ad720-90

করোনা রোধে ফাইজারের টিকাও নিরাপদ


ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছেন গবেষকেরা। রয়টার্সযুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডের পাশাপাশি মার্কিন ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান জৈব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বায়ো এন টেকের পক্ষ থেকেও তাদের টিকা নিরাপদ বলে জানানো হয়েছে। গতকাল সোমবার ফাইজারের পক্ষ থেকে তাঁদের পরীক্ষামূলক কোভিড-১৯ টিকার আরও অধিক তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, তাদের টিকা পরীক্ষায় রোগীর দেহে নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয়েছে এবং প্রতিরোধী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে উচ্চমাত্রার টি-সেল প্রতিক্রিয়াও দেখিয়েছে ফাইজারের টিকা।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফাইজার ও বায়ো এন টেকের টিকা ইতিবাচক ফল দেখানোর ঘোষণা আসার তাদের শেয়ারের দাম বেড়ে গেছে। বায়ো এন টেকের শেয়ারের দাম বেড়েছে ১২ শতাংশ আর ফাইজারের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

এর আগে ১ জুলাই কোভিড-১৯ প্রতিরোধে পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনের ইতিবাচক ফল পাওয়ার কথা জানায় ফাইজার। তারা দাবি করেছে, এটি স্বাস্থ্যবান মানুষের মধ্যে রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এটি সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করেছে। এ অ্যান্টিবডির মধ্যে কিছু নিউট্রিলাইজিং বা ভাইরাস নিষ্ক্রিয় করতে কার্যকর অ্যান্টিবডি রয়েছে। কোভিড-১৯ রোগ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তির শরীরে যে নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, এর চেয়ে ১ দশমিক ৮ থেকে ২ দশমিক ৮ গুণ বেশি। তবে এটি বেশি মাত্রায় দেওয়া হলে জ্বরসহ অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

সফল ভ্যাকসিন তৈরির ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস দেখাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। টাইম অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফাইজারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অ্যালবার্ট বোরলা বলেছেন, তাঁরা আশা করছেন, আগামী অক্টোবর মাস নাগাদ তাঁদের ভ্যাকসিনের জন্য ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাছ থেকে অনুমোদন পেয়ে যাবেন। সেপ্টেম্বরে তাঁরা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার ফল জেনে যাবেন।
বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৫০টির বেশি টিকা তৈরি ও পরীক্ষার কাজ চলছে। বর্তমানে ২৩টি টিকা মানবদেহে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে যার মধ্যে রয়েছে মডার্না ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাও। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, নিরাপদ ও কার্যকর টিকা তৈরিতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে।

ফাইজারের টিকার ফল জার্মানিতে ৬০ জন স্বাস্থ্যবান স্বেচ্ছাসেবীর ওপর পরীক্ষা করে পাওয়া গেছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে তারা এ পরীক্ষা চালিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের মতোই জার্মানিতে স্বেচ্ছাসেবকদের দুই ডোজ টিকা দেওয়া হয়। বর্তমানে ফাইজারের গবেষণার ফল পিয়ার রিভিউ জার্নালে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।

গতকালই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তৈরি ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে প্রাথমিকভাবে ইতিবাচক ফল পাওয়ার কথা বলেছেন গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, মানবদেহে প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনটি নিরাপদ বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে পুরোপুরি নিরাপদ ঘোষণা করার জন্য আরও পরীক্ষার প্রয়োজন। বলা হচ্ছে, এই ভ্যাকসিনটি নতুন করোনার বিরুদ্ধে মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে কার্যকর করে তুলতে সহায়তা করে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে জানানো হয়, সোমবার অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির তৈরি ভ্যাকসিনটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অগ্রিম ফলাফল প্রকাশ করা হয়। বলা হচ্ছে, প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ৭৭ জন মানুষের ওপর ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হয়। ইনজেকশনের মাধ্যমে ভ্যাকসিনটি মানবদেহে প্রয়োগ করা হয়। তাতে দেখা গেছে, ভ্যাকসিনটি নতুন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে উপযুক্ত করে তুলতে সহায়তা করে। একই সঙ্গে তৈরি করে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি ও শ্বেত রক্তকণিকা, যা নতুন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম।

সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে যে ফলাফল পাওয়া গেছে, এর ভিত্তিতে বলা যায় যে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটির সম্ভাবনা অনেক বেশি। তবে সম্পূর্ণ ফল পেতে এবং মানবদেহে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আরও অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন।
এ টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা সফল হলে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপ আশা করছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ তারা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ছেড়ে দিতে পারবে। ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা প্রমাণিত হলেই এটি হবে সবচেয়ে দ্রুত তৈরি করা ভ্যাকসিন, যা পরীক্ষাগার থেকে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পাবে।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar