ad720-90

যে পরীক্ষায় শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস


ইতিমধ্যেই হয়ত অনেকেই জেনেছেন করোনাভাইরাসে প্রাথমিক উপসর্গগুলো একদম ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো। হালকা জ্বর, সর্দি, কাশি, একটু শ্বাসকষ্ট বা বুকে চাপ লাগা এমন সব উপসর্গ পাওয়া গেলেই শুধুমাত্র বাংলাদেশে কোন ব্যক্তির শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

এক্ষেত্রে কী পরীক্ষা করতে হয় সে সম্পর্কে জাতিয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসক ড. কাজী সাইফুদ্দিন বেননুর বলছেন, “কোভিড-১৯ ভাইরাসটির কারণে উপসর্গ দেখা দিচ্ছে কিনা সেটা বুঝতে গলার ভিতরে, নাকের গোড়ার কাছ থেকে তুলা দিয়ে লালা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। আর যে পরীক্ষাটি করা হয় সেটির নাম হল ‘রিয়াল টাইম পিসিআর’ বা রিয়াল টাইম পলিমারেস চেইন রিঅ্যাকশন।”

তিনি বলছেন, লালা ছাড়া শরীর থেকে আর কোন নমুনায় এই ভাইরাস ধরা পরে না এবং জ্বর বা কাশির জন্য সেসব চিকিৎসা দেয়া হয় সেটাই দেয়া হয়। সমস্যা হল এই রোগের অ্যান্টিবায়োটিক এখনো নেই।

কিন্তু ‘রিয়াল টাইম পিসিআর’ পরীক্ষাটি করার সক্ষমতা এবং এর জন্য দরকারি সরঞ্জাম এখনো পর্যন্ত রয়েছে শুধুমাত্র ঢাকায় অবস্থিত সরকারি সংস্থা রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট বা আইইডিসিআর-এর ল্যাবে।

সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রমণ রোগ ও রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের পরিচালক শাহনীলা ফেরদৌস বলছেন, করোনাভাইরাস শনাক্ত করতে সাধারণ ল্যাবের চেয়ে অধিক সক্ষমতা সম্বলিত ল্যাব দরকার হয় যা হচ্ছে ‘বায়োসেফটি টু প্লাস’ বা ‘বিএসএলটু প্লাস’ মানের।

তিনি বলছেন, ভাইরাসটি যাতে গবেষণাগার থেকে বের হতে পারে সেজন্য এমন বিশেষ গবেষণাগার দরকার হয়। তিনি জানালেন দেশের কয়েকটি হাসপাতালে এমন গবেষণাগার কিছুটা রয়েছে যেমন ঢাকায় জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি ও চট্টগ্রামে ইনফেকশাস ডিজিজ হাসপাতালের ল্যাবগুলোর সক্ষমতা বাড়িয়ে ‘বায়োসেফটি টু প্লাস’ করা সম্ভব।

তবে তিনি বলছেন, “শরীর থেকে এই ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা খুব ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ। যেহেতু আইইডিসিআর এই কাজটি ইতিমধ্যেই করছে, তাদের সক্ষমতা রয়েছে তাই এই কাজটি আপাতত তারাই করছে।”

কিন্তু এখন ‘রিয়াল টাইম পিসিআর’ পরীক্ষার সরঞ্জামের চাহিদা বিশ্বজুড়ে মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে বলে এটি কম পাওয়া যাচ্ছে। যেহেতু ভাইরাসটি নতুন ধরনের তাই এতদিন খুব বেশি দেশে এই সরঞ্জামের উৎপাদন ছিল না।

ড. শাহনীলা ফেরদৌস বলছেন, এই সরঞ্জাম এখন বাজারে কেনার সুযোগ কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে কিছু দেশে নির্দিষ্ট পরিমাণে এটি দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানালেন।

বাংলাদেশ মূলত চীন থেকেও এই সরঞ্জামটি সীমিত পরিমাণে পাচ্ছে। তারা গবেষণাগারের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সরঞ্জামের জন্য সহায়তা করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ছাড়াও অন্যান্য কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে কথা বলছেন। তিনি আরও বলছেন, “দেখুন ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের থেকে কতটা উন্নত। তারাও কিন্তু সামাল দিতে পারছে না।”

ড. বেননুর অবশ্য মনে করছেন, “অনেক বেশি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা হলে ভাইরাসটি সংক্রমণ সংক্রান্ত ডাটাবেজ মেইনটেইন করা কঠিন হয়ে পড়বে। কেন্দ্রীয় একটি ব্যবস্থা থাকাই ভাল”।

শনাক্ত হওয়ার পর যা করতে হয়: ড. বেননুর বলছেন, লালা পরীক্ষায় যদি ভাইরাসটি শনাক্ত হয়, তখন আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের সার্বিক অবস্থা কোন পর্যায়ে আছে, সংক্রমণের মাত্রা, তার রক্তের কণিকা কোন পর্যায়ে রয়েছে সেটি বোঝার জন্য ব্লাড কাউন্ট করা যেতে পারে। বুকে এক্সরে করা যেতে পারে এটা বুঝতে যে এই ভাইরাসের কারণে তার নিউমোনিয়া হয়েছে কিনা। এই ধরনের আনুষঙ্গিক পরীক্ষাগুলো করা হয়, তবে সেটি রোগ শনাক্ত হওয়ার পর। সূত্র: বিবিসি





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar