ad720-90

ফ্রিল্যান্সার থেকে উদ্যোক্তা


খায়রুল আলমখায়রুল আলম কাজ করতেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। ভালো চাকরি। বেতন ভালো। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। হুট করে একদিন কী মনে হলো, চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজেই আউটসোর্সিংয়ের প্রতিষ্ঠান খুলে বসলেন। নাম দিলেন ফ্লিট বাংলাদেশ। তরুণদের আহ্বান জানালেন যোগ দেওয়ার। সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে এখন পর্যন্ত ১০৫ জন কাজ করছেন তাঁর সঙ্গে।

এসবই অবশ্য তুলনামূলক নতুন ঘটনা। এর আগে খায়রুল ছিলেন ফ্রিল্যান্সার। অনলাইনে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক কাজ করতেন। তারও আগে ছিলেন সাধারণ এক তরুণ, যাঁর বিশেষ কোনো পরিচয় ছিল না। ক্রমে ক্রমে সাধারণ থেকে অনন্য এবং কর্মী থেকে কর্মদাতা হয়ে উঠেছেন তিনি। সম্প্রতি সে গল্পই শুনিয়েছেন।

যে কাজ করেন তিনি

রাজশাহীতে ১০ জন তরুণ নিয়ে যাত্রা শুরু করে খায়রুলের ফ্লিট বাংলাদেশ। এরপর থেকে কর্মীসংখ্যা বেড়েই চলেছে, স্থায়ী কর্মীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চুক্তিভিত্তিক কর্মী। নিজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বর্তমানে আমাজন, ওয়ালমার্ট ও ই-বের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকসেবা দিয়ে থাকেন খায়রুল আলম। সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে আমাজন ভেন্ডার ব্যবস্থাপনা, ফুলফিলমেন্ট বাই আমাজন, আমাজন প্রাইভেট লেভেল প্রোডাক্ট, ওয়ালমার্ট স্টোর ব্যবস্থাপনা ও ই-বে স্টোর ব্যবস্থাপনা। তা ছাড়া ফনেক্স গ্রুপ, অ্যাশলি ফার্নিচারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সরাসরি গ্রাহকসেবা দিয়ে থাকেন তাঁরা। আর ফ্লিট বাংলাদেশের গ্রাহকদের জন্য রয়েছে নিজস্ব ইনভেনটরি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ecomelements.com)।

শুরু করেন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে

২০০৫ সালে বিটিভির এক অনুষ্ঠানে খায়রুল দেখেছিলেন কীভাবে সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে কর্মীরা কাজ করেন। আগ্রহের শুরু তখন থেকেই। ২০০৭ সালে এইচএসসি পাস করেন খায়রুল। এরপর থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরি খুঁজতে থাকেন। কিন্তু তেমন কোনো কাজের সুযোগ হয়ে ওঠেনি সে সময়। ঢাকায় এসে ভর্তি হন ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে। টিউশনি করতেন আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার গবেষণাগারে বসে বসে খুঁজতেন কীভাবে অনলাইনে কাজ করে আয় করা যায়। 

শুরুতে ফ্রিল্যান্সার ডটকমের খোঁজ পেয়েছিলেন। সেই থেকে কাজ শুরু। দরকার ছিল নিজের কম্পিউটারের। কিছু টাকা জোগাড় করে পুরোনো একটি কম্পিউটার কেনেন খায়রুল। কিন্তু অনলাইনে কাজ পাওয়া তো আর সহজ না। অনেকের কাছেই সহযোগিতা চান। খায়রুল বলেন, ‘২৫ দিনের মাথায় ফিলিপাইনের এক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রথম ২০০ ডলারের কাজ পেয়েছিলাম। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার পর সে আমাকে ব্লক করে দেয়। এমন ঘটনার পর হতবুদ্ধি হয়ে গিয়েছিলাম। এরপর ওডেস্কে (বর্তমানে আপওয়ার্ক) কাজ শুরু করি।’

আপওয়ার্কে ডেটাবেইসের একটি কাজ পেয়ে প্রথম ১৪ হাজার টাকা আয় করেন খায়রুল। তার পরপরই আরেকটি প্রকল্প থেকে পান প্রায় ৩০ হাজার টাকার মতো। গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছিলেন। প্রোফাইলে যোগ হলো ভালো পর্যালোচনা। বাড়ল আত্মবিশ্বাস। দুই বন্ধুকে নিয়ে ২০০৯ সালে এ কিউব নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ক্যাসপারস্কির কাছ থেকে একটি কাজ পেয়েছিলেন সে সময়।

এদিকে শেষ হলো স্নাতক। অনলাইনের কাজের স্বীকৃতি কেউ তেমন না দেওয়ায় খায়রুল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। চাকরি বদল করলেও চালিয়ে যান অনলাইনের কাজ। নয়টা-ছয়টা অফিস শেষে রাতে শুরু হতো ফ্রিল্যান্সিং। ক্যাসপারস্কির সঙ্গে চুক্তি শেষ হলো, দুই বন্ধুও যোগ দেন নতুন কাজে। এ কিউবের সেখানেই সমাপ্তি।

শুরু হলো ফ্লিট বাংলাদেশ

এরপর রাজশাহী থেকে পরিচিত ব্যক্তিদের একটু একটু করে কাজ শেখানো শুরু করেন খায়রুল আলম। গত বছর ছেড়ে দেন চাকরি। প্রতিষ্ঠা করেন ফ্লিট বাংলাদেশ। খায়রুল বলেন, ‘চাকরি ছেড়ে দেওয়ায় অনেকে উপহাস করেছিল। ফ্লিট বাংলাদেশ চালু করলে শুরুতে আমাকে কর্মীসংকটে ভুগতে হয়েছে, কারণ অনলাইনে কাজ করে অর্থ আয়ের বিষয়টি আমাদের সমাজে অতটা প্রতিষ্ঠিত না। বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠানে কর্মীসংখ্যা ১০৫। এঁদের মধ্যে ২০ জন স্থায়ী, বাকি কর্মীরা চুক্তিভিত্তিক। সংখ্যাটা বাড়ছে। আগামী এক বছরে কর্মীসংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি আমরা। কিছুদিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদের রাজশাহী অফিস ঘুরে যান।’

 





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar