ad720-90

আজ প্রেমে পড়েছেন তো মরেছেন


অনলাইনে পরিচয়, সেখান থেকে গড়ে উঠছে সম্পর্ক, প্রেম। ছবি: প্রথম আলোআগের যুগের প্রচলিত প্রেম এখন আর খুব বেশি নেই। মানুষ এখন ভার্চ্যুয়াল সম্পর্কে ঝুঁকে পড়ছে বেশি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম কিংবা ডেটিং সাইটে খুঁজে ফিরছে মনের মানুষ। আর সুযোগটি নিতেই বসে আছে সাইবার দুর্বৃত্তরা।

প্রতারণার ফাঁদ পাতা ভুবনে আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ সবচেয়ে বিপজ্জনক দিন হতে পারে। অনলাইন প্রেমের ক্ষেত্রে তাই আজ ধোঁকা খাবেন না। কেউ আপনাকে অনলাইনে প্রেমের প্রস্তাব দিলে তার অস্তিত্ব আছে কি না, তা যাচাই করে দেখুন। এ ধরনের রোমান্স স্ক্যাম এখন দ্রুত ছড়াচ্ছে। একে বলা হচ্ছে ‘ক্যাটফিশিং’।

অনলাইনে কারও সঙ্গে প্রতারণা করে তথ্য ও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অন্যান্য প্রক্রিয়ার মতোই ক্যাটফিশিংয়ের ক্ষেত্রে দুর্বৃত্তরা প্রেম, ভালোবাসা ও মায়া দেখানোর মতো আবেগকে কাজে লাগায়। গত বছরে শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাতে এ ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে ২৬ লাখ মার্কিন ডলার হাতিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, মাগুর মাছের ইংরেজি নাম ক্যাটফিশ। কিন্তু অনলাইন জগতে এই শব্দটির রয়েছে ভিন্ন একটি মানে। সামাজিক মাধ্যমে আরেকজনের ছবি ও ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে, সেসব দিয়ে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টিনডারে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণা করাকেই ইংরেজিতে বলে ক্যাটফিশিং।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দুর্বৃত্তরা ভুয়া প্রোফাইল ব্যবহার করে এমন গল্প তৈরি করে, যা আপনি বিশ্বাস করতে বাধ্য হবেন। এ ফাঁদে পা দিলেই সর্বনাশ। আপনার ব্যক্তিগত তথ্য যেমন হাতিয়ে নিতে পারে, তেমনি নানা ছুতোয় অর্থ চেয়ে বসতে পারে।

সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান চেক পয়েন্ট টেকনোলজিসের গবেষকেরা সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন যাতে দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসে ইন্টারনেটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর প্রোগ্রাম ছড়ানোর হার বাড়ে। ২০১৮ সালের ভ্যালেনটাইনস ডে থেকে শুরু করে প্রতিবছর ক্ষতিকর ভ্যালেনটাইনস ডে-বিষয়ক ওয়েবপেজ বাড়ছে। এসব পেজে ক্ষতিকর ম্যালওয়্যার, স্প্যাম ও বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা হচ্ছে। ‘ভ্যালেনটাইন’ শব্দটি ব্যবহার করে ক্ষতিকর ম্যালওয়্যার ছড়ানোর হার ২০০ শতাংশ বেড়েছে। একই সঙ্গে ‘চকলেট’ শব্দটি ব্যবহার করে ম্যালওয়্যার ছড়ানোর হার বেড়েছে। এসব শব্দযুক্ত কোনো ওয়েবসাইটে যাওয়ার আগে তাই সতর্ক থাকতে হবে। মানুষ সাধারণ ইচ্ছা থেকেই ভ্যালেনটাইনস ডেতে কিছু শব্দ সার্চ করে। এগুলোই কাজে লাগানোর চেষ্টা করে সাইবার দুর্বৃত্তরা। এ ক্ষেত্রে তাই অপরিচিত কারও লোভনীয় ই-মেইল খোলা, কোনো ফাইলে ছবি বা ভিডিওর আশায় ক্লিক করা বা কোনো ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করার আগে সতর্ক থাকতে হবে। তথ্যের জন্য প্রকৃত উৎসের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোনো আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হওয়া চলবে না। এর বাইরে ভ্যালেনটাইনস ডে উপলক্ষ কোনো ‘স্পেশাল অফার’ নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, আইওএস প্ল্যাটফর্মে ভ্যালেনটাইনস ডের ৮০ শতাংশ অফার দেওয়া বিশেষ বিজ্ঞাপনগুলোর ৯৯ শতাংশ ভুয়া।

যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন:
১. যাচাই না করে আমেরিকা বা কানাডাপ্রবাসী কোনো ছেলে বা মেয়ের প্রেমে পড়বেন না। সাইবার দুর্বৃত্তরা অনেকেই দাবি করে তারা যুক্তরাষ্ট্রে থাকে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে তাদের ব্যবসা বা পরিবার রয়েছে।
২. দ্রুত তারা প্রেম বা ভালোবাসার সম্পর্কে জড়াতে চাইবে। অনেক সময় ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসবে।
৩. অনেক সময় সম্পর্ক গড়ে ওঠার সপ্তাহখানেক না যেতেই পরিবারের ঠিকানা চেয়ে সেখানে উপহার পাঠাতে চাইবে।
৪. কেউ কেউ ভয়াবহ দুর্ঘটনায় নিজের পরিবার বা আত্মীয় হারানোর আবেগপ্রবণ ঘটনা জানাবে।
৫. সম্পর্কের বিষয়টি গোপন রাখার জন্য তারা সর্বোচ্চ অনুরোধ করবে।

ক্যাটফিশিং থেকে রক্ষার উপায়

১. যাঁকে কোনো দিন দেখেননি বা চেনেন না, তাঁর জন্য টাকা বা উপহার পাঠাবেন না। যাঁরা বিভিন্ন কার্ড ব্যবহার করেন তাঁদের সতর্ক থাকতে হবে সবচেয়ে বেশি।

২. কোনো মেইল, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বা ডেটিং সাইটে পাওয়া লিংক বা ফাইলে ক্লিক করবেন না। এতে আপনার কম্পিউটার আক্রান্ত হতে পারে। এতে ডিভাইসের অনেক ফাইল আটকে রেখে অর্থ চাইতে পারে দুর্বৃত্তরা।

৩. নিজেকে সহজে শনাক্ত করা যায়, এমন কোনো ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না। ব্যাংকিং তথ্য বা ক্রেডিট কার্ডের তথ্য, জন্মতারিখ বা স্পর্শকাতর অন্যান্য তথ্য কাউকে দেওয়ার আগে সতর্ক থাকুন।

৪. অনলাইনে কেউ কোনো বিষয়ে তাড়াহুড়া করতে বললে ধৈর্য ধরুন। দুর্বৃত্তরা আপনার মধ্যে ভয় সৃষ্টি করে দ্রুত কোনো কাজ সম্পাদন করতে চাইবে। পরিবার বা ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে আলাপ করার সময় দিতে চাইবে না তারা।

৫. কারও বিষয়ে সন্দেহ হলে তাঁর ছবিটি সার্চ ইঞ্জিনে নিয়ে অনুসন্ধান করুন। গুগলের সার্চ বাই ইমেজ ব্যবহার করে ভুয়া ছবি কি না, তা যাচাই করতে পারবেন। যদি প্রোফাইল ছবিটি ভুয়া হয়, তবে আপনি বুঝতে পারবেন যে প্রতারকের খপ্পরে পড়ে গেছেন।

৬. পাসওয়ার্ড শেয়ার করবেন না। পাসওয়ার্ড যেন কখনোই সহজ না হয়। স্পেশাল ক্যারেক্টার, ডিজিটস, ক্যারেক্টার মিলিয়ে পাসওয়ার্ড বেশ বড় রাখা জরুরি। কিছুদিন অন্তর অন্তর নিজের পাসওয়ার্ড বদলাতে থাকুন। একই পাসওয়ার্ড বেশি দিন ব্যবহার না করা ভালো।

৭. পাবলিক ওয়াই-ফাই থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করা এড়িয়ে গেলেই ভালো হয়। কারণ, বেশির ভাগ পাবলিক ওয়াইফাইতেই হ্যাকাররা ওত পেতে বসে থাকে।

৮. লোভনীয় ই-মেইল দেখলে বুঝেশুনে পা বাড়ান। বিশেষ করে পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া মেইলগুলো না খুলে ডিলিট করে দেওয়াই ভালো।

৯. অনলাইনে কী কী শেয়ার করছেন, তা খেয়াল রাখুন। আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্টগুলোতে প্রাইভেসি সেটিংস ঠিক করে রাখুন। এসব সাইট থেকে তথ্য জেনে আপনাকে নানাভাবে বোকা বানাতে পারে দুর্বৃত্তরা।

১০. অপরিচিত কোনো উৎস থেকে অ্যাপ ডাউনলোডের পাশাপাশি অপরিচিত কারও সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির আগে সচেতন থাকার বিকল্প নেই। ক্যাটফিশিংয়ের শিকার হলে তৎক্ষণাৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে হবে।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar