ad720-90

‘সামনে আমরাই রকেট-স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করব’


শিশু-কিশোর আর তরুণ প্রজন্মের কাছে মহাকাশ বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করে তোলায় কাজ করছে তার সংগঠন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই অপু মনে করেন, দেশের মেধাবী তরুণদের শুধু নাসা নয়, বিশ্বের যে কোনো মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় কাজ করার বিপুল সুযোগ রয়েছে।

দেশের মেধাবী সন্তানরাইযে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশনে কাজ করছে, সেটাও মনে করিয়ে দিলেন তিনি।

গত জুলাই মাসে ইউএস স্পেস অ্যান্ড রকেট সেন্টারের আমন্ত্রণে গিয়ে ৩০ দিনের ‘অ্যাস্ট্রনট ট্রেইনিং’ করে এসেছেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান আরিফুল হাসান অপু। এর মধ্যে সাত দিন ছিল শারীরিক প্রশিক্ষণ।

“ইউরোপের স্পেস এজেন্সি, ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন, নাসা, এমআইটি প্রত্যেকটা জায়গায় কিন্তু আমাদের দেশের মেধাবীদের চাহিদা আছে। চাহিদা যে আছে সেটা আমি নিজে গিয়ে সরেজমিনে দেখে এসেছি।

“অ্যাস্ট্রনট ট্রেইনিং নিয়েছি আমি সাতদিনের। আমি জানি না এর আগে কোনো বাঙালি গিয়েছিল কিনা, তবে আমি মনে করি প্রথম বাঙালি হিসেবে আমি সেখানে ট্রেইনিংটা নিয়েছি। নাসা এবং ইউএস স্পেস অ্যান্ড রকেট সেন্টার সেখানে আমাকে ইনভাইট করেছিল। একই সাথে এমআইটিতে আমার ভিজিট ছিল।”

এই প্রশিক্ষণের সুবাদে সেখানকার ল্যাবে বসেও কাজ করেছেন তিনি।

অপু বলেন, “এমআইটির দুটো ল্যাব আমি দেখে এসেছি; এমআইটি জিরো রোবটিকস ল্যাব এবং এমআইটি অ্যারোস্পেস ল্যাব। শুধু দেখা না, তাদের ইকুইপমেন্টে আমি নিজে বসে কাজ করেছি। তাদের যে রোবটটা ইন্টারন্যাশনাল স্পেসে আছে সেটাতে আমি সিমুলেট করে দেখেছি কীভাবে কাজ করে।”

রকেটের উড্ডয়ন থেকে শুরু করে চাঁদের পিঠে ল্যান্ডারের নামা পর্যন্ত পুরো চন্দ্রাভিযানের একটা ‘রিয়েলিস্টিক সিমুলেশন’ করার অভিজ্ঞতাও হয়েছে তার। এই মিশনে একেকজন একেক ভূমিকায় ছিলেন; অপু ছিলেন ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার।

মুন ওয়াকিং ছাড়াও এই কর্মশালায় তার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে যোগ হয়েছে মহাকর্ষীয় বল (জি-ফোর্স) আর শূন্য অভিকর্ষ (জিরো গ্র্যাভিটি) অনুভব।

খুব বেশি দূর নয়; মাত্র ১০ বছর পরেই ভিন্ন এক পৃথিবী দেখছেন বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের এই প্রতিষ্ঠাতা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আজ থেকে ১০ বছর পরে আমরা নিজেরাই হয়ত স্যাটেলাইট-রকেট উৎক্ষেপণ করতে পারব। সেটা কিন্তু পরের প্রজন্মই পারবে। তখনকার পৃথিবী কিন্তু এখনকার মত থাকবে না। তখন কিন্তু পুরো টেকনোলজি বেইজড একটা ওয়ার্ল্ড হয়ে যাবে।”

আর সে কারণেই  ‘স্টেম’ অর্থ্যাৎ সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাথমেটিকসে শিশুদের গড়েপিটে নিতে চেষ্টা করে চলেছে অপুর সংগঠন বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম।

সেই ‘দীর্ঘমেয়াদী’ উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গত বছর থেকে আমরা বাচ্চাদের নিয়ে কাজ শুরু করেছি। যেখানে নার্সারি থেকে ক্লাস টেন, আলাদা পার্ট আছে আমাদের। আমরা এ পর্যন্ত চারটা প্রোগ্রাম করেছি। ‘নিজের হাতে রোবট বানাই’ নামে একটা প্রোগ্রাম আছে আমাদের। আমরা ‍দুটো রকেট মেকিং ওয়ার্কশপ করেছি।”

এই সব প্রযুক্তি হাতের কাছে পেয়ে শিশুরা দারুণ চৌকস হয়ে উঠছে বলে জানালেন অপু।

“রকেটের ভেতরে অনেক গাণিতিক ব্যাপার আছে। ডায়া কেমন হবে, এটার সামনের পার্ট কেমন হবে, একটা রকেট বাইরে থেকে থ্রাস্ট করলে কতটুকু মুভমেন্ট হবে নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী এগুলো কিন্তু সবকিছু ওরা শিখছে। ওরা কিন্তু ডায়া যখন বানায় জ্যামেতিক কম্পাস দিয়ে মাপ দিচ্ছে, কেটে নিচ্ছে; কমবেশি হলে কিন্তু এটা সামনের দিকে যাবে না। এই ব্যাপারগুলো তারা শিখছে।”

শিশুদের কর্মচাঞ্চল্য কমে যাওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে দেখেন অপু। জানালেন, তার সংগঠন শিশুদের ‘স্ক্রিন অ্যাডিকশন’ কমিয়ে আনতে সচেষ্ট।

“স্ক্রিন অ্যাডিকশন সমস্যাটা বিশ্বে সবচেয়ে বড়… বাচ্চারা আউটিং করে না, সারাক্ষণ মোবাইলে বসে আছে; তারা যখন মজার একটা কিছু পেয়ে যাবে তখন কিন্তু আসলে স্ক্রিনে আর বসবে না। আমরা চাচ্ছি বাচ্চাদের স্ক্রিন অ্যাডিকশন দূর করতে। আমরা এই অ্যাকটিভিটিগুলোর মাধ্যমে সোশাল প্রবলেম সলভিং নিয়েও কাজ করছি।”

তবে জোর করে কিছু চাপিয়ে না দিয়ে  ‘মজার’ এবং ‘নতুন’ কিছু শিশুদের হাতে তুলে দেওয়ার পক্ষপাতি তিনি। 

স্পেস টেকনোলজি শিশুদের কাছে সেই মজার এবং নতুন কিছু জানিয়ে অপু বলেন, “এটার মধ্যে দিয়ে তারা টেকনোলজির চর্চা শুরু করে দিল।”

বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম ও নাসা সায়েন্টিফিক প্রবলেম সলভার বাংলাদেশ নার্সারি থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য দেশে প্রথমবারের মত আয়োজন করছে স্পেস ইনোভেশন ক্যাম্প। তিনদিনের  এই ক্যাম্প রাজধানীর ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১০-১২ অক্টোবর।

ক্যাম্পটার আয়োজন শিশুদের জন্য। আর স্পেস ইনোভেশন সামিট করা হয় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য। বাংলাদেশে স্পেস ইনোভেশন সামিটের দ্বিতীয়বারের আয়োজন শেষ হল গত জুলাই মাসেই।

সামিট ও ক্যাম্প আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়ে অপু বলেন, “আমরা শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ না। সারা দেশে এ পর্যন্ত ১২৮টিরও বেশি প্রোগ্রাম করেছি গত দুই বছরে। বাংলাদেশে প্রথম আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) কনফারেন্স কিন্তু আমাদেরই করা।”

নিজের সংগঠনের পক্ষ থেকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধাও দেওয়া হয় জানিয়ে অপু বলেন, “কিছু কিছু সময়, খুবই ক্ষুদ্রভাবে আমরা কিছু ইকুইপমেন্ট সাপোর্টও দিচ্ছি। যেমন আমরা একটা থ্রিডি প্রিন্টার নিয়ে এসেছি আমেরিকা থেকে। তারপর কিছু ছোট ছোট আর্ম… রোবটিক ইকুইপমেন্ট আছে আমাদের। আমরা খুব ছোট একটা ল্যাব দেওয়ারও চেষ্টা করছি।”

২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ ইনোভশন ফোরামের উদ্দেশ্য ছিল রুণ প্রজন্মের মধ্যে ‘ইনোভেশন কালচার’ গড়ে তোলা।

সে ভাবনার কথা জানিয়ে আরিফুল হাসান অপু বলেন, “ইনোভেশন কালচার ডেভলপ করার জন্য দরকার একটা ওয়াইড রোডম্যাপ দেখানো। কীভাবে একটা প্রবলেম সলভ করবেন? থিংকিংগুলো শেখানো আমরা শুরু করি।

“আমাদের দেশে অনেক প্রবলেম আছে। ওই প্রবলেমগুলো সলভ করার মাধ্যমে একজন এন্ট্রাপ্রেনিউর হয়ে যেতে পারে; একজন ইনোভেটর হয়ে যেতে পারে। আমাদের টার্গেট ছিল নতুন নতুন উদ্ভাবনে রাইট ওয়ে দেখানো এবং টেকনিকাল ফুল সাপোর্ট দেওয়া।”

সঠিক পথ দেখালে যে তরুণ প্রজন্ম ভাল কিছু করতে পারে সে উদাহরণ দিতে তিনি বলেন, “একটা ঘটনা বলি। চট্টগ্রামের একটা ছেলে রোবটিক থার্ড হ্যান্ড তৈরি করেছে। রোবটিক থার্ড হ্যান্ড দরকার যাদের হাত নেই তাদের জন্য ওই হাতটা কাজ করবে। যারা ল্যাবে কাজ করে, অনেক সময় জেনুইন হাত দিয়ে কাজ করতে সমস্যা হয়, সেক্ষেত্রে রোবটিক আর্ম ব্যবহার করা যায়। হাই ভোল্টেজ ইকুইপমেন্ট নিয়ে যখন কাজ হয় তখন কিন্তু নিজের হাত অনেক সময় শক খেতে পারে, সেক্ষেত্রে থার্ড হ্যান্ড গুরুত্বপূর্ণ।”

অপুর সংগঠন এই কলেজ শিক্ষার্থীকে তার রোবটিক প্রকল্পটি এগিয়ে নিতে মেনটরিং করছে।

এই ফোরামের আরও কয়েকটি শাখা আছে; ডেটা সায়েন্স গ্রুপ, অ্যাগ্রো গ্রুপ, রোবটিক গ্রুপের পাশাপাশি কাজ করছে নাসা সায়েন্টেফিক প্রবলেম সলভার বাংলাদেশ।

চাকরিজীবী ও সন্তান-সংসার সামলানো নারীদের জন উইমেন ইন টেকনলজি আয়োজনও করেছিল তারা, যেখানে অংশ নিয়েছিলেন এক হাজার নারী।

গত ৫ জুলাই ইউএস স্পেস অ্যান্ড রকেট সেন্টারের সাথে এক আলোচনা হয় বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের। বাংলাদেশে আগামিতে ক্যাম্প আয়োজন করা ও দেশি গ্রুপগুলোর ‘স্পেস ক্যাম্প ইউএসএতে’ অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিতেই ছিল এই আলোচনা।

বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম ও স্পেস ক্যাম্প ইউএসএ যৌথভাবে বাংলাদেশে মহাকাশ শিক্ষার প্রসারে কাজ করবে বলে জানান আরিফুল হাসান অপু।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar