ad720-90

হিরোশিমার অ্যাটম বোমার চেয়ে ৫ গুণ শক্তিশালী ছিল বৈরুতের বিস্ফোরণ


নিউজ টাঙ্গাইল ডেস্ক: এ যেন পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ। ভয়াবহ এ বিস্ফোরণে গুড়িয়ে গেছে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের বন্দর এলাকা। প্রাণ হারিয়েছেন ১০০ জনের বেশি লোক। আহত হয়েছে ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। ২০১৩ সালে একটি জাহাজ থেকে জব্দ করা ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বন্দরের একটি ওয়্যারহাউজে রাখা ছিল। কোনোভাবে সেখানে আগুন লাগার পর ভয়ঙ্কর ওই বিস্ফোরণ ঘটে। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ৬টার পরপর ওই বিস্ফোরণে বৈরুত ছাড়াও আশপাশের অনেক শহর কেঁপে ওঠে। তিন কিলোটন সমমানের এই বিস্ফোরণ হিরোশিমায় ফেলা অ্যাটম বোমার চেয়ে পাঁচগুণ বেশি শক্তিশালী ছিল। বিস্ফোরণস্থলের ৪-৫ কিলোমিটার এলাকার বাড়িঘর প্রায় ধুলিসাৎ হয়ে গেছে। ১০ কিলোমিটার দূরের বাড়িরও জানালার কাচ ভেঙে পড়ে ঝনঝন করে। বিস্ফোরণটি এতই শক্তিশালী ছিল যে ২৪০ কিলোমিটার দূরের দ্বীপরাষ্ট্র সাইপ্রাসেও কম্পন অনুভ‚ত হয়। সেখানকার বাসিন্দারা এ ঘটনাকে ভূমিকম্প বলে মনে করেছিলেন।

ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বৈরুতের বন্দর এলাকা থেকে বড় গম্বুজ আকারে ধোঁয়া উড়ছে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে বিকট বিস্ফোরণে গাড়ি, ভবন উড়ে যেতে দেখা যায়। বিস্ফোরণের ধাক্কায় বাড়িঘরের জানালার কাচ ও বেলকনি ভেঙেও অনেকে আহত হন। বিস্ফোরণ এতটাই ভয়াবহ ছিল যে আশপাশের ৫-৬ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত কোনো বাড়িই আস্ত ছিল না।

এ ঘটনায় বুধবার থেকে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে লেবানন যা চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। এ ছাড়া দু’সপ্তাহ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে। লেবাননের কর্মকর্তারা বলছেন, বিস্ফোরণস্থলের ধ্বংসস্ত‚প সরাতে এখনও কাজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা। ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ধ্বংসস্ত‚পের নিচে মানুষকে আটকা পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বিস্ফোরণের আওয়াজ ছিল তীব্র ও কান ফাটানো। ভিডিও ফুটেজে অনেক গাড়ি এবং ভবন বিধ্বস্ত হতে দেখা গেছে। বন্দর এলাকা থেকে পাওয়া ভিডিওতে প্রথম বিস্ফোরণস্থল থেকে ধোঁয়ার কুন্ডলি উঠতে দেখা যায়। টুইটারে অনেকে মোবাইল ফোনে তোলা প্রচন্ড বিস্ফোরণের ভিডিও শেয়ার করেন। প্রথম বিস্ফোরণের পর আরেকটি আরও বড় বিস্ফোরণের ধোঁয়ায় আশপাশের ভবনগুলো ঢেকে যেতে দেখা যায়।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বিস্ফোরণ এত শক্তিশালী ছিল যে তার মনে হয়েছিল তিনি মারা যাবেন। হাসপাতালে ছিল আহতদের উপচে পড়া ভিড়। অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়, তবে এর সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় কৃষিকাজে সার এবং বিস্ফোরক হিসেবে। আগুনের সংস্পর্শে এলে এটি অত্যন্ত সক্রিয় বিস্ফোরক হিসেবে কাজ করে। আর বিস্ফোরিত হলে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকে নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং অ্যামোনিয়ার মতো বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়ে থাকে।

বিবিসির এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, বিস্ফোরণস্থলের নিকটবর্তী হাসপাতালগুলোতে এত পরিমাণ আহত মানুষ ভিড় করেছে যে সেখানে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। দমকলকর্মীদের বিভিন্ন স্থানে লাগা আগুন নেভাতে হিমশিম খেতে হয়।পরিস্থিতি পর্যালোচনায় লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন বুধবার মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক করেছেন।

লেবানন রেড ক্রসের প্রধান জর্জ কেটানি বলেন, আমরা একটি মারাত্মক বিপর্যয়ের প্রত্যক্ষদর্শী হলাম। বৈরুতের সবখানেই এখন আহত আর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। পরিস্থিতি সামলাতে সরকার জরুরিভিত্তিতে ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার ছাড় করতে যাচ্ছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন লেবাননের প্রেসিডেন্ট। তিনি এক টুইটে বলেছেন, কোনো ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বন্দরে মজুদ করে রাখা হয়েছিল, যা কোনোভাবে ‘গ্রহণযোগ্য নয়’। বিস্ফোরণের কারণ বের করতে তদন্ত শুরু হয়েছে। কর্মকর্তাদের অনুমান মজুদ করে রাখা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটে আগুন লেগেই এ বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে কীভাবে তাতে আগুন লেগেছে তা তদন্তের পরই জানা যাবে।

এদিকে দায়ীদের ‘সর্বোচ্চ সাজার’ মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেছে লেবাননের সুপ্রিম ডিফেন্স কাউন্সিল। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব এ ঘটনাকে বিপর্যয় হিসেবে বর্ণনা করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, এত বিপুল পরিমাণে বিস্ফোরক মজুদ কীভাবে করা হলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনোরকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ছাড়া কেন এত বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক মজুদ করা হয়েছে তাও খতিয়ে দেখা হবে। এই ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তিনি এই দুর্যোগ ও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছেন। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইরান, ইসরাইল ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে লেবাননকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar