ad720-90

টাঙ্গাইলের সাইফুল একজন সফল ফ্রিল্যান্সার


ভাবতেই অবাক লাগে?  কিন্তু সত্যিই মাত্র ১৫ বছর বয়সেই একজন সফল ফ্রিল্যান্সার।  ফ্রিল্যান্সিং বাংলাদেশের  জন্য একটি সম্ভাবনাময় পেশা। ফ্রিল্যান্সিং আর ইচ্ছাশক্তির  মাধ্যমে যেকেউ তার ভাগ্যের  চাকা ঘুরাতে পারেন। আর ঠিক সে ভাবেই ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন মো. সাইফুল ইসলাম। নিজের লেখাপড়ার খরচ এবং পরিবারের আর্থিক চাহিদা মিটিয়ে এখন পরিবারের সকলের আদরের সাইফুল ইসলাম। তিনি টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার বেরিবাইদ ইউনিয়নের চুনিয়া (ফয়টামারী) গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে এবং আউশনারা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র।

তিনি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও ডিজাইন, এসইও, গ্রাফিক্স, ব্লগে লেখালেখির কাজ করে থাকেন।

তার ওয়েবসাইট; www.net21bd.com

ফেসবুক www.facebook.com/netbdbosssaiful ফেসবুক পেইজ: www.facebook.com/saiful.official.netmaster

নিউজ টাঙ্গাইলের সাথে শফিকুল ইসলামের মুঠোফোনের কথোপথনটি তুলে ধরা হলো:

নিউজ টাঙ্গাইল : আপনার ফ্রিল্যান্সিং জীবন শুরু কিভাবে?

সাইফুল ইসলাম  : আমি ২০১৫ সাল থেকে ইন্টারনেটে ওয়েব ডিজাইন শেখা শুরু করি। তখন আমার কম্পিউটার ছিল না। তাই মোবাইলের মাধ্যমেই শিখতাম আর মোবাইল ওয়েব সাইট তৈরি করতাম। যদিও তখন জানতাম না যে ইন্টারনেটের মাধ্যমেও আয় করা যায়। পরে ২০১৬ সালের  সেপ্টেম্বর মাসে ফেসবুকে সক্রিয় হওয়ার পর ফ্রিল্যান্সিং শব্দের সাথে পরিচয়। তখন ২-৩টা কাজ করেছিলাম আর্টিকেল রাইটিং, এসইও এর। তবে সেগুলো নিয়মিত ছিলনা। এরপর ২০১৭ সালে ইউটিউবে ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখার পর আমি বুঝতে পারি একটা ওয়েবসাইটের স্ট্রাকচার কেমন হওয়া উচিত, ক্লায়েন্টদের সাথে কেমন কাজ করতে হয়।যেহেতু আগে থেকেই আমি মোটামুটি HTML, CSS এগুলো শিখে ফেলেছিলাম, তাই বুঝতে সুবিধা হয়েছিল। এভাবেই আমার শেখার শুরু। এরপর পুরোপুরিভাবে কাজ শুরু করি ২০১৮ সালে।

সাইফুল ইসলাম : ফ্রিল্যান্সিং এ প্রথম কোন কাজ করেছিলেন এবং প্রথম পেমেন্ট কত পেয়েছিলেন?

সাইফুল : প্রথম কাজ করেছিলাম একটা SEO এর। সেটা ছিল মাত্র ৬ ডলারের। কাজটা ছিল ১০টা লিঙ্ক খুজে দেয়ার। তারপর একটা বিজনেস কাড এর order পেলাম।  তারপর ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও ডিজাইন এর কাজ করতে শুরু করলাম।

নিউজ টাঙ্গাইল : ফ্রিল্যান্সিংয়ে আসার জন্য সবচেয়ে বেশি  উৎসাহ  পেয়েছিলেন কোথা থেকে?

সাইফুল ইসলাম : আজ থেকে ৩ বছর আগে পরিবারে যখন অভাব অনটন লেগেই থাকতো তখন মনে মনে ভাবতাম আমাকে অবশ্যই কিছু করতে হবে। আগে থেকেই ওয়েব ডিজাইনটা জানতাম। সেটার উপর ভরসা করেই শুরু করে দিয়েছিলাম। মূলত এই জিদের কারণেই ফ্রিল্যান্সিং এ আসা। আর ফেসবুকে তখন দেখতাম যে অনেকেই ভাল করছে। ওখান থেকে উৎসাহ পেতাম।

নিউজ টাঙ্গাইল : পড়ালেখা পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং কে কিভাবে দেখেন?

সাইফুল ইসলাম : আমি নিজে একজন ছাত্র। তাই আমি যদি বলি পড়ালেখার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করা যায় না, তাহলে মিথ্যা বলা হবে। তবে এই পড়ালেখারও একটা লেভেল আছে। পড়ালেখার পাশাপাশি আপাতত বেসিকগুলাও জানা আবশ্যক।  তাহলে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মানের ফ্রিল্যান্সার হয়ে উঠার পথ সুগম হবে।

নিউজ টাঙ্গাইল : ফ্রিল্যান্সিং এ ভালো পারফরমেন্স করার জন্য কি কি যোগ্যতা থাকা উচিত?

সাইফুল ইসলাম : প্রবল ইচ্ছাশক্তি,  ধৈর্য্য আর পরিশ্রম করার মানসিকতা আর বিনয়।

নিউজ টাঙ্গাইল : একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার মুলমন্ত্র কি কি?

সাইফুল ইসলাম : আমি মনে করি শুধু সফল ফ্রিল্যান্সার না, যেকোনো কাজে সফল হওয়ার মূলমন্ত্র হলোঃ -নিজের ইচ্ছাকে জানা। -যা কিছু হোক না কেন, লক্ষ্য ঠিক রাখা। -কঠোর পরিশ্রম করা। -বিনীত হওয়া। কারন, আমরা বেশিরভাগ মানুষই নিজের ইচ্ছা কী বা আমরা কোন কাজ করতে বেশি স্বাছন্দ্যবোধ করি সেটাই জানি না বা জানার চেষ্টা করি না। কিন্তু এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

নিউজ টাঙ্গাইল : বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং একটি সম্ভাবনাময় পেশা। কিভাবে বাংলাদেশ এ সুযোগকে আরও বেশি কাজে লাগাতে পারে?

সাইফুল ইসলাম : বাংলাদেশ এ ফ্রিল্যান্সিং পেশাকে কাজ লাগানো উচিত। প্রথমেই এসব ৫ দিনের ট্রেনিং, ১০দিনের ট্রেনিং বাদ দিয়ে, দলবেঁধে সবাইকে না শিখিয়ে যারা এসব কাজ মোটামুটি পারে তাদেরকে আরো ভাল প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে পারলে এই সেক্টরে অনেক উন্নতি আনা সম্ভব। মাথায় রাখা উচিৎ যে, ফ্রিল্যান্সিং ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাঙ্কারদের মতই একটা পেশার নাম। সবার জন্য ফ্রিল্যান্সিং না।ফ্রিল্যান্সিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা সেক্টর।

নিউজ টাঙ্গাইল : ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কাজ করতে সরকারের কাছে কি কোনো চাওয়া আছে?

সাইফুল ইসলাম : প্রথমে পেমেন্ট ব্যবস্থাটাসহজলভ্য করা উচিৎ। আমরা এখনো পেপাল পাই নি। আর গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা বাড়াতে হবে, নাহলে এই সেক্টরে নতুনরা আসার সুযোগ পাবে না। তাই সরকারের কাছে আমার অনুরোধ পেমেন্ট ব্যবস্থাটা সহজলভ্য করা হোক।

নিউজ টাঙ্গাইল: বায়াররা বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের কেমন মূল্যায়ন করে বলে মনে করেন?

সাইফুল ইসলাম: ভালো খারাপ দুইটা দিকই আছে। একটা কথা আছে, “আপনি ভালো তো জগত ভালো”। আপনি যদি বায়ারের সাথে সঠিকভাবে ডিল করেন, বায়ার আপনাকে তেমনভাবেই মূল্যায়ন করবে। বায়াররা সাধারনত ফ্রিল্যান্সার কোন দেশের সেটা দেখে না। তারা কাজ ভাল পেলেই খুশি। কিন্তু কিছু কিছু বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারের কারনে অনেক বায়ার বাংলাদেশীদের সাথে কাজ করতে চায় না। যেটা দুঃখজনক। ঠিক তেমনি অনেক বায়ার কিন্তু বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারদের কাজ থেকে অনেক ভালো কাজ পেয়ে আবার আমাদেরকেই হায়ার করতে চায়।

নিউজ টাঙ্গাইল : আপনি নিজেকে এখন থেকে পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে কোথায় দেখতে চান?

সাইফুল ইসলাম: আমার কিছু স্বপ্ন আছে, সেগুলো পূরন করতে চাই। ৫ বছর পরেও নিজেকে একটা হাসিখুশি, ভালোমানুষ হিসেবে দেখতে চাই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।

নিউজ টাঙ্গাইল : নতুন যারা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চায় তাদের জন্য কি গাইড লাইন দিবেন?

সাইফুল ইসলাম : ইচ্ছাশক্তি প্রবল থাকতে হবে।  আগেই বলেছি, নিজের ইচ্ছাকে জানতে হবে। আপনার পরিচিত কোন বড় ভাই বা আপু কোনো কাজ করে সফল হয়েছে মানে এই না আপনিও ঐ কাজ করে সফল হবেন বা ঐ কাজ শিখতে পারবেন। যদি আপনি ফ্রিল্যান্সিং পেশায় আসতে চান, আগে ঠিক করুন আপনি কোন কাজটা করতে বেশি স্বাছন্দ্যবোধ করছেন। যদি কাজগুলোর সম্পর্কেই না জানেন তাহলে ইন্টারনেটে আগে কাজগুলো সম্পর্কে জানুন, যারা জানে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করুন। এরপর ঠিক করুন আপনি কোন কাজ করতে পারবেন। আর তারপর শেখার জন্য রিসোর্সের অভাব নেই ইন্টারনেটে। শুধু খুঁজে নেওয়ার অপেক্ষা।

নিউজ টাঙ্গাইল: নতুন বা ভবিষ্যৎ ফ্রিল্যান্সারদের আরও উৎসাহিত করতে আপনার কোন উপদেশ আছে কি?

সাইফুল ইসলাম : সবার জীবনেই কষ্টের সময় আসে। আর কষ্টের সময়ে যারা ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারে, তারাই সফল হয়। যারা কষ্টের কাছে হার মানে তারা হারিয়ে যায়। যদি সফল মানুষদের জীবনগাঁথা পড়েন, দেখবেন সবাই একসময় অনেক কষ্ট পেয়েছে, কিন্তু ধৈর্য্য হারায় নি। তাই, জীবনের কষ্টের সময়ে আশা না হারিয়ে কাজ করতে থাকুন, লেগে থাকুন। সফলতা আসবেই।

নিউজ টাঙ্গাইল: ধন্যবাদ আপনাকে।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar