ad720-90

এখন তিন ‘স’ সম্পর্কে সচেতন থাকুন


লকডাউন তুলে নেওয়ার পর এখন আমাদের সতর্কতার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। বিশেষভাবে সাধারণ মানুষের সচেতনতার গুরুত্ব খুব বেশি। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে দায়িত্বশীল হতে না পারলে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। ইতিমধ্যে সংক্রমণের হার বাড়ছে। সরকার করোনার বিস্তার রোধে সংক্রমণের তীব্রতা বিবেচনায় প্রয়োজন অনুযায়ী ছোট ছোট এলাকাভিত্তিক লকডাউনের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে হয়তো কিছু সাফল্য পাওয়া যাবে।

কিন্তু আগামী আরও এক-দেড় বছর করোনার ঝুঁকির মধ্যেই থাকতে হবে। অন্তত যত দিন কার্যকর টিকা (ভ্যাকসিন) বাজারে না আসে। তারপরও সেই টিকা সবার হাতের নাগালে আসতে তো বেশ কিছু সময় লাগবেই। এই সময়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনাচারে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লকডাউন তুলে নেওয়ার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাধারণভাবে মানুষের করণীয় সম্পর্কে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার ৬ জুন ২০২০ (৯ জুন অনলাইনে আপডেটেড) রোনি কেরিন র‍্যাবিন (Roni Caryn Rabin) লকডাউন উত্তরণকালে চারটি ‘সি’ স্মরণ রাখতে বলেন (How to Navigate Your Community Reopening? Remember the Four C’s)। এই চারটি ‘সি’ হলো: ক্লোজ কনটাক্ট, কনফাইনড স্পেসেস, ক্রাউডস, রিয়েলিস্টিক চয়েজেস।

যুক্তরাষ্ট্রের বাস্তবতা ও বাংলাদেশের বাস্তবতা নিশ্চয়ই এক নয়। তারপরও আমাদের দেশের বাস্তবতা বিচারে বলতে পারি, অন্তত তিনটি ‘স’–এর কথা সব সময় মনে রেখে চলতে হবে। এগুলো হলো সচেতনতা, সতর্কতা ও সীমাবদ্ধ পরিবেশ।

জনসচেতনতার বিকল্প নেই

প্রথমেই বলতে হয় করোনাভাইরাস সংক্রমণের ধরাবাঁধা কোনো ছক নেই। কেউ বলতে পারি না, এই এক ডজন নিয়ম মেনে চললে করোনার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। তবে আমরা কিছু নিয়মের কথা তো নিশ্চয়ই বলি। যেমন সব সময় মুখে মাস্ক পরার কথা। কিন্তু দেখা যায়, অনেকে মাস্ক পরেন ঠিকই, কিন্তু সেটা নাকের নিচে নামিয়ে রাখেন। তিন পরত কাপড়ের তৈরি মাস্ক নাক-মুখ পুরোপুরি ঢেকে পরলে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা প্রায় ৯০ ভাগ দূর করা যায় বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে আমরা সব সময় সচেতন থাকি না। এটা আমাদের বিপদ ডেকে আনে।

ঠিক তেমনি, বাসার বাইরে কোথাও গেলে সেখানে কলবেলের সুইচ, টেবিল-চেয়ারের উপরিতল, দরজার হাতল, ঘরের বাতির সুইচ, কলের ট্যাপ, লিফটের বোতাম প্রভৃতি স্পর্শ করলে বা বাইরে পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করলে অবশ্যই দুই হাত সাবান দিয়ে ২০-৩০ সেকেন্ড ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এ কথা আজ সবাই দিনে আট-দশবার রেডিও-টিভিতে শুনছি। কিন্তু অনেকেই পাত্তা দিই না। এটা একটা সর্বনাশা ভুল। করোনার এই সময় খুব খারাপ। মুহূর্তের ভুলে বড় ধরনের বিপদে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

এসব খুব সাধারণ ব্যাপার মনে হলেও গুরুত্বের দিক থেকে খাটো করে দেখা যায় না। কারণ, আমার সচেতনতার অভাবে শুধু আমি না, পরিবারের সদস্য, ছেলেমেয়েসহ সবাই বিপদে পড়তে পারি। শুধু তা–ই নয়, পাড়া-প্রতিবেশীরাও বিপদে পড়বেন। অথচ আমরা কেউ চাই না, আমার ভুলে নিজের শুধু না, সেই সঙ্গে অন্য দশজনেরও জীবন বিপন্ন হোক।

সতর্ক থাকতে হবে

জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে না যাওয়াই ভালো। কারণ, সাধারণত সামাজিক দূরত্ব, অর্থাৎ জনে-জনে ছয় ফুট বা অন্তত তিন ফুট দূরত্ব রাখার নির্দেশনা মেনে চলা হয় না। এটা আমাদের অভ্যাসে নেই। কিন্তু এখন এমন দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি যে জনে-জনে দূরত্ব রেখে চলা আমাদের স্বাভাবিক আচরণের অঙ্গে পরিণত করতে না পারলে বাঁচার উপায় নেই।

মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলার অভ্যাস করা দরকার। আমি বাজার করতে গেলাম। সেখানে অনেক মানুষের ভিড়। ফলে সংক্রমণের ভয় বেশি। অথচ এখন শহরের রাস্তায় ভ্যান গাড়িতে মাছ, ডিম, শাকসবজি সবই পাওয়া যায়। ওরা বাসার সামনে দিয়েই যায়। দামও তুলনামূলক কম। আবার আপনি যদি এক লিটারের অন্তত পাঁচ প্যাকেট দুধ কেনার চাহিদা জানান, তাহলে দুধের কোম্পানি বাসায় তা পৌঁছে দেবে, এ জন্য কোনো সার্ভিস চার্জ লাগবে না। আমরা এই সব সুযোগের সদ্ব্যবহার করলে করোনা সংক্রমণের ভয় কমে যায়।

আরেকটি বিষয়। আমরা যদি কিছুক্ষণ পরপর চোখে-মুখে হাত দেওয়ার অভ্যাসটা বদলাতে পারি, তাহলে করোনার আশঙ্কা অনেকটা কমে যায়। অথচ নিজের অজান্তেই আমরা বারবার চোখে-মুখে হাত দিয়ে চুলকাই। অভ্যাসটা পরিবর্তন করা কঠিন হলেও বাদ দিতে হবে।

সীমাবদ্ধ পরিবেশ
ঢাকা বা অন্য বড় শহরগুলোতে অফিস ও শপিং মলগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় এয়ার কন্ডিশনিং ব্যবস্থায় চলে। অনেক অফিস ও বহুতল বাণিজ্যিক ভবনের চারদিক কাচে ঘেরা। এ অবস্থায় বাইরের বাতাস ভবনের ভেতর চলাচল করতে পারে না। ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি সবাই সেখানে দূরত্ব বজায় রেখেও কাজ করে, তাহলেও কিন্তু সীমাবদ্ধ পরিবেশের কারণে ঘরের ভেতরে ভাইরাসবাহিত ড্রপলেটগুলো ঘুরে বেড়াবে এবং সংক্রমণ বাড়বে। আমরা এ বিষয়ে খেয়ালে রাখি না। করোনার আগে যে ভবনব্যবস্থা উপকারী ছিল, এখন তার কিছু পরিবর্তন দরকার কি না, তা সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভেবে দেখতে হবে।

যেমন বড় হলঘরে যদি ২০-৩০ জন অফিসকর্মী দূরত্ব বজায় রেখেও কাজ করেন, সেখানে দমবন্ধ পরিবেশ যেন সৃষ্টি না হয়, সেটা দেখতে হবে। এয়ার কন্ডিশনে যেন বাইরের বাতাস ভেতরে-বাইরে চলাচল করতে পারে সে ব্যবস্থা রাখা দরকার। অথবা সেটা সম্ভব না হলে মাঝেমধ্যে ফ্যান চালিয়ে দু-একটা জানালা খোলার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। এসব বিষয় ভবন নির্মাণ স্থপতি-প্রকৌশলীরা ভেবে দেখতে পারেন।

লকডাউন-উত্তর পরিস্থিতিতে সমাজ সচেতনতার গুরুত্ব এখন সবচেয়ে বেশি। যদি ব্যর্থ হই, আমাদের চরম মূল্য দিতে হবে। আর যদি সচেতনতার পরিচয় দিই, তাহলে কম ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে আমরা করোনাকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে আসতে পারব। নিউজিল্যান্ড, আইসল্যান্ড, ভিয়েতনাম, জাপানসহ বিশ্বের অনেক দেশ ইতিমধ্যেই সাফল্যের উদাহরণ স্থাপন করেছে। আমরাও পিছিয়ে থাকব না।

আব্দুল কাইয়ুম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
[email protected]





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar