ad720-90

কোয়ারেন্টিন অ্যাপের পর নজর এখন কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ে


তাদের দেখাদেখি চট্টগ্রাম
ও চাঁদপুর জেলা পুলিশও ‘নিরাপদ’ নামের এই কোয়ারেন্টিন অ্যাপ নিয়ে মাঠে নামে।

দেশের তরুণ প্রযুক্তিবিদদের
নিয়ে এই অ্যাপ বানিয়েছিল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইনোভেস টেকনোলজিস। তারা এখন বলছেন, সরকার
চাইলে দেশজুড়ে ‘কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং’ অ্যাপও চালু করা সম্ভব।

কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণে মানুষের ঘরে থাকা ও বাইরে চলাচলকে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপ দিয়ে এই মহামারীর
শুরু থেকেই নজরে রাখছে ইউরোপ-আমেরিকা।

দেশের তরুণ প্রযুক্তিবিদদের
নিয়ে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপের কাজ ‘অনেকটা এগিয়ে’ রেখেছে ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি)
ভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইনোভেস টেকনোলজিস।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির
প্রধান নির্বাহী মুনিরুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্লু টুথ ব্যবহার
করে এই কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপের বেটা সংস্করণ ছাড়া হবে খুব তাড়াতাড়ি…।”

এর মধ্যে ‘দুয়েকটা’
বেসরকারি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও এই অ্যাপ নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

নিজেদের বানানো কন্ট্যাক্ট
ট্রেসিং অ্যাপ নিয়ে মুনিরুল বলেন, “বেসরকারি বড় অফিসগুলো… এক ভবনে যদি আড়াই হাজার কর্মী থাকে,
যেহেতু বড় কমিউনিটি, অফিস খুলে গেলে তাদের মধ্যে যোগাযোগ বেশি হবে। সাবধান থাকতে নিজেদের
মধ্যে তারা এই কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করতে পারে।”

লকডাউন শিথিল হয়ে আসার
এই সময় জনসাধারণকে সংক্রমণ নিয়ে সতর্ক করতে ‘সরকার আগ্রহী হলে’ বাংলাদেশে এখনই এই কন্ট্যাক্ট
ট্রেসিং অ্যাপ চালু করা ‘খুবই সম্ভব’ বলেও জানালেন মুনিরুল।

গত মার্চ-এপ্রিলে প্রবাসীদের
নিজ নিজ এলাকায় ফিরে আসা শুরু হলে সবাই নিয়ম মেনে ঘরে থাকছেন কি না সেদিকে নজর রাখতে
অ্যাপনির্ভর তদারকি চালু করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। তাদের কাছে ‘নিরাপদ’
অ্যাপের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল ইনোভেস টেকনোলজিস।

‘নিরাপদ’ নামের এই
হোম কোয়ারেন্টিন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ বানানোর পেছনের প্রেক্ষাপট নিয়ে দেশীয় এই প্রযুক্তি
প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী বলেন, “মার্চের শেষের দিকে বিদেশ থেকে প্রচুর মানুষ আসছিল,
যাদের হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো জরুরি ছিল। এই অ্যাপ্লিকেশনটা ব্যবহার করে ব্যাপারটাকে
সরকার সহজ করতে পারে, এই ধারণা থেকে আমরা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন
কর্মকর্তার কাছে প্রস্তাব করি।”

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ
ঠেকাতে ও মানুষকে সচেতন করতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ বাহিনীকে এই অ্যাপ ‘বিনামূল্যেই’
দিতে চান তারা।

“সিএমপি এই প্রস্তাবকে
স্বাগত জানায়। যেহেতু আমাদের কাজ অনেকটুকুই করা ছিল, আমরা খুব তাড়াতাড়ি এটা তাদের দিতে
পারি।”

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের
১৬টি থানায় এই অ্যাপ চালু করা হয়েছিল বলে এপ্রিলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) আবু বক্কর সিদ্দিক।

গোড়ার দিকে এই অ্যাপের
পেছনে ‘জিও ফেন্সিং’ প্রযুক্তি কাজ করছে বলে জানানো হয়। পরে অ্যাপের কার্যকারিতা বাড়াতে
মোবাইলের ‘সেন্সর’ ফিচার নিয়েও কাজ করা হয়।

এ নিয়ে মুনিরুল আলম
বলেন, “জিও ফেন্সিং হচ্ছে একটা জায়গায় আটকে ফেলা। শুরুতে আমরা যদিও বলেছি এই অ্যাপ
জিও ফেন্সিং দিয়ে কাজ করে, কিন্তু আমরা দেখেছি এটা অনেক সময় পুরোপুরি কার্যকর হয় না।

“কারণ একজন ব্যক্তি
ফোন বাসায় রেখেও বাইরে চলে যেতে পারে। এজন্য মনিটর করতে আমরা স্মার্টফোনের গাইরোমিটার,
এক্সেলেরোমিটার, কম্পাস এমন ধরনের সেন্সর ব্যবহার করেছি।”

কেউ ঘরবন্দি থাকছেন
কি না তা প্রযুক্তি দিয়ে কীভাবে যাচাই করা সম্ভব- এর ব্যাখ্যায় মুনিরুল বলেন, “মোবাইল
ফোনটি যদি অনেকক্ষণ আইডল পড়ে থাকে তাহলে হয় ব্যক্তি ঘুমাচ্ছেন নয়তো বাইরে চলে গেছেন।
আমরা গাইরোমিটার বা এক্সেলেরোমিটার দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছি ব্যক্তি মুভ করছে কি না।

“বাসায় অনেকে বেশি
মুভ করেন না, কিন্তু বাইরে গেলে বা বারান্দায় বেশি মুভ করেন। আমরা কিছু ইন্টেলিজেন্স
ব্যবহার করেছি। যাকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য বলা হয়েছে, তিনি অল্প জায়গায় মধ্যে
চলাচল করছেন কি না তা বোঝার জন্য।”

এখন পর্যন্ত শুধু মাত্র
‘অ্যান্ড্রয়েড’ সংস্করণের মোবাইল ফোনেই এই অ্যাপ কাজ করছে। গুগল প্লেস্টোরে গেলে এই
অ্যাপ ‘নিরাপদ’ নামে মিলবে এবং যে কেউ তা নামিয়ে নিতে পারবেন।

গুগল প্লেস্টোরে অ্যাপটি
তুলতে বহু কাঠখড় পোড়ানোর কথা জানালেন তরুণ প্রযুক্তিবিদ মুনিরুল। এতে করে অ্যাপটি
‘কমপ্লায়েন্সের’ বিভিন্ন মানদণ্ডে উৎরে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে বলে জানান তিনি।

মুনিরুল আলম বলেন,
“বড় চ্যালেঞ্জ ছিল প্লেস্টোরে পারমিশন পাওয়া। কোভিড-১৯ বিষয়ক কোনো অ্যাপ এখন গুগল বা
আইওএসের প্লেস্টোরে নিচ্ছে না; পারমিশন নেই। প্লেস্টোরে আগে দুই-তিন ঘণ্টার মধ্যেও
অ্যাপ পাবলিশ করা যেত। এখন সাতদিনের মত লাগে; আমাদের লেগেছিল বারো-তের দিনের মতো।

“একবার ওরা আমাদের
অ্যাপটা রিজেক্ট করেও দিয়েছিল। আমাদের অনেক কিছু নিশ্চিত করতে হয়েছে। প্রটোকলকে আলাদা
করে ডিজাইন করতে হয়েছে। এরপর ওরা যখন পারমিশন দিয়েছে, এটা একটা বেঞ্চমার্ক।

তিনি বলেন, “যদি সারা
দেশে আমরা অ্যাপটি চালু করতে চাই, তাহলে এটা একটা প্লাস পয়েন্ট। গুগল প্লেস্টোরে এটাকে
হাই প্রাওরিটি অ্যাপ হিসাবে দেওয়া আছে। অনেক ধরনের সিকিউরিটি ও প্রাইভেসি পলিসি ব্যাখ্যা
করে গুগলের এই পারমিশন মিলেছে আমাদের।”

দেশে প্রযুক্তির এমন ব্যবহারে কেমন সাড়া মিলছে?

কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে
মানুষকে নিয়ম মানায় উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে
পুলিশ বাহিনীর কর্মী ও কর্মকর্তাদের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় নিরাপদের একটি ওয়েবভিত্তিক
সংস্করণ নিয়ে কাজ করছে ইনোভেস টেকনোলজিস।     

মুনিরুল আলম বলেন,
“ঢাকা নগর পুলিশের ৩৪ হাজার সদস্যকে বাইরে কাজ করতে হয়। এই যে এত লোক, তারা কোথায় কোয়ারেন্টিনে
থাকবে, কী ট্রিটমেন্ট তাদের দেওয়া হবে, পুলিশের পক্ষ থেকে কে তাদের দায়ভার নিয়েছেন…
আমরা এই পুরো ব্যবস্থাপনাটা সফটওয়ারের মাধ্যমে করার চেষ্টা করছি।”

আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন
না হলেও পুলিশের জন্য বানানো এই সফটওয়ারটি ব্যবহার উপযোগী করে তোলা আছে নিরাপদ ডট ইনোভেসটেক
ডটকম লিংকে।

এ নিয়ে ঢাকা নগর পুলিশের
সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে নিরাপদ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।

তারা জানায়, চট্টগ্রাম
নগর পুলিশের পর চট্টগ্রাম জেলা পুলিশও নিরাপদ অ্যাপ ব্যবহার শুরু করেছে। এরপর চাঁদপুর
জেলা পুলিশও হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষদের উপর নজর রাখতে এই অ্যাপ চালু করেছে।

এসব এলাকায় অ্যাপ কি সফল?

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ
ও চাঁদপুর জেলা পুলিশের আওতায় কোয়ারেন্টিনে থাকা লোকদের এই অ্যাপ ব্যবহারে ‘খুব বেশি
মাত্রায় সাড়া না পাওয়ার’ বিষয়টি তুলে ধরেন মুনিরুল।

হোম কোয়ারেন্টিন অ্যাপ
ব্যবহারে মানুষের সাড়া পাওয়া ‘কষ্টকর’ ছিল বলে জানালেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার
কনস্টেবল মোবারক।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে বলেন, “অনেকে আছেন অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করেন না। অনেকে বলেন অ্যাপ ইন্সটল
করতে পারেন না। এখন আসলে কি পারেন না, না কি চেষ্টা করতে চান না। আবার অনেকে করেছেন…
তো কিছুটা কার্যক্রম হচ্ছে।”

একই ধরনের অভিজ্ঞতা
শোনান চাঁদপুর জেলা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. এনামুল। 

গত ১৯ এপ্রিল চাঁদপুর
জেলা পুলিশ এই অ্যাপ চালু করে। এখন পর্যন্ত এই এলাকার আটটি থানায় ৩৬৬৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে
রাখা হয়, তাদের মধ্যে অ্যাপ ব্যবহার করেন ২২০০ জন।

তিনি বলেন, “সমস্যা
হলো আমাদের মফস্বল এলাকা। এখানে সবাই জিপিএস ব্যবহার করে না। এজন্য লোকেশন পেতে সমস্যা
হয়।

“আমরা হয়ত কারও মোবাইলে
অ্যাপটা ইনস্টল করে দিলাম। কিন্তু যখন আমরা চলে যাই, তারপর তারা জিপিএস বন্ধ করে দেয়।”

এর সমাধানে অ্যাপে
কিছু বিষয় হালনাগাদ করা হয়েছে জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “যারা গ্রামীণ ফোন
সিম ব্যবহার করবে, তাদের যদি মোবাইলে ডেটা নাও থাকে, তবু এখন তাদের জিপিএস শনাক্ত করা
সম্ভব।”

কেউ নিয়ম ভঙ্গ করেছেন
জানার পর কী ব্যবস্থা নেওয়া হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা একটি নির্দিষ্ট এরিয়া
দিয়ে রাখি, ৩০০-৬০০ মিটার; এরিয়ার বাইরে গেলে সাথে সাথে আমাদের পুলিশের মোবাইল টিম
যায় এবং তাকে আবার কোয়ারেন্টিনে থাকতে বাধ্য করা হয়।”

সরকারি  ‘প্রচার-প্রচারণা ও পৃষ্ঠপোষকতায়’ মানুষের মধ্যে
এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহ বাড়বে বলে মনে করছেন মুনিরুল আলম।

দুর্যাগের এই সময় উদ্ভুত
পরিস্থিতিতে অ্যাপের আরো অনেক ধরনের প্রয়োগও করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

ত্রাণ ব্যবস্থাপনা
এবং সুরক্ষা সরঞ্জাম বিতরণও কীভাবে অ্যাপ দিয়ে পরিচালনা করা সম্ভব তা নিয়ে প্রতিষ্ঠানের
তরুণ প্রযুক্তিবিদরা কাজ করছেন জানিয়ে মুনিরুল আলম বলেন, “কোথায় ত্রাণ কম হয়েছে, কোথায়
বেশি হয়েছে, এই তুলনামূলক অবস্থাটা বোঝা যাবে সফটওয়ার দিয়ে।

“আরেকটা হচ্ছে ইনভেনটরি
ম্যানেজমেন্ট। দেশের অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান ও অনেকে পুলিশ বাহিনীকে প্রচুর সুরক্ষা
সরঞ্জাম দিয়ে, পিপিই দিয়ে, মাস্ক দিয়ে, গ্লাভস-গগলস দিয়ে সহায়তা করছেন।

“এগুলো কোথায় কতটুকু
আসছে, কোথায় কতটুকু বিতরণ করতে হবে এসব ব্যবস্থাপনা করতেও হিমশিম খেতে হয়। সফটওয়ার
বা অ্যাপ দিয়ে এর সমাধানেও কাজ করছি আমরা।”

আরও পড়ুন

কোয়ারেন্টিনে নজর রাখতে চট্টগ্রাম পুলিশের অ্যাপ চালু
 

দেশে ‘কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপ’ চালুর তাগিদ প্রযুক্তিবিদদের
 

আইওটি নিয়ে দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গ্রামীণফোনের চুক্তি
 

ট্রাফিক পুলিশরাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি
 

পুলিশে আক্রান্ত বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে
 





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar