ad720-90

আইসল্যান্ড, ভূ-তাপীয় শক্তির এক অপার বিষ্ময় ! – নার্গিস জিনাত


ফাইল ছবি

আজ আমি লিখবো আইসল্যান্ডকে নিয়ে।সব রকম পাঠককে বুঝানোর জন্য আমাকে ভূমিকা করে একটু বেশি তথ্য লিখতে হচ্ছে। অনুরোধ রইলো,আপনারা অনুগ্রহ করে একটু ধৈর্য ধরে তথ্যগুলো পড়বেন।
আমাদের এই পৃথিবী প্রায় ২০০ টি ছোট প্লেট এবং ৭ টি বড় আকারের টেকটোনিক প্লেটের উপরে অবস্থিত।এই টেকটোনিক প্লেটগুলি “ম্যাগমা” নামের একপ্রকার গলিত তরল পদার্থের উপরে অবস্থিত।এই ম্যাগমা যখন অগ্নুৎপাতের ফলে আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে ভূ-পৃষ্ঠের উপরে উদগীরণ হয়,তখন তাকে “লাভা” বলে।
আইসল্যান্ড দেশটি উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝখানে অবস্থিত, চারপাশে সমুদ্র-বেষ্টিত একটি আগ্নেয়-দ্বীপ যা ৪০ হাজার বর্গমাইল আয়তনের এবং তিন লক্ষ ৬৪ হাজার ১৩৪ জন জনসংখ্যার একটি প্রজাতান্ত্রিক দ্বীপ-রাষ্ট্র।এটি পৃথিবীর ১৮ তম এবং ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ।বিগত ৬০০ বছর ধরে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের অবশিষ্টাংশ থেকে এই দ্বীপটির জন্ম হয়।এখনো এই দ্বীপটিতে অনেকগুলি আগ্নেয়গিরি সক্রিয়ভাবে লাভা উদগীরণ করে চলেছে।প্রতি চার বছর পর পর আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্নুৎপাত হয়।দ্বীপটির প্রায় অর্ধেকাংশ আগ্নেয়গিরির লাভাযুক্ত মরুভূমি এবং অন্যান্য অনাবাসযোগ্য ভূমি নিয়ে গঠিত।এটির ১১ শতাংশ হিমবাহ ও ২০ শতাংশ এলাকা পশুচারণ ভুমি।
১১ শতাংশ হিমবাহ থাকলেও এই হিমবাহের হিমশীতল তলদেশের নীচের অংশটি ফুটন্ত পানির মতোই টগবগ টগবগ করে ফুটেই চলেছে!
কিন্তু কেন?
এর উত্তর দিতে গিয়ে আমাকে একটু ভূ-তাপীয় ব্যাখ্যা দিতে হবে।
আইসল্যান্ড, দুইটি টেকটোনিক প্লেটের উপরে অবস্থিত, একটি হলো,নর্থ আমেরিকান টেকটোনিক প্লেট,আরেকটি হলো ইউরেশিয়ান টেকটোনিক
প্লেট।এই দুটি টেকটোনিক প্লেট প্রতি বছর একে অপরের থেকে দুই সেন্টিমিটার করে দূরে সরে যাচ্ছে।এই কারণে আইসল্যান্ডকে সবচেয়ে বেশি ভূ-তাপীয়ভাবে সক্রিয় (জিও-থার্মালি একটিভ) দেশ হিসেবে ধরা হয়।টেকটোনিক প্লেট দুটি দূরে সরে যাবার কারণে যে শূন্যস্থান হয়,তাতে করে,ভূ-গর্ভস্থ তরল বা ম্যাগমা ভূ-ত্বকের অতি কাছে চলে আসে এবং অনেক আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত ও ভূ-তাপীয়(জিও-থার্মাল) ক্ষেত্র তৈরি হয়,যা মাটির তলদেশের পানিকে গরম করে ফেলে এবং জলীয় বাষ্পে পরিনত করে।আপনি যদি পর্যটক হিসেবে আইসল্যান্ডের এসব ভূ-তাপীয় ক্ষেত্র (জিওথার্মাল ফিল্ড) পরিদর্শনে যান, তাহলে দেখতে পাবেন মাটি থেকে সরাসরি জলীয় বাষ্প উদগীরণ হচ্ছে।আইসল্যান্ডে এই জলীয়বাষ্পকে সুকৌশলে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার মাধ্যমে শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।ভূ-তাপীয় গরম পানি পাইপের মাধ্যমে আইসল্যান্ডের রাজধানী “রিকজাভিক” এ এবং অন্যান্য শহরে সরবরাহ করা হয়।৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার এই পানি সরাসরি বসতবাড়ির পানির কলে সরবরাহ করা হয়।এটি বসতবাড়ি উষ্ণ করতে ব্যবহৃত হয়।আইসল্যাডের কোন কোন শহরে জিও-থার্মাল রেস্টুরেন্ট-ও আছে। সেখানে সরাসরি ভূ-তাপীয় পানি পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করে সেই পানির ভাপ দিয়ে নানা রকম খাবার ভাপানো হয়।এটাকে আর্থ কুকিংও বলে।এই পদ্ধতিতে খাবার রান্না করতে ২০ মিনিটের বেশি লাগে না।
আইসল্যান্ডের কনকনে ঠান্ডা সুইমিংপুলগুলো গরম করতেও ভূ-তাপীয় পানি ব্যবহৃত হয়।
৪০ হাজার বর্গমাইলের ছোট্ট একটি দ্বীপরাষ্ট্র, অতি ক্ষমতাশীল নবায়নযোগ্য শক্তি /রিনিউয়েবল রিসোর্স (নবায়নযোগ্য শক্তি হলো এমন এক শক্তি যা পুনরায় বার বার ব্যবহার করা যায়,যে শক্তি কখনো নিঃশেষ হয় না।) নিয়ে কি কি করতে পারে, আইসল্যান্ড তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ। ভূ-পৃষ্ঠের অভ্যন্তরীণ তাপ ব্যবহার করেই এই দেশটি তার বিদ্যুৎ ও তাপশক্তি উৎপাদনে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন এবং উন্নয়ন সাধন করেছে।এ দেশে মাটির নীচের গরম পানি উত্তোলনের জন্য “তেল উত্তোলক যন্ত্রের” মতোন যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এই ভূ-তাপীয় নলকূপ মাটির নীচে ১২০০ মিটার অবধি গভীর হয়।
রিকজাভিক শহরে এই রকম ৮ টি সু-গভীর নলকূপ আছে।
নবায়নযোগ্য শক্তি এতই নিরাপদ যে এটা বায়ুমন্ডলে কার্বন ছড়ায় না।ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বা জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে এটি উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে।

ফাইল ছবি

সিলফ্রাঃ
নর্থ আমেরিকান টেকটোনিক প্লেট এবং ইউরেশিয়ান টেকটোনিক প্লেটের মধ্যিখানে যেখানে দুটি প্লেট,একে অন্যের থেকে দূরে সরে গেছে এবং যাচ্ছে,ফলে সেখানে যে জায়গা ফাঁকা হচ্ছে,সেই ফাঁকা জায়গার কিছু অংশে একটি সরু কিন্তু দীর্ঘ জলাধার তৈরি হয়েছে।এই জলাধারের পানি অতি ঠান্ডা।২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।এই পানিতে থাকলে অল্প সময়েই মানুষ জমে যায়।এখানে ডুবুরিরা ডুবসাঁতার দেয়াকে এডভ্যাঞ্চার মনে করে, এই ডুবসাঁতার দেয়াকে তারা বলে,”ডাইভ বিটুইন টু কন্টিনেন্টস/ টু টেকটোনিক প্লেটস” এখানে অল্প সময়ের মধ্যে হাইপোথার্মিয়া বা ঠান্ডায় জমে যাওয়ার ভয় থাকে, তাই ডুবুরিরা উপযুক্ত পোষাক নিয়ে যায়।
সিলফ্রা-কে আমার মতে,পৃথিবীর আশ্চর্যজনক একটি জলাধার বলা যেতে পারে।
বিপুল বিস্ময়ে ভরা এ পৃথিবীর কতটুকুই বা আমরা জানি?
তবে যেদিন,যেটুকুই জানতে সক্ষম হই,সেই মুহূর্তের জন্য সেটুকুকেই অত্যাশ্চর্য মনে হয়।
সবশেষে একটি আশা বা স্বপ্ন দিয়ে শেষ করছি।
পৃথিবী হোক দূষণমুক্ত।
পৃথিবী হোক মহামারীমুক্ত।
পৃথিবী হোক জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিমুক্ত
নতুন একটি দূষণমুক্ত ও নিরাপদ পৃথিবী গড়তে আমাদের স্বপ্পগুলো সফল হোক।
কারণ,স্বপ্নই যে আগামীতে বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায়।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:২৬:৫৯   ১ বার পঠিত   #  #  #





সর্বপ্রথম প্রকাশিত

Sharing is caring!

Comments

So empty here ... leave a comment!

Leave a Reply

Sidebar