ad720-90

চলচ্চিত্র থেকেই…


বিজ্ঞানমনস্কতা, দূরদৃষ্টি আর কল্পনাশক্তি মিলিয়ে সাহিত্যিকেরা লেখেন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি বা সায়েন্স ফিকশন। আর সেই সাহিত্য থেকে প্রেরণা নিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষকেরা উদ্ভাবন করেন যুগান্তকারী সব জিনিস। লেখকের কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার এ রকম দৃষ্টান্ত অনেক। কিন্তু জানেন কি, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি নিয়ে বানানো চলচ্চিত্র এবং টিভি সিরিজ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েও বানানো হয়েছে অনেক প্রযুক্তিপণ্য।

হলোগ্রাফিক প্রদর্শনী

হলোগ্রাফিক প্রদর্শনীর প্রথম উপস্থাপনা দেখা যায় স্টার ওয়ার্স: আ নিউ হোপ সিনেমায়, যখন প্রিন্সেস লিয়ার ছবিটি আরটুডিটুর বাইরে দেখানো হয়। হলোগ্রাফি হচ্ছে এমন এক ধরনের আলোকচিত্র প্রযুক্তি, যা কোনো বস্তুর ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এ প্রযুক্তিতে তৈরি করা ত্রিমাত্রিক ছবি ‘হলোগ্রাম’ নামে পরিচিত। মূলত এ ধরনের ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরি করার জন্য লেজার, ইন্টারফারেন্স ডিফ্রাকশন, লাইট ইনটেনসিটি রেকর্ডিং এবং ইলিউমিনেশন অব দ্য রেকর্ডিং—এই চার প্রযুক্তির একটি কার্যকরী সমন্বয় ঘটানো হয়। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০১৪ সালে বিলবোর্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ডে মাইকেল জ্যাকসনের বিখ্যাত ‘মুনওয়াক’ ভিডিওটি দেখানো হয়। সেখানে মাইকেল জ্যাকসনের ভিডিও দেখে জীবন্ত মনে হচ্ছিল।

মুঠোফোন

মার্টিন কুপার, প্রথম ভ্রাম্যমাণ ফোনের আবিষ্কারক টাইম সাময়িকীতে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তাঁর মুঠোফোন আবিষ্কারের পেছনে বিখ্যাত টিভি ধারাবাহিক ‘স্টার ট্রেক: দ্য অরিজিনাল সিরিজ’ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। টিভি সিরিজে দেখানো হয় ক্যাপ্টেন ক্লার্ক তার কমিউনিকেটর ব্যবহার করে সাহায্য চাচ্ছে। সব ক্রু সদস্য সবার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য হাতে ধরে রাখা যন্ত্র ব্যবহার করছে। ভাঁজ করা যন্ত্র ব্যবহার করে এক গ্রহ থেকে আরেক গ্রহের সঙ্গে যোগাযোগ করছে, যা ফোল্ডিং মোবাইল ফোনের কথাই মনে করিয়ে দেয়। প্রায় ২০ বছর পরে ১৯৮৩ সালে সেটিই যেন বাস্তবে রূপ নিল মার্টিন কুপারের হাত ধরে।

ব্লুটুথ

তারহীন যোগাযোগের প্রযুক্তি প্রথম দেখা যায় অরিজিনাল স্টার ট্রেক সিরিজে। এখানে দেখানো হয় কমিউনিকেশন অফিসার লেফটেন্যান্ট উহুরা তাঁর কানে থাকা একটা যন্ত্রের মাধ্যমে মহাকাশে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এরপর স্টার ট্রেক: দ্য নেক্সট জেনারেশন–এও ক্রুদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য তারহীন যোগাযোগের যন্ত্র ব্যবহার করে। এ থেকে মূলত ব্লুটুথের মতো তারহীন যোগাযোগের ধারণাটা আসে। বিখ্যাত পণ্যনির্মাতা থিংগিক আসলে ‘স্টার ট্রেক: দ্য নেক্সট জেনারেশন’ সিরিজ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে পরবর্তীকালে ব্লুটুথ যন্ত্র তৈরি করে।

সর্বজনীন অনুবাদক

সর্বজনীন অনুবাদকের (ইউনিভার্সাল ট্রান্সলেটর) মতো আরেকটি অসাধারণ ধারণা আসে ‘স্টার ট্রেক: দ্য অরিজিনাল’ সিরিজ থেকে। ক্লার্ক এবং তাঁর সঙ্গীরা ছায়াপথে (গ্যালাক্সি) ঘুরে বেড়ানোর সময় এমনকি উহুরাও সব ভাষা জানতেন না। অন্য যেকোনো ভাষা বোঝার জন্য তারা যেকোনো ভাষার স্বয়ংক্রিয় অনুবাদের জন্য একটা যন্ত্র ব্যবহার করত। ভিডিও কল করার জনপ্রিয় সফটওয়্যার স্কাইপ ডেস্কটপ ও মোবাইল ফোনের জন্য সর্বজনীন অনুবাকদের মতো স্কাইপ অনুবাদক বানিয়েছে। ভিডিও কলে বলা কথাগুলো হেডফোনে অনুবাদ করে শুনিয়ে দেবে এই প্রযুক্তি। এ সম্পর্কে বিস্তারিত পাবেন http://bit.ly/M21SkypeTranslator ওয়েবসাইটে।

মানুষের মতো রোবট

ফ্রিৎজ ল্যাং পরিচালিত মেট্রোপলিস (১৯২৭) পৃথিবীর প্রথম দিককার সাই–ফাই ছবিগুলোর একটি। সাদাকালো এই সিনেমায় প্রথম মানুষ আকৃতির রোবট দেখানো হয়। যদিও মেট্রোপলিস সিনেমায় দেখানো রোবটটি অনেক কিছুই করতে পারত, যা এখনো উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়নি।

চালকবিহীন গাড়ি

টোটাল রিকল এবং আই, রোবট–এর মতো অনেক সিনেমাতেই চালকবিহীন গাড়ি দেখানো হয়েছিল। সিনেমাতে এমন এক বিশ্ব দেখাতে চেয়েছিল যেখানে কোনো গাড়ি দুর্ঘটনা হবে না, সময়ের অপচয় কমে যাবে। গুগলএক্সের উদ্ভাবকেরা কিছুদিন আগেই কল্পকাহিনিকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। গুগল এবং আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান চালকবিহীন গাড়ি কয়েক বছর ধরেই পরীক্ষামূলকভাবে রাস্তায় ছেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় চালকবিহীন গাড়ির দেখা মেলে এখন।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar