ad720-90

৬৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসেছিল


মঙ্গোলিয়ার এক বিদ্যালয়ের ছাত্রদের দেওয়া ‘অনন’ নামের পুরুষ গায়ক কোকিলটি সাড়ে ছয় দিনে কেনিয়া থেকে আমাদের রাজশাহী বিভাগে এসে প্রায় এক দিন থেকে চলে যায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যে। মূল উদ্দেশ্য, চীন হয়ে ফেরত যাবে মঙ্গোলিয়ায়।

আর এ সময়ে সে পার করল ৬ হাজার ৩০০ কিলোমিটার। শুনতে আরব্য রজনীর উপন্যাসের গল্পের মতো মনে হতে পারে। কিন্তু আসলেই ৬ মে তেমনটি ঘটে গেল আমাদের অজান্তেই।
সাদামাটা করে বলতে হবে, গেল ২৯ এপ্রিল কেনিয়ার গবেষকেরা তাঁদের স্যাটেলাইট ট্যাগিং ডিভাইস থেকে দেখেন অনন নামের কোকিলটিকে। একে গত বছরের জুনের প্রথম সপ্তাহে মঙ্গোলিয়ায় আংটি পরানো হয়। লাগানো হয় স্যাটেলাইট ট্যাগ। আর এটা করা হয় ওই দেশের খুর্ক বার্ড ব্যান্ডিং সেন্টারে। এ কেন্দ্রের পরিচালিকা মিস টুভসি ৮ জুন অননকে মুক্ত করেন।

কুরুক বিদ্যালয়ের ছাত্ররা এর নাম দেয় ‘অনন’, যা আসলে ওই এলাকার একটি নদীর নাম। ওখানকার ছাত্রদেরকে পাঁচটি কোকিলের মধ্যে দুটি কোকিলের নামকরণ করতে দেওয়া হলে তারা তাদের এলাকার দুটি নদীর নামে কোকিলদের নাম দেয় অনন ও নোমাড। এই ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সুযোগ দেওয়া হয় যাতে তারা জানতে পারে, কোকিলগুলো কোথায় কোথায় যায় এবং কখন তারা ফেরত আসে। স্যাটেলাইটে ধারণ করা ছবির মাধ্যমেও তা দেখতে পারবে।

জুন-জুলাই মাস মঙ্গোলিয়া থাকার পর, অনন ১ আগস্ট প্রথম মঙ্গোলিয়া থেকে চীনের দিকে যাত্রা শুরু করে। সে চীনের পর উত্তর মিয়ানমার, ভুটান, নেপাল হয়ে উত্তর ভারতে ঢোকে। তারপর সে আরব সাগর পাড়ি দিয়ে নামে ওমানে। সেখান থেকে সৌদি আরবের মরুভূমির ওপর দিয়ে লোহিত সাগর পার হয়ে পৌঁছায় ইরিত্রিয়ায়। তারপর ইথিওপিয়া হয়ে ২০১৯ সালের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে কেনিয়ায়। সেখানে ও আশপাশের দেশে সে থাকে প্রায় ২৮ এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত।

২৯ এপ্রিল অনন কেনিয়া থেকে মঙ্গোলিয়া অভিমুখে ফিরতি যাত্রা শুরু করে বেলা ১১টা ০৭ মিনিটের সময়। এ সময় সে পুরোপুরি আলাদা পথ অনুসরণ করে। কেনিয়া থেকে সে প্রথমে যায় সোমালিয়া, তারপর সেখান থেকে পাড়ি জমায় ইয়েমেনের ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপ সোকোতরায়। সেখান থেকে সরাসরি ভারত মহাসাগর পার হয়ে পৌঁছায় ভারতের গুজরাট রাজ্যে। এরপর সে যায় মধ্যপ্রদেশে, পরে বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদা হয়ে বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার পোরশা হয়ে পত্নীতলায় থামে ৬ মে। সম্ভবত ৭ মে কোনো এক সময় সে সেখান থেকে ভারতের মেঘালয়ে রাজ্যে ঢোকে অনন এবং আজ ৯ তারিখ সকাল পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করছে। আশা করা যায়, এক-দুই দিনের মথ্যে সে চীনে ঢুকবে মঙ্গোলিয়া ফিরতের পথে।

নিচের মানচিত্রের সবুজ রেখার পাখিটি অনন ও তার বিশ্বভ্রমণের পথ (মানচিত্র এবং তথ্যসূত্র:- https://birdingbeijing.com/the-mongolia-cuckoo-project/)

গায়ক কোকিল

আকার–আয়তনে আমাদের চিরচেনা চোখগেলো পাখির মতো, কিন্তু রং খুবই আলাদা। এর পিঠের দিক গাঢ় ধূসর, যা মাথা থেকে বুক পর্যন্ত বিস্তৃত। ডানা ও লেজে ঘনত্বের পরিমাণ বেশি যখন সারা পেট সাদা কিন্তু এর ওপরের দিকের আধা অংশে আছে পাথালি কালো রেখা, যা লেজের নিচ পর্যন্ত গেছে। চোখ ঘিরে হলুদ বলয়। ঠোঁট ওপরের দিক কালচে ও নিচের অংশ হলুদাভ, যখন পা কমলা। লম্বা ৩৪ সেন্টিমিটার এবং ওজন প্রায় ১৪০ গ্রাম।

বাকি সব কোকিল প্রজাতির মতো এটিও ‘বাসা পরজীবী’; মানে এরা কখনো নিজে বাসা বানায় না এবং ডিমেও তা দেয় না। অন্য পাখির বাসায় ডিম পাড়ে এবং পালক-মা সে ডিমে তা দেয় এবং বাচ্চাকে বড় করে তোলে।

এ গায়ক কোকিল বাংলাদেশের বিরলতম প্রজাতির একটি। এটি পরিযায়ী। এ প্রজাতির বিশ্ব বিস্তার এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকা মহাদেশে।

রেজা খান: একজন প্রকৃতিপ্রেমিক





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar