ad720-90

ফেসবুকের কর্মপরিবেশ এত খারাপ!


ফেসবুকফেসবুকের এক ডজনের বেশি সাবেক ও বর্তমান মডারেটর সেখানকার কর্মপরিবেশকে নোংরা, মানসিক ধকল ও অতিরিক্ত চাপাচাপির বলে অভিযোগ করেছেন। সেখানকার ব্যবস্থাপকেরা মোটেও কর্মীদের সহযোগিতা করেন না। পারলে আরও বেশি চাপ দিয়ে কাজ করিয়ে নেন। কর্মীদের ঘৃণাব্যঞ্জক বক্তৃতা, কখনো কখনো মানুষের এবং প্রাণীর বিরুদ্ধে গ্রাফিক সহিংসতা, শিশু পর্নোগ্রাফির মতো কাজগুলোর সম্পাদনার ক্ষেত্রে জোর করেন।

বিশ্বজুড়ে ফেসবুকের ১৫ হাজারের মতো মডারেটর বা কনটেন্ট সম্পাদক রয়েছেন। তাঁদের কাজ হচ্ছে ফেসবুকের কনটেন্টগুলো সম্পাদনা করা। বিভিন্ন থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এসব কাজ চুক্তিতে করিয়ে নেয় ফেসবুক।

যাঁরা ফেসবুকের কর্মপরিবেশ নিয়ে অভিযোগ করেছেন, তাঁরা ফেসবুকের হয়ে চুক্তিতে কাজ করা কগনিজেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী। প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য ভার্জ জানিয়েছে, ফেসবুকের মডারেটর হিসেবে কাজ করা কর্মীরা বছরে ২৮ হাজার ডলারের (২৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা) মতো বেতন পান। যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিভিত্তিক কগনিজেন্ট ফেসবুকের কনটেন্ট মডারেটর হিসেবে কাজ পাওয়া বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি।

ফেসবুক বেশ কিছুদিন ধরেই তাদের কনটেন্ট সম্পাদনা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে। ফেসবুকের কনটেন্ট মডারেশনের নানা ভুল ও বিশাল নিয়মকানুনের বোঝা এর সম্পাদকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। সপ্তাহে একজন সম্পাদককে এক হাজারের বেশি পোস্ট ফেসবুকের নীতিমালা ভেঙেছে কি না, তা দেখতে হয়। এ ক্ষেত্রে তাঁদের ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ সঠিক থাকতে হয়।

কেইথ উথলে নামের কগনিজেন্টের সাবেক এক কর্মী রাতের পালায় কাজ করতেন। টার্গেট পূরণে বিশাল চাপের সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে। গত ৯ মার্চ কর্মরত অবস্থায় মারা যান ৪২ বছর বয়সী ওই কর্মী। পরিবারে তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ে রয়েছে।

উথলের ব্যবস্থাপক দ্য ভার্জকে বলেছেন, তাঁর ওপর যে চাপ দেওয়া হয়েছিল, তা অবর্ণনীয়। সব সময় চাকরি হারানোর ভয় ছিল তাঁর মধ্যে।

উথলের ঘটনার মতো মারাত্মক পরিস্থিতির কথা দ্য ভার্জকে বলেছেন ফেসবুকের সাবেক ও বর্তমান কর্মীদের অনেকেই। এসব বিষয়ে অবশ্য তাঁদের কোনো কথা বলা বারণ। তারপরও নিয়ম ভেঙে তিনজন দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন।

ভার্জের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেসবুকের জন্য কাজ করা মডারেটরদের নানা রকম বিপর্যস্ত মানসিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সেখানে মানসিক সুস্থিতির জন্য বিরতি থাকে কম। কর্মীদের মোবাইল ফোন জমা দিতে হয়। কোনো কাগজের টুকরোও রাখার অনুমতি নেই। কারও সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলার পরিস্থিতিও নেই। তাই কর্মীদের মধ্যে ভয় ও বিপর্যস্ত মানসিকতা কাজ করে। তাঁদের নিয়মিত সহিংস ভিডিও দেখতে হয়। সব মিলিয়ে কর্মীদের মধ্যে মানসিক ভীতি তৈরি হয়। এসব বিষয় থেকে দূরে থাকতে যৌন সম্পর্ক, গাঁজা সেবনের মতো ঘটনাও ঘটে সেখানে।

কগনিজেন্টের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘কনটেন্ট সম্পাদনার সহযোগী হিসেবে কাজের ক্ষেত্রে আমরা স্বচ্ছ। নিয়োগ প্রক্রিয়ার সময়ই তাঁদের দায়িত্বের ধরন সম্পর্কে জানতে পারেন তাঁরা। কাজের আগে তাঁদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।’

কগনিজেন্টের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কর্মীর আইনজীবী কেসি হপকিনসন বলেছেন, ‘আমার সবচেয়ে খারাপ শত্রুও সেখানে কাজ করুক, তা আমি চাইব না। এটা ভয়ংকর এক পরিবেশ। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অভিযোগ দিলে সেখানকার মানবসম্পদ বিভাগ তা এড়িয়ে যায় বা অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’

এর আগে ফেসবুকের পক্ষ থেকে বলা হয়, ফেসবুকের জন্য বিভিন্ন সাইটে কাজ করা এসব কর্মীর দৈনন্দিন জীবনযাপনের পরিস্থিতি অধিকাংশ কর্মীদের অবস্থার প্রতিফলন নয়। তারা এ বছর নতুন অডিট সিস্টেম চালু করবে। এ ছাড়া গত মে মাসে চুক্তিতে কাজ করা মডারেটরদের বেতন ঘণ্টায় তিন ডলার করে বাড়াবে। এ ছাড়া তাদের সাহায্যে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হবে।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar