ad720-90

পদ ছাড়ছি না: জাকারবার্গ


মার্ক জাকারবার্গ। ছবি: এএফপিনির্বাচনে হস্তক্ষেপ, ভুয়া খবর ঠেকানোর বিরুদ্ধে অপর্যাপ্ত ব্যবস্থা, তথ্য ফাঁস কেলেঙ্কারির মতো নানা সমস্যায় রয়েছে ফেসবুক। ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ ও ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গের ওপর চাপ বাড়াচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। জাকারবার্গকে তাঁর পদ ছাড়ার কথা বলছেন অনেকেই। কিন্তু এ বছরে ফেসবুককে ঠিকপথে ফেরানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজে নেমে পড়া জাকারবার্গ তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়। তিনি ফেসবুকের পদ ছাড়তে চান না।

সিএনএনের লরি সেগালকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে মার্ক জাকারবার্গ বলেছেন, তিনি ও তাঁর ডান হাত বলে পরিচিত শেরিল স্যান্ডবার্গের ফেসবুকে থাকা জরুরি। তিনি ফেসবুকের চেয়ারম্যান পদটি ছাড়বেন না। এমনকি শেরিলও তাঁর জায়গা থেকে নড়বেন না।

জাকারবার্গ শেরিল প্রসঙ্গে বলেন, ‘ফেসবুকের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ শেরিল। ফেসবুকের অনেক বড় বড় সমস্যা সমাধানে তিনি অনেক বড় ভূমিকা রেখেছেন। এক দশকের বেশি সময় ধরে তিনি আমার গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। সামনের দশকগুলেোতেও আমরা একসঙ্গে কাজ করব বলে আশা রাখি।’

নিজের পদত্যাগ প্রসঙ্গে সিএনএন বিজনেসকে দেওয়া ও সাক্ষাতকারে জাকারবার্গ বলেন, ‘পদত্যাগের পরিকল্পনা নেই।’

গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক টাইমস ফেসবুকের কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়টি নিয়ে ফেসবুক যথেষ্ট স্বচ্ছ নয়। এ ছাড়া ফেসবুক ডিফাইনার্স পাবলিক অ্যাফেয়ার্স নামের একটি গণসংযোগ প্রতিষ্ঠান (পিআর ফার্ম) ভাড়া করেছে, যাতে ফেসবুকের প্রতিদ্বন্দ্বী ও সমালোচকদের নামে কুৎসা ছড়ানো হয়।

ফেসবুকের সমালোচকদের বিষয়ে নেওয়া পদক্ষেপ ঘিরে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিনিয়োগকারীরা জাকারবার্গের ওপর চাপ বাড়াতে থাকেন। তাঁকে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী পদ থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানান ফেসবুকের বড় একটি অংশের শেয়ারের মালিক ট্রিলিয়াম অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জোনাস ক্রোন।

নিউইয়র্ক টাইমসের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন রিপাবলিকান রাজনীতিকের মালিকানাধীন রাজনৈতিক পরামর্শক ও পিআর প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া করেছে ফেসবুক। ওই প্রতিষ্ঠানকে ফেসবুক তাদের সমালোচকদের দুর্নাম করার দায়িত্ব দিয়েছে । ওই সংবাদ প্রকাশের পরই জাকারবার্গকে ফেসবুকের চেয়ারম্যান পদটি ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

জোনাস ক্রন বলেন, ফেসবুক একক ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল একটি প্রতিষ্ঠানের মতো আচরণ করছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি আসলে তা নয়। এটি একটি কোম্পানি। চেয়ারম্যান ও সিইওর পদ আলাদা থাকাটা কোম্পানির জন্যই প্রয়োজন।

নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী ওয়াশিংটন ডিসিভিক্তিক রিপাবলিকানদের প্রতিষ্ঠান ডিফাইনারস পাবলিক অ্যাফেয়ার্সকে ভাড়া করে ফেসবুক, যারা পিআরের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির প্রতিদ্বন্দ্বী ও সমালোচকদের দুর্নাম করে। প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট টেকক্রাঞ্চ জানিয়েছে, রিপাবলিকান এক নেতার ওই প্রচার প্রতিষ্ঠান নিরপেক্ষ নয়।

জাকারবার্গ অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। নিউইয়র্ক টাইমসে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর মার্ক জাকারবার্গ জানিয়েছেন, এটি দেখার পর দ্রুততার সঙ্গে তিনি আলোচনা করেছেন এবং ওই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ফেসবুকের সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। একই দাবি করেছেন ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) শেরিল স্যান্ডবার্গও।

জাকারবার্গ বলেছেন, ফেসবুক পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি সঠিক পথেই আছেন। বছরজুড়ে তিনি প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের রদবদল করেছেন।

সিএনএনকে জাকারবার্গ বলেছেন, ‘বছরের শুরুতে ব্যবস্থাপনার যে দলটি দেখেছিলেন, বছরের শেষে লক্ষ্য করলে তাতে ব্যাপক পরিবর্তন দেখতে পাবেন। পণ্য ও প্রকৌশলের দিক থেকে আমরা পুরোপুরি ঢেলে সাজিয়েছি। ’

গত মে মাসে ফেসবুক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারসহ জনপ্রিয় অ্যাপগুলোর নির্বাহীর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের রদবদল করা হয়। নতুন প্রযুক্তি ব্লকচেইনের মতো খাতেও প্রকৌলীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিপণন, অংশীদারত্ব ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন নেতৃত্ব আসে।

ফেসবুক থেকে জাকারবার্গকে সরানো সহজ নয়। কারণ তার হাতেই রয়েছে ফেসবুকের সব ক্ষমতা। প্রতিষ্ঠানটির অধিকাংশ ভোটের ক্ষমতা তার হাতে রেখেছেন তিনি। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, জাকারবার্গ না থাকলেই ফেসবুকের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। এর আগেও তাঁকে সরাতে ভোট দেওয়ার ক্ষমতা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বরাবরই সে প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়েছে।

২০১৭ সালেও স্বাধীন একজন চেয়ারম্যান নিয়োগের বিষয়ে শেয়ারহোল্ডাদের একটি প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। কেননা, ফেসবুকে জাকারবার্গের সিংহভাগ শেয়ার থাকার কারণে বাইরে থেকে ওঠা কোনো প্রস্তাব কার্যত প্রতীকী।

আরও পড়ুন:

ফেসবুকের পদ ছাড়তে জাকারবার্গের ওপর চাপ
ফেসবুকের ভবিষ্যৎ কোন পথে?
বিপদে ফেলছে ফেসবুক

 





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar