ad720-90

করোনাকালে মাটির কম্পনের মাত্রা কমে গেছে!


বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ মানুষের জীবনযাত্রায় যে কী ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে, তা বোঝা যায় মাটির নিচে কম্পনের (seismic noise) মাত্রা হ্রাসের মাধ্যমে। যেসব দেশে বা এলাকায় সংক্রমণ বেশি, সেখানে একের পর এক লকডাউন এবং জনসমাবেশ ও যাতায়াত নিয়ন্ত্রণের ফলে মানুষের দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততা কমে গেছে। এর ফলে মাটির নিচে কম্পনের মাত্রাও অনেক কমে গেছে। এই পরিবর্তন গবেষণায় ধরা পড়েছে।

‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর এক নিবন্ধে (২৩ জুলাই ২০২০) উল্লেখ করা হয়েছে, নিউইয়র্ক সেন্ট্রাল পার্ক এলাকায় পুরোপুরি লকডাউনের সময় মাটির নিচের কম্পনের মাত্রা আগের তুলনায় ১০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। এমন ঘটনা আগে কখনো দেখা যায়নি।

বেলজিয়ামের রয়েল অবজারভেটরির নেতৃত্বে এই নতুন গবেষণা পরিচালিত হয়। তাদের সঙ্গে ছিল লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজ এবং নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটি। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও জিওলজিক্যাল সার্ভের পক্ষ থেকেও অংশগ্রহণকারীরা গবেষণায় অংশ নেন। গবেষণাপত্রে তাঁরা বলেন, ক্যারিবিয়ানের বার্বাডোজ দ্বীপে ২৮ মার্চ লকডাউন শুরুর সময় তাঁরা লক্ষ করেন, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ভূপৃষ্ঠের নিচে কম্পনের মাত্রা প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্কি রিসোর্টগুলোতেও তাঁরা একই মাত্রার কম্পন হ্রাস লক্ষ করেন। তাহলে বুঝুন, আমাদের সভ্যতা পৃথিবীর স্বাভাবিক গাঁথুনিতে কী পরিমাণ ঝাঁকুনি দিয়ে চলেছে!

শুধু ভূ-অভ্যন্তরস্থ কম্পনের মাত্রা হ্রাসই নয়, বায়ুদূষণও অভাবিত মাত্রায় কমে গেছে। এখন তো আমরা বুক ভরে ঢাকার বাতাস নিতে পারি। এই পরিবেশ ধরে রাখতে পারলে আমাদের জীবনমান অনেক ভালো হবে।

ছোটবেলার টিকায়ও কিছু কাজ হয়

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ছোটবেলায় আমাদের যক্ষ্মারোধের যে বিসিজি টিকা দেওয়া হয়, তা করোনাভাইরাসকে অনেকাংশে দুর্বল করে। ‘মেডিকেল নিউজ টুডে’ (৬ আগস্ট ২০২০) বলছে, গবেষকেরা দেখেছেন, অন্তত ২০০০ সাল পর্যন্ত যেসব দেশে বাধ্যতামূলক বিসিজি টিকা দেওয়া হয়েছে, সেখানে করোনাভাইরাসের বিস্তার বা করোনায় মৃত্যুহার কম।

আমাদের দেশে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের কথা আমরা জানি। সাধারণত শিশুর জন্মের পরপরই বিসিজি টিকা দেওয়া হয়। দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে শিশুদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ২০১৮ সালে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই টিকা দেহের রোগপ্রতিরোধী সেলগুলোকে নতুনভাবে প্রস্তুত করে তোলে যেন ওরা বিশেষ ধরনের ভাইরাস রোধে সংকেত প্রদানে সক্ষম সেলে পরিণত হয়। এর ফলে দেহে ভাইরাস প্রতিরোধসক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।

সবুজ অর্থনীতি

করোনাভাইরাস মহামারি আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে, পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। কোনোভাবেই পৃথিবীর আলো-বাতাস, মাটি-পানির ক্ষতি করা যাবে না। এভাবে সবুজ অর্থনীতিই হতে হবে ভবিষ্যতের উন্নয়নের মূলভিত্তি। এ বিষয়ে এখনই বিশ্ব সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তে আসা দরকার।

আব্দুল কাইয়ুম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
[email protected]





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar