ad720-90

যন্ত্রের ভাষা শেখা


যন্ত্রে ভাষা শেখার কারণে অনেক কাজই এখন সহজআমরা এখন বাস করছি এক স্মার্ট সময়ে। আমাদের হাতের স্মার্টফোনটি এখন আমাদের কথা বুঝতে পারে। আমরা বাংলা বা ইংরেজি যে ভাষাতেই কথা বলি না কেন, সেটি তা অনুবাদ করে দিতে পারে। অনেকেরই হয়তো আগ্রহ থাকতে পারে যে ছোট্ট এ স্মার্টফোনটি কীভাবে এত কিছু করতে পারে! এর কারিগরি দিকটি বুঝতে হলে কম্পিউটারবিজ্ঞানের গবেষণার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। মানুষের বুদ্ধিমত্তার কাছাকাছি বিভিন্ন কাজগুলো একটি যন্ত্র বা রোবট যেন করতে পারে, তা নিয়ে যে গবেষণা করা হয় তাকে বলা হয় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। নাম থেকেই বোঝা যায় আসলে যন্ত্রটির সত্যিকারের বুদ্ধিমত্তা বলতে কিছুই নেই, সেটি আদতে একটি নিরেট যন্ত্র বৈ আর কিছু নয়। কিন্তু যন্ত্রটির মানুষের বুদ্ধিমত্তার অনুকরণ করার এক অদ্ভুত শক্তিশালী একটা ক্ষমতা আছে। এই শক্তিশালী ক্ষমতাকেই বলা হয় মেশিন লার্নিং। এই পদ্ধতিতে যন্ত্রও এখন বাংলা শেখে। বাংলায় অনুবাদ করা যায়, কথা বলে নির্দেশনা দেওয়া যায় যন্ত্রকে।

মেশিন লার্নিং কী?

কম্পিউটারকে এমন একটি ক্ষমতা দেওয়া হয় যার জন্য সেটি যেকোনো কিছু আগে থেকে ওই বিষয়ক প্রোগ্রাম লেখা ছাড়াই শিখতে পারে—এটিই মেশিন লার্নিং। নিজে থেকে শেখার ক্ষমতার কারণে কম্পিউটার যেকোনো কিছুই করতে পারে খুব সহজে। অন্যভাবে বলা যেতে পারে, যদি কম্পিউটারের খেলার সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি তার জেতার হার বেড়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে সেই কম্পিউটারটি আসলেই শিখছে। মানে সে খেলতে খেলতে শিখছে, আর নিজে থেকে এই শেখার ক্ষমতাকেই বলে মেশিন লার্নিং।

বোঝার ক্ষমতা

মানুষের যেমন পাঁচটি ইন্দ্রিয় রয়েছে, তারই অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে কম্পিউটার প্রকৌশলের বিভিন্ন গবেষণার ক্ষেত্র। চোখ দিয়ে দেখার যে ক্ষমতা, তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘কম্পিউটার ভিশন’। কান দিয়ে কথা শোনার যে ক্ষমতা, তার নাম দেওয়া হয়েছে “স্পিচ টু টেক্সট”। নাক দিয়ে ঘ্রাণ নেওয়ার যে ক্ষমতা, তার নাম দেওয়া হয়েছে “ইলেকট্রনিক নাক”, যা বড় পরিসরে “প্যাটার্ন রিকগনিশন” নামক গবেষণার ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত। স্পর্শ করার ক্ষমতা এখন সব স্মার্টফোনেই রয়েছে, যা “টাচ সেন্সর” নামে পরিচিত। খাবারের স্বাদ গ্রহণের যে ক্ষমতা, তা সম্ভবত সবচেয়ে জটিল এবং যন্ত্রের জন্য অপ্রয়োজনীয় বলেই হয়তো এ নিয়ে খুব একটা গবেষণার কাজ দেখা যায় না। ওপরের এই গবেষণার দিকগুলো চিন্তা করলে বলা যেতে পারে যে আমাদের স্মার্টফোনগুলো এখন স্পর্শ, দেখা এবং শোনা; এই তিনটি ইন্দ্রিয়ের কাজ বেশ ভালোভাবেই করতে পারে।

পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের বাইরেও মানুষের আরও বিভিন্ন ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে আরও বিভিন্ন ক্ষেত্র। যেমন মুখ দিয়ে কথা বলার জন্য যে ক্ষমতা, তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘টেক্সট টু স্পিচ’। ভাষা অনুবাদ করার যে ক্ষমতা, তাকে বলা হয় ‘মেশিন ট্রান্সলেশন’।

গবেষণা চলছে নিরন্তর

এসব গবেষণার ক্ষেত্রেই মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে গবেষকেরা এখন কাজ করছেন। মেশিন লার্নিংকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন সুপারভাইজড লার্নিং, আন-সুপারভাইজড লার্নিং, সেমি-সুপারভাইজড লার্নিং, এবং রি-ইনফোর্সমেন্ট লার্নিং।

সুপারভাইজড লার্নিংয়ের জন্য প্রয়োজন হয় মানুষের তৈরি করা প্রশিক্ষণ উপাত্ত (ডেটা)। একটি প্রোগ্রামকে এই উপাত্তের ভিত্তিতে প্রশিক্ষিত করা হয়, যার ওপর ভিত্তি করে প্রোগ্রামটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। সমগ্র প্রক্রিয়াটিকেই সুপারভাইজড লার্নিং বলা হয়। যেমন আমাদের মেইলের ইনবক্সে আসা মেইলটি স্প্যাম কি না এই সিদ্ধান্ত আগের কিছু তথ্যের ওপর নির্ভর করে দেওয়া হয়।

প্রোগ্রামে কিছু তথ্য দেওয়া হয় এবং প্রোগ্রাম সেটার ওপর নির্ভর করেই সব ধরনের সিদ্ধান্ত দেয় কিন্তু এ ক্ষেত্রে ফলাফল বা আউটপুট কী সেটা কোথাও বলা থাকে না। প্রোগ্রাম নিজ থেকেই সেটা বুঝে বের করে নেয়। আর একেই আন-সুপারভাইজড লার্নিং বলা হয়। যেমন একটি শ্রেণিকক্ষে কয়েকজন ছাত্রছাত্রী বসে রয়েছে। এই প্রোগ্রাম ছাত্র ও ছাত্রীদের ভিন্ন ভাগে ভাগ করবে, এটা হচ্ছে আন-সুপারভাইজড লার্নিং।

সুপারভাইজড এবং আন-সুপারভাইজড লার্নিংয়ের কম্বিনেশনকে সেমি-সুপারভাইজড লার্নিং বলে।

করপোরেট দুনিয়ায় এখন মেশিন লার্নিংয়ের পাশাপাশি রোবটিক প্রসেস অটোমেশন (আরপিএ) পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই পদ্ধতির ফলে বিভিন্ন যন্ত্র মানুষের বারবার করা কাজগুলো শিখে সেগুলো নিজেরাই করে নিচ্ছে। বাংলাদেশে এখনো এর ব্যবহার নেই। যদি এই পদ্ধতি বাংলাদেশে ব্যবহার করা যেত, তাহলে বাংলাদেশের জনবলকে আরও দক্ষ করা যেত।

নিত্য আবিষ্কারে প্রশিক্ষিত যন্ত্র

সাম্প্রতিক নিত্যনতুন আবিষ্কার এই মেশিন লার্নিংকেই করে তুলেছে তুমুল জনপ্রিয় এক গবেষণার ক্ষেত্র। মেশিন লার্নিং ব্যবহার করেই আপনি বাংলায় কথা বলে গুগলের জিবোর্ড বা অক্ষর বাংলা কি–বোর্ড লিখতে পারে। এই প্রযুক্তি দিয়েই গুগলে ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ হয়, আবার গুগল সেটা পড়েও শোনাতে পারে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য যা বেশ কাজের। যত বেশি ব্যবহার হবে এসব তত বেশি উন্নত হবে।

যে কেউ চাইলেই মেশিন লার্নিং নিয়ে কাজ করতে পারেন। এর জন্য পাইথন প্রোগ্রামিংয়ের ভালো ধারণা থাকতে হবে। যেহেতু মেশিন লার্নিংয়ের সব গণিতভিত্তিক, তাই উচ্চস্তরের জ্ঞান থাকতে হবে বীজগণিত, পরিসংখ্যান ও ক্যালকুলাসে। মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সহজলভ্য করার জন্য কাজও হচ্ছে দেশে।

লেখক: প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা, কাজী আইটি সেন্টার লিমিটেড।
ই-মেইল: [email protected]





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar