ad720-90

গবেষণার পাশাপাশি উৎপাদন নিয়েও ভাবাটা জরুরি


 

রোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে বিশ্বজুড়ে গবেষণা চলছে। ছবি: রয়টার্সগুটি বসন্ত, কলেরা, টাইফয়েড বা হালের ইবোলা—প্রত্যেকটি রোগের ভ্যাকসিন তৈরি করে বাজারে আনতে গড়ে প্রায় ১০-১৫ বছর সময় লেগেছে। করোনার ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে এ বছরের জানুয়ারি মাসে। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছরের শেষ বা আগামী বছরের শুরুতে কার্যকর ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। এত কম সময়ে ওষুধ তৈরি করার নজির চিকিৎসাবিজ্ঞানে নেই বললেই চলে।

আমরা জানি, এটাও দীর্ঘ এক অপেক্ষা। বিশ্বাস করুন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল জটিল এক নিয়ন্ত্রিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া। ওষুধের কার্যকারিতা আর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানতে প্রয়োজন নির্ভুল তথ্য উপাত্ত। একমাত্র ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে কার্যকরী ওষুধ বাজারে আনা সম্ভব। অন্য কোনো উপায় নেই।

মানবদেহে পরীক্ষামূলকভাবে বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলছে। প্রিক্লিনিক্যাল অর্থাৎ,মানবদেহে প্রয়োগের আগের ধাপে রয়েছে অন্তত ৭০ ভ্যাকসিন। প্রতিদিন নতুন গবেষণার কথা জানা যাচ্ছে।

ভ্যাকসিন অনেক ভাবে কাজ করে। করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে বেশ কিছু নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। সঙ্গে আছে প্রচলিত কিছু প্রযুক্তিও। ধারণা করা হচ্ছে, এক বা একাধিক পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন কার্যকর হবে। শুধু কার্যকর হলেই হবে না, স্বল্পতম সময়ে সারা বিশ্বের মানুষের জন্য এই ভ্যাকসিন তৈরি করে পৌঁছে দেওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। পরীক্ষামূলক ওষুধগুলো তৈরি করা হয় কয়েক হাজার মানুষের জন্য। কোনো একক প্রতিষ্ঠান পক্ষে কোটি কোটি মানুষের জন্য ওষুধ বানানো সম্ভব না।

করোনার পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশ ছোট বা মাঝারি ধরনের। তাদের অনেকেরই ব্যাপক হারে ভ্যাকসিন তৈরির অভিজ্ঞতা নেই। যদিও বড় ওষুধ কোম্পানিগুলো ঘোষণা করেছে তারা উৎপাদনে সহায়তা দেবে। আগেই বলেছি, পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনগুলোর মধ্যে কয়েকটিতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে; কয়েকটিতে রয়েছে প্রচলিত প্রযুক্তি। দেখা গেল, নতুন প্রযুক্তির ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সবার আগে প্রমাণিত হলো। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভ্যাকসিন বানানোর মতো কারখানার সংখ্যা খুবই কম। ভ্যাকসিন তৈরির কারখানাগুলোতে অন্য রোগের ভ্যাকসিন তৈরি অব্যাহত রাখাটাও জরুরি।

ভ্যাকসিন তৈরিতে সহায়তা প্রদানকারী দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাহায্য করতে বিল গেটস জি-টোয়েন্টি ভুক্ত দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে বলেছেন। পৃথিবীর একাধিক দেশে বিভিন্ন প্রযুক্তির ভ্যাকসিন তৈরি করতে সক্ষম এমন কারখানা তৈরি রাখতে হবে। এখনই শুরু করতে হবে এই কাজ। দরকার আন্তর্জাতিক সমন্বিত উদ্যোগের। সারা বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কমদামে ভ্যাকসিন পৌঁছে দিতে হলে সমন্বিত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই। ২০০৮ সালের আর্থিক মন্দা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে দেখা গিয়েছিল।

করোনা মোকাবিলায় সমন্বিত কোনো বৈশ্বিক উদ্যোগ এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। করোনার প্রকোপ থেকে পৃথিবীর কোনো প্রান্তই মুক্ত নয়। অবরুদ্ধ হয়ে করোনার বিস্তার রোধ করা গেলেও সেটি হবে সাময়িক। দীর্ঘ মেয়াদে করোনা রুখতে পৃথিবীর সব দেশের জন্য দরকার কার্যকরী ভ্যাকসিন। সারা বিশ্বে ভ্যাকসিন তৈরির যে কারখানা আছে সেখানে নতুন প্রযুক্তি সংযোজন করতে হবে। প্রচলিত প্রযুক্তির ভ্যাকসিনের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে হবে ব্যাপকভাবে। বিশ্বের সব দেশে সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য নতুন ভ্যাকসিনের কারখানা তৈরি করার কথা ভাবতে হবে। কোনো দেশ বা অঞ্চলের এককভাবে উৎপাদন এবং সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে না।

ওষুধ তৈরির প্রতিষ্ঠান সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে এখনই সমন্বয় দরকার। যাতে করে ভ্যাকসিনের মান নিয়ন্ত্রণ এবং উৎপাদনে সারা বিশ্ব একযোগে কাজ করতে পারে। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার এ ধরনের কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। এখনই পরিকল্পনা করা না হলে করোনা ভ্যাকসিনের আবিষ্কারের সুফল সবার কাছে সময়মতো পৌঁছানো কঠিন হয়ে যেতে পারে।

ড. সুব্রত বোস: প্রবাসী বাংলাদেশি ও বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানির ক্লিনিক্যাল ট্র্যায়ালস অ্যানালিটিকসের গ্লোবাল প্রধান।
ই মেল: [email protected]

 

 





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar