২.৪ গিগাহার্জ ব্যান্ড Vs. ৫ গিগাহার্জ ওয়াইফাই ব্যান্ড | কোনটি কোন ক্ষেত্রে বেশি উপযোগী?
যদি ইন্টারনেট কানেক্ট করার প্রশ্ন আসে, অবশ্যই আপনার প্রথম পছন্দ হবে ওয়াইফাই, কেনোনা এটি ওয়্যারলেস প্রযুক্তি সাথে আরো অনেক সুবিধা রয়েছে এতে। ওয়াইফাই একটি রেডিও টেকনোলজি, যেটা আলাদা সকল রেডিও টেকের মতো রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির উপর কাজ করে। ওয়াইফাই’এর জন্য নির্ধারিত ফ্রিকোয়েন্সি হচ্ছে ২.৪ গিগাহার্জ। কিন্তু আরেকটি নতুন ফ্রিকোয়েন্সিকে কাজে লাগানো হয়, সেটা ৫ গিগাহার্জ। আপনি যদি পুরাতন বা অনেক আগে ওয়াইফাই রাউটার কিনে থাকেন, সম্ভবত আপনার রাউটারটি ২.৪ গিগাহার্জে কাজ করে। এই টিউনে আমি ২.৪ গিগাহার্জ ব্যান্ড এবং ৫ গিগাহার্জ ওয়াইফাই ব্যান্ড নিয়ে আলোচনা করবো, এবং সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবো কোনটি কোন ক্ষেত্রে বেশি উপযোগী!
২.৪ গিগাহার্জ Vs. ৫ গিগাহার্জ
সাধারণ বা স্বাভাবিক নজরে দেখতে গেলে এই দুইটি ওয়াইফাই’ই জাস্ট এক ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড। কিন্তু ওয়াইফাই টেকনোলজিতে আলাদা আলাদা ব্যান্ডের আলাদা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। আর এদের মধ্যে সবচাইতে বড় পার্থক্য হচ্ছে স্পীডের ক্ষেত্রে। ২.৪ গিগাহার্জ ব্যান্ড ৬০০ মেগাবিট/সেকেন্ড এবং ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড ১৩০০ মেগাবিট/সেকেন্ড স্পীড সমর্থন করে, তবে এতে রাউটারের ক্লাস গুরুত্বপূর্ণ!
২.৪ গিগাহার্জ ব্যান্ড অনেক আগে থেকে আরো কিছু ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়। পুরাতন কর্ডলেস ফোন, ব্লুটুথ, কিছু রিমোট কন্ট্রোল, এমনকি আপনার বাড়ির মাইক্রোওয়েভ ওভেনও ২.৪ গিগাহার্জ ফিকয়েন্সিতে কাজ করে। এতগুলো ডিভাইজ একই ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করার জন্য ২.৪ গিগাহার্জ ওয়াইফাই ব্যান্ড সহজেই এই একই টাইপের সিগন্যাল গুলোর সাথে গণ্ডগোল পাকিয়ে যেতে পারে। কিন্তু এর একটি সুবিধাও রয়েছে, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি যতোকম হয় এর রেঞ্জ কিন্তু ততোবেশি হয়ে থাকে। তাই অবশ্যই এটি কম স্পীড প্রদান করলেও, রেঞ্জের ক্ষেত্রে ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড থেকে এটি এগিয়ে থাকবে।
যদিও ২.৪ গিগাহার্জ সিগন্যাল অনেক ড্রপ করে, কেনোনা এর প্রতিযোগিতা অনেক বেশি, কিন্তু বেশিরভাগ ওয়াইফাই এনাবল ডিভাইজ ২.৪ গিগাহার্জকেই সমর্থন করে। আজকের মডার্ন ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, বা ট্যাবলেট যদিও ৫ গিগাহার্জ সমর্থন করে, কিন্তু তারপরেও ২.৪ গিগাহার্জ সমর্থনকারীই বেশি রয়েছে।
এবার যদি কথা বলি ৫ গিগাহার্জ নিয়ে, ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড ওয়াইফাই নতুন ফ্রিকোয়েন্সি, যেহেতু অনেক কম ডিভাইজ এটি ব্যবহার করে তাই এই সিগন্যাল গোলমাল পাকিয়ে যাওয়া কিংবা সিগন্যাল ড্রপিং সমস্যা অনেক কম হয়। সাথে এর রেঞ্জও কম হয়, কেনোনা আগেই বলেছি, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বেশি হলে রেঞ্জ কমে যায়। কিন্তু এর স্পীড অনেক বেশি হয়ে থাকে, আপনি যদি এর সিগন্যালের মধ্যে থাকেন অবশ্যই শক্তিশালী স্পীড পেতে সক্ষম হবেন।
ডুয়াল ব্যান্ড রাউটার/ট্রাই-ব্যান্ড রাউটার
আজকের যেকোনো মডার্ন রাউটার যেটা ওয়াইফাই ৮০২.১১এসি স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করে কাজ করে, অবশ্যই একটি ডুয়াল ব্যান্ড রাউটার হয়ে থাকে। ডুয়াল ব্যান্ড রাউটারে একসাথে ২.৪ গিগাহার্জ ব্যান্ড এবং ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড থাকে, অর্থাৎ রাউটার একই সময়ে দুইটি আলাদা চ্যানেল ট্র্যান্সমিট করতে পারে। আপনার ডিভাইজ যদি ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড সমর্থন করে, তবে সেটা রাউটারের ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ডের সাথে কানেক্টেড হয় এবং ফাস্ট স্পীড কানেকশন তৈরি করে। আর পুরাতন ডিভাইজ গুলো ২.৪ গিগাহার্জ ব্যান্ডের উপরই কাজ করে, যেটার স্পীড অনেক স্লো কিন্তু রেঞ্জ অনেক বেশি। আপনি যদি সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটার কেনেন, সেক্ষেত্রে আপনি হয়তো ২.৪ গিগাহার্জ ব্যান্ড পাবেন, অথবা ৫ গিগাহার্জ, কিন্তু ডুয়াল ব্যান্ড রাউটার আপনাকে একসাথে দুইটিই ব্যবহার করার সুবিধা প্রদান করবে।
ট্রাই-ব্যান্ড রাউটার একসঙ্গে তিনটি নেটওয়ার্ক ব্রডকাস্ট করতে পারে। এখানে তিনটি আলাদা ব্যান্ড থাকে না, বরং ২টি ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড এবং ১টি ২.৪ গিগাহার্জ ব্যান্ড ব্রডকাস্ট করে। যদি আপনার কাছে একসাথে অনেক ডিভাইজ থাকে এবং আপনি নেটওয়ার্কে অনেক হেভি ব্যান্ডউইথ খরচ করার চিন্তা করেন, যেমন এইচডি স্ট্রিমিং, গেমিং, বড় সাইজের ফাইল ট্র্যান্সফার, তবে অবশ্যই একটি ট্রাই-ব্যান্ড রাউটার আপনার জন্য উত্তম হবে! তাছাড়া রাউটার ব্যান্ড সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে এই টিউনটি দেখুন!
তো আমি কোন ব্যান্ড ইউজ করবো?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনার প্রয়োজন অনুসারে আপনি কোন ব্যান্ডকে কাজে লাগাবেন। দেখুন, অলরেডি যদি আপনার কাছে একটি রাউটার থাকে আর সেটা যদি পুরাতন হয়, তবে অবশ্যই একটি নতুন ডুয়াল ব্যান্ড রাউটার কিনতে পারেন, যেখানে নতুন ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড আপনাকে হাই স্পীড প্রদান করবে। যদি আপনার কাছে একটি ডুয়াল ব্যান্ড রাউটার থাকে, সেক্ষেত্রে পুরাতন ডিভাইজ বা স্মার্টফোন গুলোকে ২.৪ গিগাহার্জ এবং নতুন ডিভাইজ গুলোকে ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ডের সাথে কানেক্ট করা উত্তম হবে।
যদি আপনার রাউটার ডিভাইজ থেকে দূরে থাকে, ভালো সিগন্যাল বা রেঞ্জ পাওয়ার জন্য ২.৪ গিগাহার্জ ব্যান্ড ব্যবহার করতে পারেন। যদি বেশি স্পীড বা হাই ব্যান্ডউইথ রেট প্রয়োজনীয় হয়, অবশ্যই ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ডকে কাজে লাগাতে পারেন। এখন আপনার ডিভাইজ হয়তো দুই ব্যান্ডই সমর্থন করে, সেক্ষেত্রে নিজেই ভেবে ঠিক করুণ, আপনার বেশি রেঞ্জ প্রয়োজনীয় নাকি হাই স্পীড প্রয়োজনীয়, সে অনুসারে ব্যান্ড সিলেক্ট করুণ।
আশা করছি, এই টিউন থেকে আপনি যথেষ্ট ধারণা পেয়েছেন, যার মাধ্যমে আপনি সহজেই সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারবেন, কোথায় ৫ গিগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করবেন আর কোথায় ২.৪ গিগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করবেন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই সঠিক রাউটার পছন্দ করাটাও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই টিউনটি থেকে বিভিন্ন রাউটার সম্পর্কে জানতে পারবেন। যদিও এই দুই ব্যান্ডের মধ্যের পার্থক্য খুব একটা বেশি না, কিন্তু কাজের সময় সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাড়াতে পারে।
যেকোনো প্রশ্নে অবশ্যই নিচে টিউমেন্ট করে আমাকে জানান, এবং অবশ্যই টিউনটিকে শেয়ার করুণ, এতে এই টিউনটি আপনার বন্ধুকে জানিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি টেকটিউনসকে খানিকটা সাপোর্ট করাও হয়ে যাবে।
আমার টিউন গুলো ভালো লাগলে অবশ্যই আমার টিউন বেশি বেশি জোসস করুন।
আমার টিউন গুলো আপনার ‘টিউন স্ক্রিন’ নিয়মিত পেতে অবশ্যই আমাকে ফলো করুন। আমার টিউন গুলো সবার কাছে ছড়িতে দিতে অবশ্যই আমার টিউন গুলো বিভিন্ন সৌশল মিডিয়াতে বেশি বেশি শেয়ার করুন।
আমার টিউন সম্পর্কে আপনার যে কোন মতামত, পরামর্শ ও আলোচনা করতে অবশ্যই আমার টিউনে টিউমেন্ট করুন।
আমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার জন্য ‘টেকটিউনস ম্যাসেঞ্জারে’ আমাকে ম্যাসেজ করুন। আমার সকল টিউন পেতে ভিজিট করুন আমার ‘টিউনার পেইজ’।
Comments
So empty here ... leave a comment!