ad720-90

লকডাউনেও বাড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা


করোনাকালে বিশ্বব্যাপী লকডাউনের কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ অনেকটা সেরে উঠলেও তা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ওপর তেমন প্রভাব ফেলবে না। ছবি: রয়টার্সনতুন করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারিতে সারা বিশ্ব যেভাবে থমকে দাঁড়িয়েছে, তাতে প্রকৃতি নিজের শুশ্রূষা কিছুটা হলেও করতে পেরেছে। বাধ্য হয়ে আরোপিত লকডাউনের কারণে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ আগের চেয়ে অনেক কমেছে, কমেছে বায়ুদূষণও। কিন্তু এত সবেও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কিন্তু থামানো যাচ্ছে না। সামগ্রিকভাবে লকডাউনের কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশের লাভ হলেও, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ওপর এর প্রভাব নগণ্য।

বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে পৃথিবী নিজেই সেরে উঠছে। জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ভয়াবহ বিষয় থেকে রক্ষা পাওয়ার একটা অতিকল্পনা অনেককেই পেয়ে বসেছে। কিন্তু সত্য হচ্ছে, পৃথিবীর উষ্ণায়নের প্রবণতার ওপর লকডাউনের প্রভাব একেবারেই কম। যতটুকু প্রভাব পড়েছে, তাতে ২০৩০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ার যে প্রাক্কলন করা হয়েছে, তাতে মাত্র শূন্য দশমিক ০১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের হেরফের হতে পারে। এই হেরফেরও একেবারে কম নয়। তবে শুরুতে যেমনটা ভাবা হয়েছিল, তার তুলনায় হতাশাজনকই বলতে হবে।

বিজ্ঞানীরা এই আপাতনিরাশার কথাটি বলার সঙ্গে সঙ্গে এ–ও বলছেন যে এই পরিস্থিতিতে প্রকৃতির ওপর যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তা অব্যাহত রাখা গেলে দীর্ঘ মেয়াদে উল্লেখযোগ্য সুফল পাওয়া যাবে। এই শতকের মাঝামাঝি বৈশ্বিক তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার যে প্রায় অসম্ভব লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে, তা হয়তো অর্জন সম্ভব হবে।

এর আগে এ–সংক্রান্ত গবেষণায় বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মহামারির কারণে সারা বিশ্বই কার্যত লকডাউন হয়ে যাওয়ায় পরিবহনব্যবস্থা প্রায় স্থবির হয়ে আছে। ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ হারে উল্লেখযোগ্য অবনমিত হয়েছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, দিনে কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ আগের চেয়ে ১৭ শতাংশ কমেছে। নতুন গবেষণাটিও এরই ধারাবাহিকতায় করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আগের বিভিন্ন গবেষণা এবং গুগল ও অ্যাপলের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। গবেষণাটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন লিডস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক পিয়ার্স ফরস্টার। এ কাজে তাঁকে সহায়তা করেন তাঁর মেয়ে হ্যারিয়েট ফরস্টার, মহামারির কারণে যাঁর এ–লেভেল পরীক্ষা বাতিল হয়েছিল। আর এ অবসরটি তিনি বাবার সঙ্গে গবেষণার কাজে ব্যয় করেন। এ–সম্পর্কিত গবেষণা নিবন্ধটি নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

পিয়ার্স, তাঁর মেয়ে অন্য গবেষকদের সঙ্গে একযোগে কাজ করেন। তাঁরা মূলত মহামারির এই সময়ে ১০ ধরনের গ্রিনহাউস গ্যাস ও বায়ুদূষক পদার্থের পরিমাণে কতটা পরিবর্তন এসেছে, তা নিরীক্ষণ করেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে গত জুন মাস পর্যন্ত সময়ে বিশ্বের ১২৩টি দেশকে পর্যবেক্ষণে রাখেন তাঁরা। এতে দেখা যায়, কার্বন ডাই–অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইডসহ অন্য নিঃসরণগুলোর পরিমাণে সবচেয়ে বড় অবনমন হয় গত এপ্রিল মাসে। ওই সময় এ ধরনের গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে। কিন্তু দেখা যায় যে এই নিঃসরণ হ্রাস একযোগে ঘটায় তা তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার কমানোয় তেমন প্রভাব ফেলতে পারছে না। কারণ, কোনো একটি গ্যাসের পরিমাণ কমায় যদি উষ্ণায়ন কমে, তবে অন্য একটি উপাদানের পরিমাণ কমলে উষ্ণায়ন বাড়ে। করোনার সময়ে দেখা যাচ্ছে, এ দুই ধরনের উপাদনের নিঃসরণই কমছে। ফলে একটির প্রভাব অন্যটি খারিজ করে দিচ্ছে। আর এ কারণেই সামগ্রিকভাবে বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বড়সড় অবনমন হওয়ার তেমন আশঙ্কা নেই।

উদাহরণ হিসেবে গবেষকেরা বলেন, যানবাহন থেকে সাধারণত নাইট্রোজেন অক্সাইড নির্গত হয়, যা তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। আবার কয়লা পোড়ালে সেখান থেকে সালফার ডাই–অক্সাইড নির্গত হয়। এই সালফার ডাই–অক্সাইড আবার বায়ুমণ্ডলে একটি আবরণ তৈরিতে সহায়তা করে, যা সূর্যালোক প্রতিফলিত করে পৃথিবীকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। ফলে একধরনের ভারসাম্য সৃষ্টি হয়। এখন লকডাউনের মধ্যে এই দুই–ই কমে যাওয়ায় নাইট্রোজেন অক্সাইডের কারণে বাড়তি উষ্ণায়ন না হলেও সালফার ডাই–অক্সাইডের ইতিবাচক প্রভাবটি আর পাওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে পিয়ার্স ফরস্টার বিবিসিকে বলেন, ‘আমাদের গবেষণা বলছে, জলবায়ুর ওপর লকডাউনের প্রকৃত প্রভাব আদতে বেশ কম। তবে এর মাধ্যমে একটি সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এই সময়ের অভিজ্ঞতা ও সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের অর্থনীতিকে সবুজ অর্থনীতির দিকে পরিচালিত করতে পারি। পরিবেশবান্ধব শিল্পে বিনিয়োগ করতে পারি। আর এটি আমাদের ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জলবায়ুর ওপর অনেক বড় প্রভাব রাখবে।’





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar