ad720-90

ডিজিটাল হাটে মেসি–টাইগার–টাইটানিক


বিক্রি হবে ‘টাইগার’। এ টাইগার কিন্তু বাঘ নয়। এ টাইগার কোরবানির জন্য অনলাইন হাটে তোলা ষাঁড়। ষাঁড়টির দৈর্ঘ্য ৯ ফুট, উচ্চতা সাড়ে ৫ ফুট। ওজন ৪২ মণ। কালো আর সাদা রঙের সুঠাম স্বাস্থ্যের ষাঁড়টির নাম বিক্রির জন্য দেওয়া হয়েছে টাইগার। ফিজিয়ান জাতের গরুটি দেশীয় পদ্ধতিতে নিজের খামারে মোটাতাজা করা হয়েছে। পাবনার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের ছোট গুয়াখড়া গ্রামের ষাঁড়টির বিজ্ঞাপন এখন অনলাইনে। শুধু টাইগার নয়, এবার ‘মেসি’, ‘টাইটানিক’, ‘বস’ নামের গরু অনলাইনে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে। নানা রকম নামের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি পাওয়া গরু বিক্রি হচ্ছে অনলাইন দোকানগুলোতে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের পাশাপাশি অনলাইন দোকানগুলোতে কোরবানি উপলক্ষে গবাদিপশুর কেনাকাটা বেড়েছে। কয়েক বছর ধরেই অনলাইনে গবাদিপশুর কেনাকাটার প্রবৃদ্ধিও ভালো। এ খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, অনলাইনে গরু বিক্রির হার দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

গত জুলাই মাস থেকেই অনলাইনের বিভিন্ন দোকানে নানা নামের গরু আসতে থাকে। ঢাকা জেলার ধামরাই থেকে টাইটানিককে এনে রাখে মোহাম্মদপুরের সাদেক অ্যাগ্রো ফার্ম নামের একটি খামার। সাদেক অ্যাগ্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, এবারের কোরবানি ঈদ উপলক্ষে সারা দেশের মধ্যে টাইটানিকই সবচেয়ে বড় গরু। এর উচ্চতা ৭ ফুট। লম্বায় ১০ ফুটের মতো হবে। ওজন ১ হাজার ৫০০ কেজি। দাম ২৮ লাখ টাকা। টাইটানিক ঘিরে অনলাইনে আলোচনা শুরু হয়। ১ হাজার ৩০০ কেজির ওজনের মেসির দাম ৪৫ লাখ টাকা। অনলাইন দোকানগুলোতে এ রকম নানা রঙের গরু এবার আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। তবে ক্রেতারা কেনার সময় ছোট ও মাঝারি আকারের গরু কিনছেন বেশি। গরু বিক্রি হচ্ছে লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে। এ জন্য কেজিপ্রতি দাম পড়ছে ৩২০ থেকে ৩৭৫ টাকা।

আমরা ডেইরি ফারমার্সের উদ্যোক্তা ও বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান বলেন, ‘আমাদের সদস্য খামারিদের মাধ্যমে অনলাইনে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০–৭০০ গরু বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ভাইবারে গরু বিক্রির হাট রয়েছে। সেখানে গরুর ছবি ও ভিডিও আমরা তুলে দিচ্ছি। এগুলো দেখে ক্রেতারা পছন্দ করে অগ্রিম কিনে নিচ্ছেন। ঈদের আগে সুবিধাজনক সময়ে আমরা সেই গরু ক্রেতার বাসায় পৌঁছে দিচ্ছি। গত বছরেও গড়ে প্রতিদিন কোরবানির সময় ৫০০ করে গরু বিক্রি হয়েছিল। তবে এবার অনলাইনে গরুর চাহিদা বেড়েছে। তাঁর ফার্ম থেকে দৈনিক ৭০০–৮০০ গরু বিক্রি হচ্ছে।’

অনলাইনে গরু বিক্রির দিক থেকে এখন সাদেক অ্যাগ্রো অনেকটাই এগিয়ে। এ ছাড়া বেঙ্গল মিট, আমেরিকান ডেইরি, ডাচ্​ ডেইরি, দেশি মিটের মতো অনলাইন দোকানগুলোতে প্রচুর গরু বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে অনলাইনে কেনাকাটা ও বিজ্ঞাপনের সাইটগুলোতেও বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশু।

হাটে গিয়ে গলদঘর্ম হওয়ার চেয়ে ঘরে বসেই পশু কেনা যাচ্ছে বলে অনেক ক্রেতাই এখন এসব অনলাইন হাটের দিকে ঝুঁকছেন। দিন দিন চাহিদা বাড়ায় অনলাইন বাজারগুলোও হরেক জাত ও দামের কোরবানির পশুর সমাহার ঘটাচ্ছে। সব মিলিয়ে অনলাইন হাট ক্রেতাদের কাছে স্বস্তিদায়ক হয়ে উঠছে। 

ইন্টারনেটে বেশ কিছু বাজার ঘেঁটে দেখা গেছে, কোরবানির পশুর ছবি, ভিডিও ক্লিপ, জাতসহ পুরো বর্ণনা দেওয়া রয়েছে। অনলাইন বাজার বিক্রয় ডটকমে ২০১২ সাল থেকে কোরবানির পশু বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া শুরু হলেও পশু বিক্রি মূলত শুরু হয় ২০১৫ সাল থেকে। 

প্রতিষ্ঠানটির হেড অব মার্কেটিং ঈশিতা শারমিন বলেন, ‘পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিরাট হাট #BiratHaat প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছে বিক্রয়। পাঁচ বছর ধরে ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিক্রয় কোরবানির পশুর পসরা নিয়ে আসছে। বিগত বছরগুলোতে ঈদুল আজহায় আমরা গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রচুর সাড়া পেয়েছি। এ বছর আমরা গ্রাহকদের জন্য আরও বেশিসংখ্যক কোরবানির পশু নিয়ে এসেছি। প্রতিবছর গ্রাহক চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি হয়ে থাকে, আর আমরাও সেই অনুযায়ী আমাদের সেবার মান উন্নত করতে সচেষ্ট থাকি। গ্রাহক ছাড়াও আমাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে হাজার হাজার বিক্রেতা উপকৃত হয়ে থাকেন। আমাদের জীবনের নানা রকম দিকের মতোই ইন্টারনেটের কল্যাণে কোরবানির জন্য গরু কেনাটাও আজ আমাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে গেছে। গত বছর বিক্রয়-এর সাইটে মেম্বারশিপ সার্ভিস নিবন্ধনের মাধ্যমে প্রায় ৭০টি গবাদিপশুর খামার ব্যবসায়ী কোরবানির পশু বিক্রয় করেন। এ বছর আশা করছি প্রায় ১৫০টি খামার ব্যবসায়ী আমাদের মেম্বারশিপ সার্ভিস গ্রহণ করবেন। বিক্রয়ে রয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি গবাদিপশুর বিজ্ঞাপন।’

ঈশিতা বলেন, ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকার মধ্যেও বিপুলসংখ্যক গবাদিপশুর বিজ্ঞাপন পোস্ট করা হচ্ছে এখন। পোস্টকৃত বিজ্ঞাপন বনাম বিক্রির হারে গরু ও ছাগলের বিজ্ঞাপন সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে। ২০১৭ সালে শুধু কোরবানির সময় পোস্ট হওয়া গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৪২০, যা থেকে বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৫৪৪টি পশু। ২০১৮ সালে কোরবানির সময় পোস্ট করা হয়েছিল ৭ হাজার ২৪৬টি বিজ্ঞাপন এবং বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ২৯৩টি পশু। এ বছর এ পর্যন্ত কোরবানির মৌসুমে গবাদিপশুর বিজ্ঞাপন পোস্ট করা হয়েছে ৯ হাজার ৩৩১টি এবং বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৮৮৯টি পশু। বিক্রয়ে গরুর বিজ্ঞাপন ছাগলের বিজ্ঞাপনের প্রায় দ্বিগুণ। বিক্রয়ে সর্বমোট গবাদিপশুর মধ্যে গরুর বিজ্ঞাপন আছে ৬৩ শতাংশ এবং ছাগলের বিজ্ঞাপন আছে ৩৭ শতাংশ। 

খামার-অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গরুর ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, প্রথাগত হাটের বাইরে গরু বিক্রি বেড়ে যাওয়ার এই নতুন প্রবণতা দুই পক্ষের জন্য লাভজনক। প্রথমত বিক্রেতারা সড়কের যানজট, রোদ-বৃষ্টি ও চাঁদাবাজি উপেক্ষা করে হাটে নেওয়ার ঝামেলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, হাটে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য থেকে তাঁরা রক্ষা পাচ্ছেন ও গরুর খাদ্য এবং নিরাপদ স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যাচ্ছে।

দেশের অনলাইন শপ দারাজ বাংলাদেশ পশুর হাটের আয়োজন করেছে। দারাজের এই ‘অনলাইন গরুর হাটের’ বিশেষত্ব হচ্ছে, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের নারী উদ্যোক্তারা প্রতিটি গরু শতভাগ অর্গানিক এবং গরুগুলো লালনপালন করেছেন। গাইবান্ধা থেকে দারাজ নন্দিনীর উদ্যোগে অ্যাকশনএইডের সহায়তায় গরুগুলো নিয়ে আসা হচ্ছে। ক্রেতারা খুব সহজেই কোরবানির পশুর বিস্তারিত জেনে গরুর ভিডিও দেখে দারাজ অ্যাপে তা অর্ডার করতে পারবেন। দারাজের এই সাইট ঘুরে দেখা গেছে, এখানে বিভিন্ন দামের পশু রয়েছে। আকৃতি ও জাতভেদে এদের দামের পার্থক্যও আছে। এই হাটে রয়েছে ৪২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের ১০৭টি গরু। এই গরু অর্ডার করার শেষ তারিখ ৫ আগস্ট আর গরুগুলো ডেলিভারি শুরু হবে ৯ আগস্ট থেকে। 

অনলাইনে কেনাকাটা নিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন অভিযোগ থাকে। তবে প্রতারণা এড়াতে প্রয়োজনীয় সচেতনতার কথা বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিভিন্ন নামে-বেনামে ফেসবুক পেজ খুলে প্রতারণা করতে পারে অসাধু চক্র। এ ক্ষেত্রে ই-কমার্সে লেনদেন ও কেনাকাটার ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar