতে হবে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ফোল্ডারে৷ এড ফোল্ডার নামের অপশনে ক্লিক করে ধাপে ধাপে প্রতিটি অ্যাকাউন্ট সংযোজন করতে হবে৷

পাসওয়ার্ড সংরক্ষনের কাজটা মূলত এখানেই শেষ হয়ে যায়৷ তবে সর্বশেষ ধাপে একবার করে পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের সাহায্যে প্রতিটি অ্যাকাউন্টে অন্তত একবার লগইন করে একটু ক্রস চেক করে নিন যে আপনি সকল অ্যাকাউন্ট সঠিকভাবে সংরক্ষন করছেন৷ যেহেতু পাসওয়ার্ড  ম্যানেজার থেকে যে অ্যাকাউন্টে যেতে চান সেটায় ক্লিক করলে অটোমেটিক লগ ইন হয়ে যাবে তাই একাজটি করতে আপনাকে অতটা ঝামেলা পোহাতে হবে না৷

পরবর্তীতে যেকোন অ্যাকাউন্টে লগ ইনের জন্য আর ডজন ডজন পাসওয়ার্ড মনে রাখার প্রয়োজন পড়বে না৷ মনে রাখতে হবে শুধু মাস্টার পাসওয়ার্ডটি, যেটির সাহায্যে লগইন করলেই আপনি আপনার ইচ্ছামত যেকোন অ্যাকাউন্টের সাইন ইন করতে পারবেন৷

তবে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার দিয়ে লগইন করলেও সাইট থেকে বের হওয়ার আগে সেটা লগ আউট করার ব্যপারে খেয়াল রাখতে হবে৷ ২০১২ সালে প্রায় ৬৫ লাখ লিংকডইন ব্যবহারকারীর তথ্য হ্যাকারদের হাতে চলে যায়৷ লিংকড-ইনের তথ্যমতে তাদের প্রায় ৭৫ লাখ ব্যবহারকারীই সেসময় তাদের পাসওয়ার্ড হিসেবে 123456 ব্যবহার করেছিলেন৷ হ্যাকিং এর হাত থেকে বাঁচতে এবং অনলাইনে নিজেকে নিরাপদ রাখতে একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড কেন প্রয়োজন,তা এই তথ্যটি থেকে খুব সহজে বোঝা যায়। সেজন্য সময় থাকতেই সচেতন হওয়া জরুরী। পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের ব্যবহার বর্তমানে বেশ  সময়োপযোগী একটি লাইফ হ্যাক, এটি আপনার সময় ও বাঁচাবে, ঝামেলা কমাবে আর অনলাইন সুরক্ষাও নিশ্চিত করবে।

আরও পড়ুনঃ

কম্পিউটারের ভুলে যাওয়া পাসওয়ার্ড খুব সহজে পাল্টে ফেলুন



সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar