ad720-90

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আধুনিক রূপই লক্ষ্য


প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ করেন অ্যাডি সফটের কর্মীরা। ছবি: সুমন ইউসুফঅ্যাডি সফট লিমিটেড, শুরু থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার ওয়েবভিত্তিক সফটওয়্যার তৈরি করে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশের ২০০-এর বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্র ছাড়াও করপোরেট খাতে ইনভেন্টরি ব্যবস্থাপনা, হিসাবরক্ষণ, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার, এসএমএস গেটওয়েসহ যেকোনো ফরমায়েশি সফটওয়্যার তৈরি করে থাকে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে শতাধিক উদ্যমী ও দক্ষ তরুণ একটি দলকে সঙ্গে নিয়ে অ্যাডি সফট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাকিব রাব্বানী কাজ করে যাচ্ছেন। অ্যাডি সফট লিমিটেডের গল্প শোনাচ্ছেন শাকিব রাব্বানী।

শুরুর কথা

অ্যাডি সফট লিমিটেডের যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। শাকিব রাব্বানী তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ব্যবসা শুরু করার আগে বিভিন্ন ব্যবসা নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়নের কাজ করতে করতে দুই বছর চলে যায়। আরএনডির মাধ্যমে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসাকে বেছে নেন। শাকিব রাব্বানী বলেন, তখন শিক্ষা খাতে প্রযুক্তিনির্ভর তেমন কোনো পণ্য বাজারে ছিল না বা শুরু হয়নি। তাই শিক্ষা খাতে কাজ করলে ভালো করা যাবে, সেই চিন্তা থেকেই কাজ শুরু। একই সঙ্গে শিক্ষা খাতে কাজ করলে সামাজিক দায়বদ্ধতাও পূরণ করা হবে। এরপরই আমরা শিক্ষা বেইজড প্রযুক্তি ব্যবসা শুরু করি। আমাদের কয়েকজন বন্ধু মিলে এই ব্যবসার স্বপ্নটা দেখি। লেখাপড়ার পাশাপাশি টিউশনি করছি এবং টিউশনির টাকাটা জমিয়ে জমিয়ে প্রথমে ব্যবসা শুরু করি।

ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা

শিক্ষা খাতে ব্যবসা করলে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে পারব, সেটা শুরুতেই বুঝতে পেরেছিলাম। যেহেতু আমরা টিউশনি ও কোচিং করাতাম, তাই আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে ভালো ধারণা ছিল। শুরু থেকেই শিক্ষার প্রতি একটা ভালো লাগা ছিল, ব্যবসা শুরু করার পর সেটা আস্তে আস্তে ভালোবাসায় রূপ নেয়। সেই সময় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভর্তি, বেতন কালেকশন, হিসাব সংরক্ষণ ও রেজাল্টসহ পুরো সিস্টেমটা ছিল কাগজে-কলমে। এই ম্যানুয়েল সিস্টেমটাকে কীভাবে অটোমেটেড করতে পারি, সেটাই ছিল আমাদের প্রাথমিক টার্গেট।

শুরুর সময়ে বাধা

শিক্ষা খাতে কাজ করতে গিয়ে শুরুতে কিছুটা বাধার মধ্যে পড়ে অ্যাডি সফট। শাকিব রাব্বানী বলেন, ‘শুরুর দিকে কোনো প্রতিষ্ঠানই তাদের ম্যানুয়েল কার্যক্রমকে কীভাবে সফটওয়্যারের আওতায় নিয়ে আসা যায়, তার জন্য সঠিক কোনো রিকোয়ারমেন্ট দিতে পারত না। তখন আমরা নিজেরাই আরএনডি করে ডেস্কটপ বেইজড একটা সফটওয়্যার তৈরি করি। এরপর কিছু প্রতিষ্ঠানে আমরা বিনা মূল্যে এটি ব্যবহার করতে দিই। তখন আমরা তাদের অভিজ্ঞতা ও চাহিদাগুলো বোঝার চেষ্টা করি এবং প্রয়োজনীয় আপডেট করতে থাকি। ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত আমরা পুরো সময়টা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবেই কাজ করি। এটা করতে গিয়ে আমাদের অনেক আর্থিক কষ্ট করতে হয়েছে।’

নতুন বাজার তৈরি ও সম্প্রসারণ

শিক্ষা খাতের সফটওয়্যারের বাজার তৈরি করার জন্য শুরু থেকেই অ্যাডি সফট কাজ করেছে। শুনুন শাকিব রাব্বানীর মুখেই, ‘আমরা যখন সফটওয়্যার নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিপণন করতে গেছি, তখন অনেকের এই সম্পর্কে সঠিক ধারণা ছিল না! তখন আমরা সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কার্যকরী সেমিনার আয়োজন করি যেখানে, প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের হাতে-কলমে বোঝানো হয় যে, এই শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সফটওয়্যারটি দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পুরো ব্যবস্থাকে অনেক সহজভাবে পরিচালনা করা যায়। এবং এর মাধ্যমে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনার আওতায় নিয়ে আশা যায়। এভাবেই সব প্রতিকূলতার মধ্যে আমরা আমাদের কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাই।’

টার্নিং পয়েন্ট

আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে, ২০১১ সালে অ্যাডি সফট ওয়েববেইজড সফটওয়্যার তৈরিতে মনোনিবেশ করে। ওয়েববেইজড সফটওয়্যারে কাজ করতে গিয়ে অ্যাডি সফট বড় একটা সুযোগ পেয়ে যায়। ‘২০১২ সালে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সফটওয়্যার তৈরির দায়িত্ব পাই আমরা। এটা আমাদের জন্য একটা টার্নিং পয়েন্ট। তারপর ধীরে ধীরে বাংলাদেশের সুপরিচিত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়েববেইজড সফটওয়্যার তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়। এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সফটওয়্যারটির পরিসর আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ শাকিব রাব্বানীর সরল স্বীকারোক্তি।

অধ্যয়ন এডুকেশন ইআরপি

শিক্ষা খাতে সবচেয়ে পুরোনো সফটওয়্যার তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডি সফট লিমিটেডের ফ্ল্যাগশিপ প্রোডাক্ট হচ্ছ‘অধ্যয়ন এডুকেশন ইআরপি’। প্রতিষ্ঠানটির এই ইআরপি সফটওয়্যারটির মাধ্যমে বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি কাজের সংখ্যা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সেবার মানের দিকেও বেশি নজর দিচ্ছে। সময়ের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুগোপযোগী মডিউল, ওয়েব পোর্টাল, মোবাইল অ্যাপস, হার্ডওয়্যার ও এপিআই যোগাযোগ এবং ক্লায়েন্ট সার্ভিসের সমন্বয়ে তৈরি অধ্যয়ন। দৃঢ়তা, সমন্বয়তা, সহজবোধ্যতা, নিরাপত্তা—এই চারটি অধ্যয়নের মূল ভিত্তি। অধ্যয়ন সফটওয়্যার, ওয়েব এবং অ্যাপসের একটি সেন্ট্রাল প্ল্যাটফর্ম। এর মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সাহায্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিক্ষার্থীদের বেতন গ্রহণ করা যায়। শিক্ষা খাতে যেকোনো সফটওয়্যার থেকে অধ্যয়ন এডুকেশন ইআরপি সফটওয়্যারটির রয়েছে অধিক ব্যবহারবান্ধব ইন্টারফেস। যে কেউ শুধু কম্পিউটারের প্রাথমিক ধারণা থেকে পরিচালনাযোগ্য। প্রত্যেক ব্যবহারকারীর জন্য আছে নিজস্ব আইডি ও পাসওয়ার্ড। এতে রয়েছে ক্লাউডবেইজড ডেটা হোস্টিং। রয়েছে সার্বক্ষণিক ডেটা ব্যাকআপ। আরও রয়েছে ড্যাশবোর্ড, অনলাইন ভর্তি, শিক্ষার্থীদের তথ্যাবলি , বেতন গ্রহণসহ বিভিন্ন ফিচার।

সাফল্য

অ্যাডি সফট লিমিটেড, সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৮ সালে বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ডে চ্যাম্পিয়ন হয়। এ ছাড়া ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সফটওয়্যার তৈরি তাদের একটি অন্যতম সফলতা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ভিকারুননিসার জন্য কোন প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যার তৈরি করবে, সেটা নির্বাচন করে দেয়। অনেক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বুয়েট অ্যাডি সফট লিমিটেডকে নির্বাচন করে। এটা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অনেক বড় একটি সাফল্যের পালক।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar