ad720-90

জানা-অজানা সিলিকন ভ্যালি


সিলিকন ভ্যালির অনেক একটি অফিসের অভ্যন্তর। ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক১৯৯৫ সালের আগস্ট। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে মাইক্রোসফটের কর্মীরা রীতিমতো উদ্‌যাপন করছেন। কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ-৯৫-এর সাফল্যে মধ্যরাতেও তাঁদের নাচ-গান করতে দেখা গেছে। ঠিক সে সময়ই যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সিলিকন ভ্যালি যেন আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে জেগে উঠছে। নেটস্কেপ নামের একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সবে যাত্রা শুরু করেছে। সেই সিলিকন ভ্যালিই আজ যেন প্রযুক্তির দিক থেকে পুরো বিশ্বের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছে।

নেটস্কেপ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য ওয়েবসাইট দেখার সফটওয়্যার নেটস্কেপ নেভিগেটর নিয়ে এসেছিল। এরপর মাত্র চার বছরে সিলিকন ভ্যালিতে চার শতাধিক প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে যায়। এসব কোম্পানির বেশির ভাগই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। ২০০০ সালে হঠাৎ বাজার ধসে পড়ল। চাকরি হারাল দুই লাখ মানুষ। হারিয়ে গেল সিলিকন ভ্যালিতে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা অনেক প্রতিষ্ঠানই। তবে এই জায়গাটার ক্ষেত্রে একটি বাক্য সত্যি: সিলিকন ভ্যালি ব্যর্থতাকে ইতিবাচক কিছুতে রূপান্তর করতে পারে। দৃশ্যপটে হাজির হয় আজকের সার্চ ইঞ্জিন গুগল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। এসব প্রতিষ্ঠানের চেষ্টা ছিল টেলিভিশনের সমান্তরালে ইন্টারনেটকে প্রতিষ্ঠা। এরপরই হাজির হয় ভিডিও দেখার ওয়েবসাইট ইউটিউব।

ফেসবুক প্রতিষ্ঠার পর মার্ক জাকারবার্গ সিলিকন ভ্যালির পালো আলটোতে তাঁর সদরদপ্তর স্থানান্তর করেন। এরই মধ্যে সান ফ্রান্সিসকোয় একদল সহকর্মী মিলে আরেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ে হাজির হলেন। ১৪০ বর্ণে মনের ভাব প্রকাশের এই মাধ্যম টুইটার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফেসবুকের চেয়েও এগিয়ে। ওদিকে কখনোই বসে ছিল না আরেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল। ১৯৯৭ সালে স্টিভ জবসকে ফিরিয়ে এনে প্রতিষ্ঠানটি যেন নবযাত্রা শুরু করে। এরপর বিশ্ব দেখল আইপড, আইফোনসহ আরও কত কী!

সিলিকন ভ্যালির জীবন কেমন?

একটি দৃশ্যপট দিয়ে শুরু করা যাক। পালো আলটোর পাশেরই একটি এলাকায় জশুয়া ব্রাউডার একটি বাড়িতে বাস করেন। ২০০৪ সালে ফেসবুকের যাত্রা শুরুর সময় এই বাড়িতেই ছিলেন মার্ক জাকারবার্গ। ব্রাউডার আর তাঁর সহকর্মীরা দিনরাত খেটে যাচ্ছেন একটি অ্যাপ তৈরি করতে। অ্যাপটির নাম ‘ডু নট পে’। অনেকটা রোবট আইনজীবীর মতো কাজ করবে এই অ্যাপ। এয়ারলাইনস ও হোটেল বুকিংয়ের ক্ষেত্রে ফাঁকির জায়গাগুলো খুঁজে বের করবে অ্যাপটি। জশুয়া ও তাঁর সহকর্মীদের জন্য এই বাড়িই থাকার জায়গা, এই বাড়িই কর্মক্ষেত্র।

তাই বলে সিলিকন ভ্যালির সব বাড়ি, সব ভবনের দৃশ্য যে এমন, তা কিন্তু নয়। এখানে অনেক কর্মীই আছেন, যাঁদের বেতন ছয় অঙ্কের। খরচটাও নেহাত কম না। মাঝারি আকৃতির একটি বাড়ি কিনতে গেলেই গুনতে হবে ১০ লাখ মার্কিন ডলার। অথচ মাত্র আট বছর আগে, ২০১১ সালে এমন একটি বাড়ির দাম হাঁকা হতো খুব বেশি হলে আড়াই লাখ ডলার। ভাড়াও কম নয়। দুই হাজার ডলারের নিচে বাড়ি ভাড়া তো পাওয়াই যায় না। বাংলাদেশি মুদ্রার হিসাবে বাড়িভাড়ার পেছনেই সিলিকন ভ্যালিতে ব্যয় হয়ে যায় কমপক্ষে পৌনে দুই লাখ টাকা। এক হিসাবে দেখা গেছে, সান ফ্রান্সিসকোয় একটি একক পরিবারের বার্ষিক ব্যয় কমপক্ষে ১৩ লাখ ডলার। সিলিকন ভ্যালির সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা সম্ভবত ইস্ট পালো আলটো। এখানে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বাস। এর উত্তরে ফেসবুক, আর দক্ষিণে গুগলের সদরদপ্তর।

সৌরশক্তিচালিত গাড়ি চোখে পড়ে সিলিকন ভ্যালিতেসিলিকন-চিপ উদ্ভাবন ও বাজারজাত করার কারণে এই এলাকার নাম হয়েছে সিলিকন ভ্যালি বা সিলিকন উপত্যকা। তবে এখন এখানে বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের রাজত্ব। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গুগল, অ্যাপল, ফেসবুক, টুইটার, ইয়াহু, অ্যাডব, ইবে, নেটফ্লিক্স, সিসকো, পেপ্যাল, ইন্টেল, এইচপি, ইউটিউব, উবার, প্যান্ডোরা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

একসময় সিলিকন ভ্যালিতে আফ্রিকান-আমেরিকান ও লাতিন আমেরিকানদের বসবাস ছিল। কিন্তু প্রযুক্তির বাজার যত বড় হয়েছে, তত সিলিকন ভ্যালিতে বিদেশি মুখের সংখ্যা বেড়েছে। চীন, জাপান, ভারত, কিউবাসহ নানা দেশের মানুষ এখানে বসবাস করে, কাজ করে। এক হিসাবে দেখা গেছে, কম্পিউটার ও গণিতের মতো ক্ষেত্রগুলোয় এখানকার মোট কর্মী গোষ্ঠীর ৬০ শতাংশই বিদেশি বংশোদ্ভূত। নারীদের ক্ষেত্রে অনুপাতটা আরও বেশি। ৭৮ শতাংশ নারী কর্মীই বিদেশি।

তবে সিলিকন ভ্যালির প্রতিষ্ঠানগুলোয় এখনো পুরুষের তুলনায় নারী কর্মীর সংখ্যা অনেক কম। এই সংস্কৃতিকে বলা হয় ‘ব্রো কালচার’ বা ‘ভাই সংস্কৃতি’। গুগল, অ্যাপল ও ফেসবুকে পুরুষের তুলনায় ৩০ শতাংশের কিছু বেশি নারী কর্মী রয়েছেন। গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, পুরুষের তুলনায় মাত্র ১৩ শতাংশ নারী স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন। তবে এই হার ধীরে ধীরে বাড়ছে। প্রযুক্তি খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে কাজ করা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অনিতাবি.ওআরজি গত বছর ৮০টি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করে। এতে দেখা যায়, ২০১৮ সালে সিলিকন ভ্যালের ২৪ শতাংশ কারিগরি কাজের দায়িত্ব পালন করেছেন নারীরা। ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে নারীরাই প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়েছেন। পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রেও সিলিকন ভ্যালিতে নারীরা বৈষম্যের শিকার। পুরুষ কর্মীদের তুলনায় তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই ৪ শতাংশ পর্যন্ত কম পারিশ্রমিক পান।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক অবলম্বনে





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar