ad720-90

নবোদ্যমে আসছে গাড়ির পুরোনো ‘ব্রেক’


নিশান লিফ ইলেকট্রিক কার।গাড়ির প্রযুক্তিতে ব্রেকিংয়ের ক্ষেত্রটিতে ব্যাপক বদল এসেছে। এখন আবার পুরোনো ধাঁচ নতুন করে ফিরে আসছে। ‘রিজেনারেটিভ ব্রেকিং’ বা সংক্ষেপে ‘রিজেন’ ব্রেকিং প্রযুক্তি তেমনই একটি বিষয়। একে বৈদ্যুতিক নিয়ন্ত্রিত ব্রেকিং পদ্ধতিও (ইলেকট্রিক্যালি কন্ট্রোলড ব্রেকিং) বলে। ১৯৮৪ সালে লুই অ্যান্টনি ক্রেগার বৈদ্যুতিক শক্তিচালিত অশ্বহীন গাড়ি তৈরির সময় একটি নতুন ফিচার যুক্ত করেন, যা ওই সময় বৈদ্যুতিক ট্রেনে ব্যবহার করা হতো।

চালক যখন গাড়ির গতি কমিয়ে দিতেন, তখন জেনারেটরের মতোই ক্রেগারের গাড়ির সামনের চাকাকে চালানোর মোটরটি উল্টো দিকেও নিতে পারত। গাড়ির সামনে চলার গতি থেকে থেকে গতিশক্তি (কাইনেটিক এনার্জি) পুনরুদ্ধার করে তা বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তর করতে পারে এবং তা ব্যাটারিতে ভর্তি করতে পারে। এর আরেকটি সুবিধাও ছিল। এভাবে হারানো শক্তি সংগ্রহ করার সময় একটি কার্যকর গতিরোধক প্রভাব (ব্রেকিং) উৎপন্ন করে, যাতে গাড়ির গতি কমে যায়। এতে চালককে মেকানিক্যাল ব্রেকের মতো কৌশলী ব্রেকের প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে না।

ইকোনমিস্টের তথ্য অনুযায়ী, ক্রেগারের ব্যবহৃত সেই প্রযুক্তিই এখন ‘রিজেনারেটিভ ব্রেকিং’ হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনাল-কম্বাসটন ইঞ্জিনের ব্যবহার বাড়ার পর থেকে এ ধরনের ব্রেকিং পদ্ধতির ব্যবহার প্রায় ভুলতে বসেছিলেন চালকেরা। এখন পেট্রল ও ডিজেলচালিত গাড়ির বিক্রি বাড়ার পাশাপাশি নতুন ইলেকট্রিক বা বৈদ্যুতিক গাড়ি ও হাইব্রিড গাড়ি বাজারে আসছে বলে ‘রিজেনারেটিভ ব্রেকিং’ পদ্ধতি ফিরে আসার পথ তৈরি হয়েছে।

এর মূল সুবিধা হচ্ছে গাড়ি চার্জ দেওয়ার পর থেকে তা গাড়িকে বেশি দূর যেতে সাহায্য করবে। উদাহরণ হিসেবে অডির ই-ট্রন এসইউভির কথা বলা যায়। অডির দাবি, রিজেনারেশনের কারণে তাদের ৪০০ কিলোমিটার সীমা পর্যন্ত ধরা সম্ভব হয়েছে। এখানে ৩০ শতাংশ রিজেনারেশনের অবদান। অটোমেটিক গিয়ার বক্স যেমন ক্লাচের জন্য সুবিধা করে দেয়, তেমনি রিজেন ব্রেকিং এক পেডালের অভিজ্ঞতাকে দারুণ সুবিধা করে দেবে।

ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ারিং পরামর্শক রিকার্ডোর গাড়ি বিশেষজ্ঞ মার্টিন টলিডের মতে, রিজেন পদ্ধতি গাড়ি চালনার ক্ষেত্রে পৃথক পথের দিকে যেতে উৎসাহ দিচ্ছে। টেসলা মডেল–৩–এর মতো গাড়িগুলো চালকদের বেপরোয়া বা হালকাভাবে গাড়ি চালানোর স্তর বেছে নেওয়ার সুবিধা তৈরি করেছে। গাড়ি নির্মাতারা এ ধরনের গাড়িতে বিভিন্ন সেন্সর যুক্ত করেছে, যাতে রেজেন ব্রেকিংয়ের শক্তি একটি স্তরে পৌঁছানোর পর তার বাতি জ্বলে উঠবে।

ইকোনমিস্ট বলছে, রেজেন ব্রেকিং পদ্ধতিকে অন্য ব্রেকিংয়ের পাশাপাশি ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিছু গাড়ির মডেলে চালক ব্রেকে সামান্য স্পর্শ করলে তখন শুরুতে ফ্রিকশন ব্রেকের প্রয়োগ না হয়ে রেজেন ব্রেক চালু হবে।

জাপানের গাড়ি নির্মাতা নিশান এ ধারণাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। তাদের লিফ ইলেকট্রিক কারে একটি সুইচ রয়েছে, যাকে ইপেডালে বলা হচ্ছে। এতে একটি একক প্রক্রিয়াতে অ্যাকসিলারেশন ও ব্রেকিং চালু হয়। অন্যান্য বৈদ্যুতিক গাড়িতে পেডালের ওপর চাপের পরিমাণ কমালে রিজেন ব্রেকিং কাজ শুরু করে। ইপেডালে চাপ সরিয়ে নিলে ফ্রিকশন ব্রেক প্রয়োগ শুরু হয়। লিফে অবশ্য এখনো ব্রেক পেডাল রয়েছে। তবে তা জরুরি প্রয়োজনের জন্য। স্বাভাবিক রাস্তায় ইপেডাল চালকের ৯০ শতাংশ চাহিদা মেটাতে পারে। এতে চালককে এক পেডাল থেকে আরেক পেডালে পা সরাতে হয় না। একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে তখন সহজে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

রিজেন ব্রেকিংয়ের ব্যাপক ব্যবহার শুধু চালকদের নয়, গাড়ি মেরামত বা গাড়ির যন্ত্রাংশ নির্মাতাদের ওপরেও প্রভাব ফেলবে। প্রচলিত ব্রেক হুইল হাবের ডিস্কের ওপর একসেট ফ্রিকশন প্যাড জোরে চেপে ধরার কাজটি করে। এই ফ্রিকশন অনেক সময় ছিঁড়ে যায়। প্যাড ও ডিস্ক বদলাতে হয় বারবার। রিজেন ব্রেকিংয়ের ফলে এসব যন্ত্রাংশ বেশি দিন টিকবে।

কবে নাগাদ ব্রেক পেডালের সমাপ্তি ঘটবে, তা নিয়ে এখনই বলার মতো অবস্থায় আসেনি। অনেক গাড়িতে স্বয়ংক্রিয় ব্রেকিং চালু হয়েছে। এতে দুটি গাড়ি কাছাকাছি হলে রাডার সেন্সর ব্রেক প্রয়োগ করবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে চালককে সেন্সরের ওপর ভরসা করার সময় প্রায় এসে গেছে।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar