ad720-90

স্যামসাং কি সংকট কাটাতে পারবে?


স্যামসাংয়ের মোবাইল বিভাগের প্রধান ডিজে কোহ। ছবি: এএফপি।স্মার্টফোনের বাজার দখলের হিসাবে বিশ্বে এখনো এক নম্বরে স্যামসাং। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বীরা ঘাড়ের ওপর নিশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে। স্যামসাং যে চাপে আছে, তা প্রতিষ্ঠানটির মোবাইল বিভাগের প্রধান ডিজে কোহ স্বীকার করেছেন। তিনি একে ‘সংকট’ বলে মন্তব্য করেছেন। এ সংকট দূর করার উপায় নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর সমাধান ‘গ্যালাক্সি এস১০’ বলেই মনে করছে স্যামসাং।

২০১৯ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে গ্যালাক্সি সিরিজে নতুন স্মার্টফোন বাজারে আনার ঘোষণা দেবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠানটি। স্যামসাং মোবাইল বিভাগের প্রধান ডিজে কোহ সহকর্মীদের এক অভ্যন্তরীণ বার্তায় এস১০ ও ভাঁজ করা স্মার্টফোনকে সংকট কাটানোর দারুণ সুযোগ বলে উল্লেখ করেছেন।

কোরিয়া হেরাল্ডের তথ্য অনুযায়ী, ডিজে কোহ সম্প্রতি স্যামসাংয়ের নির্বাহী ও কর্মীদের কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন। সে বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘স্যামসাং স্মার্টফোন ব্যবসার বর্তমান সংকটময় সময়ের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। এ সংকট দূর করার আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। গ্যালাক্সি ১০ ও ভাঁজ করা ফোন বাজারে ছাড়া হবে।’

গিজমো চায়নার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা হুয়াওয়ের দ্রুত উঠে আসায় তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে স্যামসাং। বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে স্যামসাংয়ের পরিচালন মুনাফা বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে তুলনায় কমেছে। অবশ্য প্রতিবছর নতুন আইফোন বাজারে আসার সময়ে স্যামসাংয়ের মুনাফা কমতে দেখা যায়। তবে এখনো স্মার্টফোন বাজারের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে স্যামসাং।

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইডিসির হিসাব অনুযায়ী, এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ৩৫ কোটি ৫২ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে। এতে দেখা গেছে, স্মার্টফোন বিক্রি গত বছরের চেয়ে প্রায় ৬ শতাংশ কমেছে। স্মার্টফোনের বাজারে শীর্ষ অবস্থান গত প্রান্তিকেও ধরে রেখেছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান স্যামসাং। গত প্রান্তিকে স্যামসাংয়ের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ফোনগুলো হচ্ছে গ্যালাক্সি নোট ৯ ও গ্যালাক্সি এ সিরিজের ফোনগুলো। আইডিসি বলছে, গত প্রান্তিকে শীর্ষস্থান ধরে রাখলেও স্যামসাংয়ের স্মার্টফোন বাজারে আসার হার ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। গত প্রান্তিকে ৭ কোটি ২২ লাখ ইউনিট ফোন বাজারে ছেড়েছে স্যামসাং। গ্যালাক্সি নোট ৯ ফ্ল্যাগশিপ ফোনটি বাজারে এলেও গ্যালাক্সি এ সিরিজ স্যামসাংয়ের শূন্যস্থান পূরণ করছে।

স্যামসাংয়ের বর্তমান অবস্থায় আশার আলো হয়ে আসতে পারে এর ভাঁজ করা স্মার্টফোন ও গ্যালাক্সি এস১০। আগামী বছরের মার্চ মাসে ভাঁজ করার সুবিধাযুক্ত স্মার্টফোন বাজারে আনতে পারে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান স্যামসাং। একই সময়ে স্যামসাং ৫জি-সমর্থিত গ্যালাক্সি এস১০ নামের একটি স্মার্টফোন বাজারে আনতে পারে বলে এ খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। স্যামসাংয়ের মোবাইল বিভাগের প্রধান এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম ইয়োনহাপ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে স্যামসাং তাদের এস১০ ফ্ল্যাগশিপ ফোন বাজারে ছাড়তে পারে। এরপর মার্চে বাজারে আনতে পারে গ্যালাক্সি এফ নামে ফোল্ডেবল স্মার্টফোন। ওই সময় ৫জি নেটওয়ার্ক-সমর্থিত এস১০-এর একটি সংস্করণ বাজারে আসতে পারে।

ভাঁজ করার সুবিধাযুক্ত স্মার্টফোনের দাম বিষয়ে এখনো কিছু জানায়নি স্যামসাং কর্তৃপক্ষ। তবে প্রতিষ্ঠানটির ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, নতুন স্মার্টফোনের দাম হতে পারে ১ হাজার ৭৭০ মার্কিন ডলার।

সম্প্রতি স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের প্রেসিডেন্ট ও মোবাইল বিভাগের প্রধান কোহ ডং-জিন বলেন, ২০১৯ সালের প্রথম দিকেই ভাঁজ করা ফোন আনবে স্যামসাং। শুরুতে ১০ লাখ ইউনিট ফোন বাজারে ছাড়া হতে পারে।

ইয়োনহাপ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে ফোল্ডেবল স্মার্টফোন দেখাতে পারে স্যামসাং। এ ফোনে ৫জি নেটওয়ার্ক সমর্থন করতে পারে।

৭ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় স্যামসাং ডেভেলপার্স কনফারেন্সে (এসডিসি ২০১৮) ইনফিনিটি ফ্লেক্স ডিসপ্লেযুক্ত নতুন স্মার্টফোনটি প্রদর্শন করে স্যামসাং। এ স্মার্টফোন ঘিরে প্রযুক্তিবিশ্বে অনেক দিন ধরেই গুঞ্জন ছিল।

স্যামসাং জানিয়েছে, তাদের প্রথম প্রজন্মের ফোল্ডেবল বা ভাঁজ করার সুবিধাযুক্ত স্মার্টফোনে ইনফিনিটি ফ্লেক্স ডিসপ্লে ব্যবহৃত হবে। ভাঁজ করা স্মার্টফোনটি ট্যাবলেট হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। আবার ভাঁজ করে পকেটেও রাখা যাবে। এর আকার হবে ৭ দশমিক ৪ ইঞ্চি। তবে এটি ভাঁজ করার পর ৪ দশমিক ৬ ইঞ্চি মাপের স্মার্টফোন হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। স্যামসাং যে ডিভাইসটি দেখিয়েছে, সেটি চূড়ান্ত নয়।

স্যামসাংয়ের মোবাইল প্রোডাক্ট মার্কেটিং বিভাগের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ডেনিসন বলেন, ‘চমৎকার একটি ডিভাইস দেখাতে যাচ্ছি, যা ভাঁজ করে রাখা যায়। এতে একটি কভার ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে, যা ফোন হিসেবে ব্যবহার করা যাবে, আবার ৭ দশমিক ৪ ইঞ্চি মাপের ট্যাবলেট ডিসপ্লে হিসেবেও কাজ করবে।’

প্রতিযোগিতা বেড়ে গেলেও বর্তমান অবস্থা স্যামসাংয়ের জন্য ভেঙে পড়ার মতো কিছু নয়। তবে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান লি জে-ওং স্যামসাংয়ের মোবাইল বিভাগের বর্তমান অবস্থার জন্য সমালোচনা করেছেন। ভাঁজ করা ফোনকে তাই ঘুরে দাঁড়ানোর বড় সুযোগ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

ভাঁজ করা স্মার্টফোন আগেভাগেই বাজারে আনতে পারলে এ ধরনের ফোনের বাজার দখলে এগিয়ে যাবে স্যামসাং। এতে তাদের আয় বাড়বে।

নতুন বছরে স্যামসাং অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হয়। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে রদবদল হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডিজে কোহকে সরে দাঁড়াতে হতে পারে। ২০১৫ সাল থেকে তিনি মোবাইল বিভাগের প্রেসিডেন্টের পদে রয়েছে। গ্যালাক্সি নোট ৭ স্মার্টফোনের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে যখন হইচই বেশি হচ্ছিল, তখন থেকেই স্যামসাং সামলেছেন তিনি। এখন লি যদি তাঁর কাজে খুব বেশি খুশি হতে না পারেন এবং স্যামসাংয়ের উন্নতি দেখতে না পান, তবে কোহর সময় ফুরিয়ে আসছে বলেই ধরে নেওয়া যেতে পারে।

আরও পড়ুন: স্মার্টফোন বাজারের সেরা ৫

 





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar