ad720-90

সবার আগে টিকা পাওয়ার লড়াই


করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। ছবি: রয়টার্সবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সম্ভাব্য কোভিড-১৯ টিকা কিনতে আগ্রহী নয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তারা এ প্রক্রিয়াকে গতিহীন ও ব্যয়বহুল হিসেবে বিবেচনা করছে। এর বদলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৪০ মার্কিন ডলারেরও কমে প্রতি ডোজ টিকা পেতে সরাসরি টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি সূত্রের বরাতে এ তথ্য প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ অবস্থান কোভিড-১৯ টিকার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক পদক্ষেপের সঙ্গে তাদের আংশিক অংশগ্রহণের বিষয়টি ফুটে ওঠে। বৈশ্বিক টিকার সমবণ্টন উদ্যোগের শীর্ষ সমর্থক হলেও তারা ইউরোপের জনগণের জন্য টিকা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেতে চায়।

সবার জন্য টিকা নিশ্চিতকরণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে গৃহীত ‘কোভ্যাক্স’ উদ্যোগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনাগ্রহ বড় ধাক্কা হয়ে আসতে পারে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের একটি সূত্র বলেছে, কোভ্যাক্সের মাধ্যমে টিকা নিলে তার দাম পড়বে বেশি এবং সরবরাহে দেরি হবে।

কোভ্যাক্স উদ্যোগে যৌথ নেতৃত্বে থাকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও দাতব্য সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনের (জিএভিআই) পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

কোভ্যাক্স উদ্যোগের মাধ্যমে টিকা কেনার যে প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছে, এতে সম্পদশালী দেশগুলোকে প্রতি ডোজ টিকার জন্য আগাম ৪০ মার্কিন ডলার দিতে বলা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওই কর্মকর্তা বলেন, ইইউর পক্ষ থেকে আগাম অর্থ দিয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে আরও কম দামে টিকা কেনা সম্ভব।

গত সপ্তাহে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা টিকা উৎপাদনকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগেভাগে সম্ভাব্য টিকা পাওয়ার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

সম্ভাব্য চুক্তি হতে পারে ২৩০ কোটি ইউরোর। ইমার্জেন্সি সাপোর্ট ইনস্ট্রুমেন্ট নামের তহবিল থেকে এ অর্থ পরিশোধ করা হবে।

চলতি বছরের শেষ নাগাদ টিকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কর্মকর্তারা বলছেন, কোভ্যাক্সের উদ্যোগে ওই সময়ের মধ্যে টিকা সরবরাহ করতে পারবে না।

ইউরোপিয়ান কমিশনের পক্ষ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোকে কোভ্যাক্স উদ্যোগে যোগ দেওয়ার বিষয়টি তাদের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিয়েছে। তবে টিকা কেনার বিষয়ে পরামর্শ দেয়নি। বেশ কয়েকটি দেশ কোভ্যাক্সে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেও চুক্তি করেনি।

ইউরোপের কয়েকটি দেশ সবার জন্য ভ্যাকসিন উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছে। তারা বৈশ্বিক তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগকেও প্রচার করেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার তহবিল সংগৃহীত হয়েছে। এর এক-তৃতীয়াংশই এসেছে ইউরোপের দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে। এ অর্থ কোভিড-১৯ টিকা উৎপাদন ও সমবণ্টনের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

করোনার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক ওষুধ ও টিকা উদ্যোগ থেকে যুক্তরাষ্ট্র মুখ ফিরিয়ে নিলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।

টিকা তৈরির প্রচেষ্টা সফল হলে তা প্রথম দিকে ব্যাপক আকারে পাওয়া যাবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর জন্য সব টিকা কিনে নিলে দরিদ্র দেশগুলোর জন্য তা সাময়িকভাবে পাওয়া কঠিন হবে। এতে বৈষম্য সৃষ্টি হবে।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার টিকা আগেভাগে পেতে অনেক দেশ আগাম ফরমাশ দিয়ে রাখছে। ট্রাম্প প্রশাসন গত বুধবার টিকা পেতে অনেক বড় ধরনের বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ কোটি ডোজ টিকা পেতে টিকা উৎপাদনকারী ফাইজার ও বায়ো এন টেকের সঙ্গে ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি করেছে দেশটি।

দ্রুত টিকা তৈরির উদ্যোগ হিসেবে হোয়াইট হাউসের গৃহীত ‘র‌্যাপ স্পিড প্রজেক্ট’ কর্মসূচির অধীনে ফাইজারের টিকা পেতে চুক্তি করা হয়েছে। এতে টিকা তৈরি ও বিপণনের কাজ আরও দ্রুত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ছয়টি টিকার ওপর বিনিয়োগ করেছে, যাতে টিকা উৎপাদন ও উদ্ভাবনের সক্ষমতা বাড়ানো যায়।

চীনের পক্ষ থেকে টিকাকে সামরিক প্রচেষ্টার দিকে নেওয়া হয়েছে। দেশটির একাডেমি অব মিলিটারি মেডিকেল সায়েন্সেস ইতিমধ্যে দেশটির শীর্ষ টিকা প্রার্থী হিসেবে প্রস্তুত করেছে।

বিশ্বজুড়ে কয়েকটি টিকা পরীক্ষার তৃতীয় ধাপে প্রবেশ করেছে। অক্টোবর নাগাদ কয়েকটি টিকার পরীক্ষার ফল আশা করছেন গবেষকেরা। এর মধ্যে রয়েছে অক্সফোর্ডের টিকা, ফাইজারের টিকা, সিনোফার্মের টিকা, সিনোভেকের টিকা প্রভৃতি।

বিশ্বজুড়ে ১৫০টির বেশি টিকা তৈরি ও পরীক্ষার কাজ চলছে। বর্তমানে ২৩টি টিকা মানবদেহে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, নিরাপদ ও কার্যকর টিকা তৈরিতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar