ad720-90

গণশুনানিতে স্বয়ং বিটিআরসির চেয়ারম্যান নিজেও অসন্তুষ্ট


লাস্টনিউজবিডি,১২ জুন: ‘টেলিযোগাযোগ সেবা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রম’ সম্পর্কিত এক গণশুনানিতে মানুষের অসন্তুষ্টির সঙ্গে স্বয়ং বিটিআরসির চেয়ারম্যানও নিজের ভোগান্তি ও অসন্তুষ্টির কথা জানান।

বুধবার সকাল ১১ টায় রমনায় ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) এই শুনানি শুরু হয়। এতে প্রায় ৩০০ জনের মতো উপস্থিতি দেখা গেছে। তিন ঘন্টার এই গণশুনানিতে ৫০টির মতো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়।

বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মোঃ জহুরুল হক, কমিশনার (স্পেকট্রাম) মোঃ আমিনুল হাসান, কমিশনার (ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স) মোঃ রেজাউল কাদের, কমিশনার (সিস্টেম এন্ড সার্ভিসেস) প্রকৌশলী মোঃ মহিউদ্দিন আহমেদ এবং কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহের মহাপরিচালকরা এসব প্রশ্নের উত্তর দেন।

বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক বলেন, মোবাইলে বিজ্ঞাপন নিয়ে আমিও ভুক্তভোগী। ফোনে আমাকে ফ্লাট, গাড়ি বিক্রির কথা বলা হয়। এ বিষয়ে অপারেটরদের কাছে সাহায্য চান তিনি এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেন।

তিনি আরো বলেন, সার্ভিসের বিষয়ে আমি নিজেও সন্থুষ্ট না। প্রযুক্তির বিষয়ে কেউ সন্তুষ্ট হয় না। সন্তুষ্ট হলে উন্নয়ন হতো না। প্রযুক্তি চলমান, আজ যে প্রযুক্তিতে আছেন কাল আরেক প্রযুক্তিতে যাবেন।

জহুরুল হক বলেন, কিছু সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়া সম্ভব আবার কিছু সমস্যা কমিশনের যাচাই-বাছাইয়ের পর এবং বিভিন্ন ধরনের এক্সপার্টদের মাধ্যমে সমাধান করতে হয়। তাই ধৈর্য ধরে প্রত্যেককে প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সাহায্য করতে হবে।

গণশুনানিতে বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরদের পক্ষপাতিত্ব করেছে বলে অভিযোগ করেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, প্রায় তিন বছর পূর্বে অনুষ্ঠিত গণশুনানির অভিযোগ আজ কেন প্রকাশ করা হচ্ছে? ৯০ দিনের মধ্যে গণশুনানির ফল প্রকাশের নিয়ম থাকলেও বিটিআরসির কেন সেই বাধ্যবাধকতা নেই? গ্রাহকরা অপারেটরদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন, তার পক্ষে অপারেটররা মতামত না দিয়ে কমিশন কেন তাদের পক্ষপাতিত্ব করছে? ভয়েস কলের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে কমিশনের কাছে জানতে চাইলে কমিশনের উত্তর— বিশ্বের দুই-একটি দেশ ছাড়া বাংলাদেশের কলরেট সবচেয়ে কম। এমএনপি’র ডিপিং চার্জ কেন? এর উত্তরে কমিশনের বক্তব্য— বিষয়টি ভবিষ্যতে খতিয়ে দেখা হবে।

মহিউদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, ফোরজি সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে স্পেকট্রাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু স্পেকট্রামের উচ্চমূল্যের কারণে অপারেটররা নিলামে প্রয়োজনীয় স্পেকট্রাম কিনছে না। এ বিষয়ে কমিশনের কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নাই। ফোরজির গতি নিয়ে কমিশনের বক্তব্য— ফোরজি সেবা পেতে আরও সময় লাগবে। ফাইভ-জি নিয়ে গ্রাহকদের মতামত নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে কমিশন বলেছে— বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেলে ৬ মাসের মধ্যে ফাইভ-জি চালু করা হবে। প্রযুক্তির অপব্যবহার সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করার দাবি জানালে কমিশনের উত্তর, সামাজিক উন্নয়ন তহবিলের অর্থ দিয়ে হাওর ও দুর্গম এলাকায় নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। ফিক্সড ইন্টারনেট ব্যবসায় নৈরাজ্য ও মূল্য নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কমিশন এ নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে গণশুনানিতে জানায়। সাড়ে সাত লাখ রিটেইলারকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রতি জেলায় বিটিআরসি’র কার্যালয় ও লোকবল নিয়োগ করে তদারকির তাগিদ জানান মহিউদ্দিন আহমেদ।

গণশুনানিতে গত ২৪ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত বিটিআরসির ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের মাধ্যমে ২০২ জন গ্রাহক মোট ১৩১৯ অভিযোগ/প্রশ্ন/মতামত কমিশনকে অবহিত করেন। পরবর্তীতে গণশুনানি সংশ্লিষ্ট কমিটি যাচাই-বাছাই করে ১৬৫ জনকে গণশুনানিতে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানায়।

সাধারণ মানুষের বক্তব্য-অভিযোগ-দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ডি-অ্যাক্টিভেটেড নম্বর দিয়ে ইমো-ভাইবারের মতো অ্যাপস ব্যবহার বন্ধ করা, অযাচিত নম্বর থেকে কল আসা , যেখানে-সেখানে টাওয়ার বসানো, কলড্রপের ভোগান্তি না কমা, ইন্টারনেটের কাঙ্খিত গতি না পাওয়া, নেটওয়ার্ক না পাওয়া, ফোরজি না পাওয়া, কলে-ইন্টারনেটে বেশি টাকা কেটে নেয়া, ঘোষণা অনুযায়ী সেবা ঠিকঠাক না দেয়া, অনলাইনে সিম কেনার টাকা নিয়ে সেবা না দেয়া, টেলিটকের খারাপ সেবার মতো বিষয়। এছাড়া বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধন, সাইবার অপরাধ, মোবাইলফোনে হুমকি, ফেইসবুক ব্যবহারে নিরাপত্তা, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ফাইভ জি, অ্যামেচার রেডিও সার্ভিস, মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি, ওয়াইম্যাক্সে অন্যায়ভাবে টাকা কেটে রাখা নিয়েও অভিযোগ ও ভোগান্তির কথা জানান সাধারণ মানুষ।

লাস্টনিউজবিডি/আনিছ

সর্বশেষ সংবাদ



সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar