ad720-90

ন্যানোটেকনোলজি বিজ্ঞানের আরেক বিশ্ময় ! – নার্গিস জিনাত


 ন্যানোটেকনোলজি

বিজ্ঞানের নানাবিধ আবিষ্কারের কারণে আমাদের এই পৃথিবীর যোগাযোগ ব্যবস্থা দিনের পর দিন ছোট ও সংকুচিত হয়ে আসছে। শীঘ্রই  আপনার রক্তস্রোতে আণুবিক্ষনীক রোবট ভ্রমন করার মধ্য দিয়ে আপনার জটিল সব রোগের চিকিৎসা করবে! আজ আমি আপনাদেরকে সেই ন্যানোটেকনোলজি বিষয়ে কিছু বলবো। যারা এই ব্যাপারে অনেক অভিজ্ঞ এবং অনেক জানেন,আমার এই সামান্য তথ্য প্রদান তাদের জন্য নয়।বরং তাদের জন্য যারা আমার মতোন এ ব্যাপারে একমাস আগেও তেমন কিছু জানতেন না।  চলুন শুরু করে দেই।
ন্যানো শব্দটি গ্রিক ন্যানোস থেকে এসেছে যার অর্থ হলো বামন বা যাদুকরী ক্ষমতা সম্পন্ন প্রাণী।এটি মাপের একক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ১ ন্যানোমিটার হলো, ১ মিটারের ১০০ কোটি ভাগের ১ ভাগ। উদাহরণস্বরূপ, মানুষের চুল ৫০০০০ ন্যানোমিটার পুরু,সংবাদপত্রের পুরুত্ব ৭৫০০০ ন্যানোমিটার। যে সকল টেকনোলজি এই ন্যানোমিটার স্কেলের সাথে সম্পর্কিত,তাদেরকে ন্যানোটেকনোলজি বলা হয়,যা কিনা ন্যানো স্কেলে বিজ্ঞান,প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এই তিনের ত্রয়ী সংমিশ্রণ দ্বারা পরিচালিত হয়। এই টেকনোলজি ১ থেকে ১০০ ন্যানোমিটার স্কেলে হয়ে থাকে।এই প্রযুক্তির মাধ্যমে পরমাণুকে ভেংগে বা জোড়া লাগিয়ে অনেক কিছু করা সম্ভব।
বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিদ রিচার্ড ফেইম্যান ১৯৫৯ সালে বলেছিলেন,দেয়ার ইজ প্লেন্টি অফ রুম এট দা বটম” তাঁর এই কথায় উজ্জীবিত হয়েই পরে বিজ্ঞানীরা উঠে পড়ে লাগেন ন্যানো প্রযুক্তি বিষয়ে।
একসময় কম্পিউটার একটি বিল্ডিং এর সমান বড় ছিল,এখন কম্পিউটার আপনার হাতের মুঠোয় আটকে থাকতে পারে।
ন্যানোটেকনোলজির একটি অংশ হলো রোবোটিক টেকনোলজি,এই টেকনোলজিতে রোবটেরাই আরো সূক্ষ রোবট বানিয়ে থাকে। কারণ আণুবীক্ষণিক রোবট তৈরি করা শুধু রোবট দিয়েই সম্ভব।
আগে চোখ অপারেশনে অনেক ব্যথা লাগতো,অনেক খরচ হতো,সংক্রমণের ঝুঁকি ছিল,এখন আই-ড্রপে ন্যানো পারটিক্যাল দিয়ে দেওয়া হয়,এক ফোঁটা চোখে পড়লেই কাজ হয়ে গেলো,কোন অপারেশান লাগলো না।একই উপায়ে সার্জারিও হচ্ছে।৯০ শতাংশ সাশ্রয়ী ও সংক্রমণের ঝুঁকি নেই।
ডি এন এ ন্যানোটেকনোলজি পদ্ধতিতে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আনুবিক্ষনিক রোবটের সাহায্যে ক্রোমোসার্জারি,গ্যাস্ট্রিক বাই-পাস সার্জারি এবং দাঁতের অত্যাধুনিক চিকিৎসা করা হয়।
এখন বলছি সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল প্রযুক্তি নিয়ে যার নাম গ্রাফিন।গ্রাফিন দুনিয়ায় তৈরি অদ্যাবধি সর্বাপেক্ষা পাতলা পদার্থ। এর কোন উচ্চতা নেই।প্রস্থ্য আছে,দৈর্ঘ্য আছে শুধু এক পরমাণু সমান।
গ্রাফিন কিভাবে তৈরি করে?
একটি সাধারণ লেড ২ পেন্সিল নিয়ে আপনার খাতায় দাগ টানুন।বাস্তবিকভাবে,আপনি কাগজে গ্রাফাইট এঁকেছেন।এই দাগে গ্রাফাইটের অনেকগুলো লেয়ার/স্তর আছে যা আপনি খালি চোখে দেখতে পাচ্ছেন না।আপনার পক্ষে যদি প্রতিটা স্তর তুলে নিয়ে কাগজে শুধু একটিমাত্র স্তর রাখা যেতো,তাহলে ওই একটি মাত্র স্তরের দৈর্ঘ্য হতো এক পরমাণু । সাধারণ ও প্রচুর বিদ্যমান এই গ্রাফাইটে থেকে তৈরি হওয়া এক পরমাণুকেই গ্রাফিন বলে। কিন্তু আপনি কি জানেন?যখন এই গ্রাফিন এক পরমাণু দৈর্ঘ্য হয় তখন এটি ইস্পাতের চেয়েও ১৫০ গুণ বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠে,এর মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হওয়া প্রায় শতকরা ৯৮ ভাগ আলো প্রেরণ করতে পারে,এটি স্বচ্ছ, রাবারের মতোন নমনীয়,এটি আকারের শতকরা ১২০ ভাগ প্রসারিত হতে পারে,এটি সিলিকনের চেয়েও ১৫০ গুণ বেশি বিদ্যুত পরিবাহী। আমার জানামতে,এটিই একমাত্র দুর্ভেদ্য পদার্থ, যার মধ্য দিয়ে পানি ও গ্যাস অতিক্রম করে যেতে পারে না। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হলো,এটির ওজন প্রায় নেই বললেই চলে!যুগ যুগ ধরে গবেষণা শেষে ২০০৪ সালে গ্রাফিন পৃথকীকরণ করা হয়। এখন গবেষণাগারে গ্রাফিনের ২৫০০০ প্যাটেন্ট আছে।

ন্যানোটেকনোলজি
গ্রাফিনের ব্যবহারঃ
দীর্ঘমেয়াদি ব্যাটারি তৈরিতে,মোবাইল ও কম্পিউটার আগের চাইতে ১০০ গুণ দ্রুতগতি সম্পন্ন,স্মার্ট ফোন,ট্যাবলেটস,আই প্যাড,টেলিভিশনের অতি পাতলা এল সি ডি /এল ই ডি মনিটর,এগুলো বাঁকানো যায়,আর সহজে ভাংগে না।
পরিবেশ থেকে ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয়, বিষাক্ত বর্জ দূর করতে,পানি বিশুদ্ধ করতে,বায়োফুয়েল তৈরি করতে,উন্নত সৌরকোষ তৈরি করতে গ্রাফিন ব্যবহৃত হয়।
শীতপ্রধান দেশে নিরাপদ উড্ডয়নশীল এরোপ্লেনে বরফ জমে গেলে সেই বরফ গলাতে,কম ওজনের স্লাইড-র‍্যাফট তৈরিতে গ্রাফিন পরমাণু ব্যবহত হয়।
মেরুদন্ডের আঘাতজনিত চিকিৎসায়,রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে,চিকিৎসাক্ষেত্রে ছবি তুলার ক্যামেরায়,যেসব মেশিন রক্তে শর্করার মাত্রা,ডি এন এ সিকুয়েন্সিং,রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিরূপণ করে,,হার্ট রেট,শ্বাস প্রশাসের রেট কেমন তা নিরূপণে, প্যারালাইজড রোগীর বিকল হয়ে যাওয়া অংগকে কৃত্রিম অংগ প্রত্যংগ দিয়ে প্রতিস্থাপন করে সেই কৃত্রিম অংগের সাথে রোগীর মস্তিষ্কের কোষ বা নিউরনের সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে চিকিৎসা, শরীরের কোষ পুনর্গঠনে,উন্নত এন্টিবায়োটিক তৈরিতে, ক্যানসার নিরাময়ের ক্ষেত্রে শুধু ক্ষতিকারক কারসিনোজেনিক কোষ গুলোকে মারা যায়,আশে পাশের কোষ গুলোর কোন ক্ষতিসাধন না করেই। যা সাধারণ ক্যামো থেরাপিতে সম্ভব নয়।
খেলাধুলার ক্ষেত্রে হালকা ওজনের শক্তিশালী টেনিস র‍্যাকেট তৈরিতে।
মহাকাশ যান অতি হালকা এমন কি মহাকাশযানের লিফটের হালকা ক্যাবল তৈরিতে।
ভবিষ্যতে এমন কাপড় আসবে যা আর ধুতেই হবে না,বা ধুলা বালু আটকে ময়লাই হবে না।এগুলো গ্রাফিনের অতি উপকারী ব্যবহার বা প্রয়োগক্ষেত্র।
এতক্ষণ ধরে ন্যানোটেকনোলজির সুবিধাগুলো আলোচনা করলাম ।
এর অসুবিধাও আছে।
যার মধ্যে প্রধান হলো এটির গবেষনা ও প্রয়োগ অনেক ব্যয়বহুল।ন্যানোটেকনোলজি পুরোপুরিভাবে বিকশিত হলে পারমাণবিক শক্তি অনেক সহজলভ্য হয়ে যেতে পারে যা মানবজাতির জন্য হুমকি হতে পারে এটি ব্যবহার করে ভয়াবহ মারনাস্ত্র বানিয়ে কোন আগ্রাসী দেশ যুদ্ধ শুরু করে দিতে পারে।
এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে অদক্ষরা কর্মহীন হয়ে যাবে।
তবুও..
মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের মুল্যবোধ হলো,বিজ্ঞান কখনো মানব কল্যাণে আশাহত হয় না।
তাই আমরা আশাবাদী।
সুত্রঃগুগল সার্চ।
বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল।

নার্গিস জিনাত

বাংলাদেশ সময়: ৬:৪১:০৬   ১ বার পঠিত   #  #  #





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar