ad720-90

এই সেই কোয়ান্টাম কম্পিউটার


কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করে ফেলেছে গুগল। ছবি: এএফপিগুগল উন্নত এক কম্পিউটার তৈরির দাবি করেছে, যা প্রথমবারের মতো ‘কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি’ অর্জন করেছে। অর্থাৎ, কম্পিউটিং হিসাবের দিক থেকে বা পারফরম্যান্স বিবেচনায় প্রচলিত সব কম্পিউটারকে ছাড়িয়ে গেছে গুগল। এক খবরে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি অনলাইন। ‘নেচার’ সাময়িকীতে গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

কোয়ান্টাম মেকানিজমের জটিল অনেক সমস্যার সমাধান কোয়ান্টাম কম্পিউটার এক তুড়িতে করে ফেলতে পারে। ওই একই সমস্যার সমাধান করতে হালের সর্বাধুনিক কম্পিউটারের লেগে যায় শত থেকে হাজার হাজার বছর। এই বিষয়টিকেই বলা হয়ে থাকে কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি। অর্থাৎ, যখন কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠান বা দেশ ওই সব জটিল সমস্যার সমাধান অত্যন্ত কম সময়ে করতে পারবে, তখনই বলা হবে যে তারা কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জন করেছে।

গুগলের তৈরি সেকামোর কোয়ান্টাম প্রসেসর নির্দিষ্ট যে কাজ ২০০ সেকেন্ডে সম্পন্ন করতে সক্ষম, তা বিশ্বের সেরা সুপার কম্পিউটারের সম্পন্ন করতে ১০ হাজার বছর লাগবে।

গবেষকেরা কয়েক দশক ধরেই কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এ ধরনের কম্পিউটার গতির দিক থেকে অনেক এগিয়ে থাকবে বলে গবেষকেরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন।

বাইনারি পদ্ধতিতে সংখ্যা মাত্র দুটি—০ ও ১। এই বাইনারি সংখ্যাপদ্ধতি দিয়ে সব ধরনের কাজ সারে এখনকার কম্পিউটার। তবে একই সঙ্গে ০ ও ১-এর প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। এই জায়গাতেই এগিয়ে কোয়ান্টাম কম্পিউটার।
গতকাল বুধবার গুগল দাবি করেছে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার যে কাজ করতে পারবে, তা প্রচলিত কম্পিউটারে করা সম্ভব নয়। গবেষকেরা এ উদ্ভাবনকে ১৯০৩ সালে রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের প্রথম উড়োজাহাজ আবিষ্কারের ঘটনার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তবে এ কম্পিউটারের পূর্ণ সুফল পেতে আরও সময় লাগবে।

গুগলের এ কোয়ান্টাম কম্পিউটারের তথ্য গত মাসেই ফাঁস হয়। তাতে দাবি করা হয়, গুগল এরই মধ্যে তৈরি করে ফেলেছ কোয়ান্টাম কম্পিউটার।

বেশ কয়েক বছর ধরেই প্রযুক্তি বিশ্বের একটি বহুল আলোচিত শব্দ হচ্ছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। বলা হয়ে থাকে, এই কম্পিউটারের নাগাল যে বা যারা পাবে, তারাই পুরো বিশ্বের নিয়ন্ত্রক হবে।

কোয়ান্টাম কম্পিউটিং করতে সক্ষম ‘সেকামোর’ নামের বিশেষ চিপটিতে রয়েছে ৫৩ কিউবিটস (কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মৌলিক একক)। প্রথাগত কম্পিউটার বিটসের চেয়ে বহুগুণ বেশি কাজ করতে পারে কিউবিটস।

কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সুবিধা অনেক। খুব বেশিসংখ্যক গাণিতিক সমস্যার সমাধান এটি করে না। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রথাগত কম্পিউটার যে অল্পসংখ্যক জটিল সমস্যার সমাধান করতে গলদঘর্ম হয়ে পড়ে, সেসব সমস্যার সমাধান এক লহমায় করতে পারবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। ফলে ওষুধশিল্প থেকে শুরু করে তেলশিল্প—সবখানেই বিপ্লব আনতে পারে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। বিশেষ করে পদার্থবিদ্যা ও রসায়নের জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান দ্রুত করে ফেলা যাবে। তৈরি হবে নতুন নতুন ওষুধ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক অ্যালগরিদম আরও উন্নত করা যাবে। এমনকি যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রাথমিক রূপ নিয়ে বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন, সেটিও শিগগির উন্নত করে ফেলা যাবে।

ঝুঁকিও আছে ঢের। যদি উন্নত কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি হয়েই যায়, তবে হুট করেই বর্তমানের প্রচলিত ইন্টারনেটের যাবতীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে। ব্রিটিশ সাময়িকী ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ বলছে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার যে প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকবে, সেটি চাইলেই অনেক কিছু করতে পারবে। কোটি কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য নিজেদের থলেতে নেওয়া যাবে। হ্যাক করা যাবে সরকারি ডেটাবেইস। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অযাচিত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যাবে। চাইলে অচল করে দেওয়া যাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে অনেকে একে ‘ভয়ংকর’ কম্পিউটার বলতেও দ্বিধা করেন না।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar